নির্বাচনী সহিংসতায় মোংলায় বৃদ্ধাসহ,কক্সবাজারে ২, নিহত গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ৩০
প্রথম নিউজ ডেস্ক:কক্সবাজারের মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় দুই জন নিহত হয়েছেন। এ সময় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে কমপক্ষে ৩০ জন। মোংলায় নির্বাচনী সহিংসতায় বৃদ্ধা নিহত, আহত ৩।হাতিয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকের হাতের কব্জি কর্তন করা হয়েছে।
কক্সবাজার: কক্সবাজারের মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় দুই জন নিহত হয়েছেন। এ সময় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে কমপক্ষে ৩০ জন।
আজ সোমবার ভোট চলাকালে এসব ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নে ভোটকেন্দ্রে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে আবুল কালাম নামে একজন নিহত হন। এ সময় আরও চারজন গুলিবিদ্ধ হন। আহত হয়েছেন অনেকেই। সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে কুতুবজোমের একটি ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়নের পিলটকাটা কেন্দ্রে সংঘর্ষে আব্দুল হালিম নামে একজন নিহত হয়েছেন।
আবুল কালাম স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোশাররফ হোসেন খোকনের সমর্থক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষের কারণে দুই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকার প্রার্থী শেখ কামাল এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী চশমা প্রতীকের প্রার্থী মোশাররফ হোসেন খোকনের সমর্থকদের মধ্যে ভোট জালিয়তি নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গুলি বিনিময় হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই আবুল কালাম (৪০) নিহত হন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছি। যেখানে উত্তপ্ত হয়েছে সেখানের পরিস্থিতি স্বাভাবিকের পথে। হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। এছাড়া আরও অন্যান্য কেন্দ্রেও সংঘর্ষ হয়েছে বলে জনিা গেছে।
বাগেরহাট: বাগেরহাটের মোংলায় ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ফাতেমা বেগম (৭০) নামের এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ৩ জন।
রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপাই গ্রামে বর্তমান ইউপি সদস্য ও প্রার্থী মতিয়ার রহমান মোড়ল এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শফিকুল ইসলাম এ সংঘর্ষে জড়ান।
আহতরা হলেন- ১নং ওয়ার্ডের প্রার্থী মতিয়ার মোড়ল (৬০), বোরহান শেখ (৩৫) ও ইস্রাফিল (২৬)।
স্থানীয় মহাসিন ও মোয়াজ্জেম জানান, রোববার রাত ৯টার দিকে চাঁদপাই মোড়ে ১নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য ও প্রার্থী মতিয়ার রহমান মোড়ল এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শফিকুল ইসলামের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন তারা। এ সময় বিরোধ ঠেকাতে এসে মতিয়ার রহমানের সম্পর্কে ফুপু ফাতেমা বেগম আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মতিয়ার রহমান মোড়ল বলেন, চাঁদপাই মোড়ে গেলে প্রতিপক্ষ প্রার্থী শফিকুলসহ তার লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে একজন নিহত ও আমিসহ ৩ জন আহত হই।
তবে হামলার ফলে মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করে শফিকুল বলেন, মতিয়ার মেম্বার ভোটের আগে টাকা ছড়াচ্ছিল। তখন আমরা তাকে বাধা দেই। আর যিনি মারা গেছেন তিনি কোনো আঘাতে নয় স্ট্রোক করে মারা গেছেন।
মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সিরাজুল ইসলাম বলেন, মৃত অবস্থায় ওই নারীকে হাসপাতালে আনা হয়। তার মাথার পিছনে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
মোংলা থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, এক বৃদ্ধার মৃত্যুর খবর শুনেছি। তবে মৃত্যুর কারণ এখনও জানা যায়নি। এছাড়া থানায় এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
নোয়াখালী: হাতিয়ায় নির্বাচনী সহিংসতা আহত ১৫ স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকের হাতের কব্জি কর্তনের অভিযোগ উঠেছে। ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশংকাজনক। এর মধ্যে জহির উদ্দিন বাবর (৪৫) নামে একজনের হাতের কব্জি কেটে দিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকজন। আব্দুর রহমান (৪০) নামে আরো একজনকে মাথায় কুপিয়ে যখম করা হয়েছে। রোববার রাতেই তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদরে পাঠানো হয়েছে। রোববার সন্ধ্যার পর নোয়াখালী হাতিয়া উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের ইব্রাহিম মার্কেটে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেনÑ বুড়িরচর ইউনিয়নের মৃত আবুল হাসেমের ছেলে আব্দুর রহমান (৪০), একই এলাকার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে জহির উদ্দিন বাবর (৪৫), হেজু মেস্ত্রীর ছেলে সাহাব উদ্দিন (৩৮), মৃত সাইফুল ইসলামের ছেলে সাজ্জাদুল ইকবাল (৩৬), মো: ইউছুফের ছেলে আমির হামজা (৩৬)।
এদের সবার বাড়ী বুড়িরচর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে। আহতরা সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী ফখরুল ইসলামের সমর্থক বলে জানায় স্থানীয়রা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ফখরুল ইসলাম জানান, রোববার বিকালে সাগরিয়া বাজারে তাদের পূর্ব নির্ধারিত পথসভা ছিল। ৮নং ওয়ার্ডে থেকে লোকজন সাগরিয়া বাজার আসার পথে ইব্রাহীম মার্কেট এলাকায় প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা করে। এতে ঘটনাস্থলে ১৫ জন আহত হয়। পরে উপজেলা হাসপাতালে নেয়ার পর ২ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদরে পাঠানো হয়। এর মধ্যে বাবর নামে একজনের হাতের কব্জি কেটে দেয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে নৌকার প্রার্থী জিয়া আলী মোবারকের মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
পরে উপজেলা সদর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বুড়িরচর ইউনিয়নে নৌকার প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন জিয়া আলী মোবারক কল্লোল। প্রতিপক্ষ হিসাবে মাঠে অবস্থান করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফখরুল ইসলাম। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিম মাস্টার সহ অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে মাঠে নির্বাচন করছেন। নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি মানবজমিনকে জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।