নিলাম না হওয়ায় গুদামে নষ্ট হচ্ছে ৩৯ টন চাল
প্রথম নিউজ, অনলাইন: বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় পৃথক অভিযানে জব্দ করা ৩৯ মেট্রিক খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পুষ্টি মিশ্রিত চাল নিলাম না করায় সেগুলো গুদামে নষ্ট হচ্ছে। আদালতের নির্দেশের অভাবে স্থানীয় খাদ্য বিভাগ প্রায় ১৮ লাখ টাকা মূল্যের এসব চাল নিলামে বিক্রি করতে পারছে না।
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা খাদ্য বিভাগ জানায়, উপজেলার তালোড়া পৌরসভার বাঁশোপাতা এলাকার আমিনুর রহমানের ছেলে ফারুক হোসেন (৪৬) দীর্ঘদিন ধরে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর টিসিবি, বিডব্লিউবি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল ভোক্তাদের কাছে অবৈধভাবে কিনে তালোড়া বাজারে তার ফিহা এন্টারপ্রাইজের গুদামে মজুদ করে আসছিলেন।
গত ২৯ অক্টোবর দুপুরে গোপনে খবর পেয়ে দুপচাঁচিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাত আরা তিথির নেতৃত্বে যৌথবাহিনী ওই গুদামে অভিযান চালান। গুদামে বিভিন্ন প্রকল্পের ২৭ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যায়। এসময় চালসহ গুদাম সিলগালা ও অবৈধভাবে চাল ক্রয় এবং মজুদের অভিযোগে ব্যবসায়ী ফারুক হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়।
জব্দ করা চালের বাজার মূল্য ১২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। সেখান থেকে ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের বস্তাও জব্দ করা হয়। গুদাম সিলগালা করে চালগুলো তালোড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুল জলিলের জিম্মায় রাখা হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক সিহাব উদ্দিন দুপচাঁচিয়া থানায় আসামি ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা করেন। পুলিশ আসামিকে আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেল হাজতে পাঠায়।
এর আগে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে দুপচাঁচিয়া উপজেলার জিয়ানগর বাজারে মেসার্স নূল ট্রেডার্সে অভিযান চালিয়ে ১২ মেট্রিক টন পুষ্টি মিশ্রিত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল জব্দ করে। চালের বাজার মূল্য পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
এ সময় অবৈধভাবে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির চাল ক্রয় ও মজুদের অভিযোগে ব্যবসায়ী দুপচাঁচিয়া বড়িয়া গ্রামের আফাজ মণ্ডলের ছেলে আবদুল কাদেরকে (৫৪) গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক কৃষ্ণপদ বর্মণ বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা করেন। পুলিশ আসামি আব্দুল কাদেরকে আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেল হাজতে পাঠায়। এছাড়া জব্দ করা চালগুলো জিয়ানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের জিম্মায় রাখা হয়।
এদিকে দুপচাঁচিয়া উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক কৃষ্ণপদ বর্মণ ১২ মেট্রিক টন চাল নিলামের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে গত ৮ অক্টোবর বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দুপচাঁচিয়া আমলি আদালতে আবেদন করেছেন। এরপর আজ পর্যন্ত আদালত থেকে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। এছাড়া খাদ্য পরিদর্শক সিহাব উদ্দিন জব্দ করা ২৭ মেট্রিক টন চাল নিলামে বিক্রির জন্য অনুমতি পেতে আদালতে আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে দুপচাঁচিয়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল হক বলেন, জব্দ করার সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির প্রায় ১৮ লাখ টাকা মূল্যের ৩৯ মেট্রিক টন পুষ্টি মিশ্রিত চাল গুদামে পড়ে রয়েছে। তার কার্যালয়ের পরিদর্শক সিহাব উদ্দিন নিলামের অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করলেও কোনো নির্দেশনা পাননি।
তিনি বলেন, বদ্ধ গুদামে থাকার ফলে চালগুলোর গুণগত মান নষ্ট হতে চলেছে। পাশাপাশি আসামিরা জামিনে ছাড়া পেলে চালগুলো নিলাম করা সম্ভব হবেনা। এতে সরকার রাজস্ব হারাবে।