পাকুন্দিয়ায় আমন ক্ষেতে ছত্রাক, দিশেহারা কৃষক
প্রথম নিউজ, কিশোরগঞ্জ: কিশোগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় এ বছর আমন ধানের ক্ষেতে ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এই ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা দেয়। আক্রান্ত ধান গাছগুলো লাল হয়ে মরে যাচ্ছে। ধানের গোছাগুলো সাদা হয়ে পড়েছে। সেই সাথে শীষগুলোও চিটা হয়ে পড়ছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। নিয়মিত কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে জানান ক্ষতিগ্রস্তরা।
সরেজমিনে উপজেলার চরফরাদী, নারান্দী ও হোসেন্দী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ বছর আমন রোপনের সাথে সাথে অতিবৃষ্টিতে বীজতলা এবং ধান গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। টানা বর্ষণের ফলে ধান ক্ষেতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। পানি কমে যাওয়ায় আবার নতুন করে চারা রোপন করে নিয়মিত পরিচর্যা করে আসছিলেন চাষিরা। দেখতে দেখতে ধান গাছগুলে হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠে। স্বপ্ন দেখা শুরু করেন এ বছর আমনের বাম্পার ফলনের। আর কয়েকদিন পরেই আমন ধান কাটা শুরু হবে। ঘরে ঘরে শুরু হবে নবান্ন উৎসব। কিন্তু সম্প্রতি হঠাৎ ধান গাছগুলোতে ছত্রাক ও কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দেয়ায় কৃষকদের স্বপ্ন ভেঙে যায়। এখন শুধু লোকসান গুনার অপেক্ষা। এখানকার কৃষকরা বেশিরভাগ ব্রি-৪৯, ২৮, ২৯ এবং গাজী ধানের চারা রোপন করে থাকেন। বিঘা প্রতি (৩৫ শতাংশ) চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে। এতে বিঘা প্রতি ১৫-২০ মণ ফলন হয়। কিন্তু এ বছর ছত্রাকের আক্রমণ হওয়ায় উৎপাদন কমে গিয়ে তিন থেকে পাঁচ মণে নেমে আসবে বলে ধারণা করছেন কৃষকরা।
উপজেলা হিজলীয়া গ্রামের কৃষক এংরাজ মিয়া জানান, তিনি এ বছর চার বিঘা জমিতে আমন ধান রোপন করেছিলেন। এতে তার খচর হয়েছে ২০ হাজার টাকার মতো। কিন্তু তার সবকয়টি জমিতেই ছত্রাক আর কারেন্ট পোকার আক্রমণ হওয়ায় ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, এ পর্যন্ত সরকারিভাবে প্রণোদনা হিসেবে কোনো প্রকার সার, বীজ, কীটনাশক পাননি।
উপজেলার কুর্শা গ্রামের কৃষক স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: রজব আলী জানান, তিনিসহ পাশ্ববর্তী গ্রামগুলোতে আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকারিভাবে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেলে হয়তোবা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন কৃষকরা।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নূর ই আলম জানান, এ বছর উপজেলায় ১০ হাজার চার শ’ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। অতিবৃষ্টি কারণে এক হাজার পাঁচ শ’ ১৪ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে এ বছর আমন ফলনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে আমরা ইতোমধ্যে একটি সভা করেছি। শিগগিরই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে আমনের পরপরই সরিষা আবাদের মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।