নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো খেলা নয়, কাউকে খেলতে দেয়া হবে না: মির্জা ফখরুল

জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত যুব সমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ানি দেন।

নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো খেলা নয়, কাউকে খেলতে দেয়া হবে না: মির্জা ফখরুল

প্রথম নিউজ, ঢাকা: সরকারের পদত্যাগের আগে নির্বাচনের প্রশ্নই উঠে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ সরকার ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া কোনো খেলা হবে না। কাউকে খেলতে দেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত যুব সমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ানি দেন। আরও বলেন, সরকার গুলি করে বিএনপির আন্দোলন দমন করতে চায়। তবে সেটা আর সম্ভব নয় বলে। বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, বিএনপির সভা বন্ধ করতে সরকার পরিবহন ধর্মঘট করেছে। সরকারের নির্দেশে বাস-মালিকদের এসব কর্মকাণ্ড না করার আহ্বান জানান।

নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে খেলা হবে না বলে ক্ষমতাসীনদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কেনো? এতোই যদি খেলতে চান, বলে কি খেলা হবে। কিসের খেলা হবে? কিসের খেলা? ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্যে নিয়ে খেলেছে। খেলা হয় না। খেলা তখনই হয় যখন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে। খেলা তখন হবে যখন সরকার থেকে পদত্যাগ করবে এবং যখন একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেবে তখনই সেই নির্বাচনে খেলা হবে। এছাড়া কোন খেলা তোমাকে খেলতে দেয়া হবে না। খেলতে দেয়া হবে না। এদেশের মানুষ আর কখনোই সেটা দেবে না। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের সামনে অনেক কঠিন সময়। আমাদের সামনে এখন অনেক পরীক্ষা। আমাদের সামনে এখন অনেক যুদ্ধ। 

বর্তমান অবৈধ সরকার গুলি করে আমাদেরকে দমন করতে চায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার আজকে আমাদের উপর অত্যাচার ও নির্যাতন করে দমন করতে চায়। বন্ধুরা, তারা কি দমন করতে পারবে? বন্ধুরা নির্বাচন করতে চায়। কিসের নির্বাচন? এদেশে কোন গণতন্ত্র নেই। এদেশে নির্বাচন নেই। নির্বাচন ব্যবস্থাটাই আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন করেছে, যাকে ডিসি ও এসপিরাই মানে না। সুতরাং তারা নির্বাচন করতে পারে না। তাই নির্বাচনের প্রশ্নই উঠতে পারে না। 

তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, সবার আগে হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করে দিতে হবে এবং একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দিতে হবে। খুব পরিষ্কার কথা, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা না দিলে এখানে কোন নির্বাচন হবে না।

পায়রা বন্দর উদ্বোধনের ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, এই পায়রা বন্দরের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন- আমাদের বিরোধীরা বলে যে রিজার্ভের টাকা কোথায় গেলো। অবশ্যই আমরা জিজ্ঞাস করতে চাই যে, রিজার্ভের টাকা কোথায় গেলো? তিনি উত্তর দিয়েছেন, রিজার্ভের টাকা চিবিয়ে খাওয়া হয়নি।

'চিবিয়ে তো খান নাই। গিলে ফেলেছেন। রিজার্ভের টাকা আপনারা গিলে ফেলেছেন। বলেছেন, পায়রা বন্দরে খরচ করা হয়েছে। পায়রা বন্দরে খরচ করা  জন্য রিজার্ভের টাকা না। রিজার্ভের টাকা হলো, যেসমস্তটা টাকা বাইরে থেকে আমদানি করবেন, সেসমস্ত আপনি ডলার দিয়ে পরিশোধ করবেন। রিজার্ভের টাকা হচ্ছে, দেশে যখন অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা দেবে, তখন আপনি সেই সঙ্কট দেখবেন।' 

পায়রা বন্দর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পায়রা বন্দর কার্যকর হতে পারে না। কারণ পানির যে গভীরতা দরকার, সেই গভীরতা সেখানে নাই। 

তিনটা সমাবেশ করে বিএনপি মনে করছে যে ক্ষমতায় চলে যাবে- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা আলমগীর বলেন, তিনটা সমাবেশ করে আমরা ক্ষমতায় যাবো বলে মনে করছি না। আমরা মরে করছি, তিনটা সসাবেশ করেই আপনাদের এতো কম্পন শুরু হয়েছে, সেই সমাবেশগুলো বন্ধ করবার জন্য আপনারা বাস এবং পরিবহন ধর্মঘট করাচ্ছেন। লজ্জা করে না। কি নির্লজ্জ আপনারা। কি কাপুরুষ আপনারা যে, বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বন্ধ করার জন্য আপনারা আপনাদের পেটোয়া ইউনিয়নকে দিয়ে ধর্মঘট ডাকছেন। 

তিনি বলেন, বরিশালে ধর্মঘট দিয়েছে, ৫ দিন আগে। যাতে সমাবেশ পণ্ড করা যার। রংপুরে ধর্মঘট দিয়েছে, যাতে রংপুরের সমাবেশ বন্ধ করা যায়। আমি বাস মালিক ও শ্রমিকদেরকে বলতে চাই, আপনারা সব সময় জনগণের সেবা করেন। আপনারা জনগণের সঙ্গে বরাবর ছিলেন। কিন্তু কার ইঙ্গিতে এবং কাদেরকে সহায়তা করতে এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট শক্তি, যারা আপনার সমস্ত কিছু কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে- তাদের সাহায্য করার জন্য আপনারা এই কাজটা করবেন না। জনগণের সঙ্গে থাকুন। জনগণের ভোগান্তি করবেন না। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার গণধিকৃত ও গণ-বিরোধী সরকার। তারা আজকে অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরী করেছে। আর এর মূলে রয়েছে এই সরকারের দুর্নীতি। গত ১৪ বছরে এমন চুরি করেছে, যার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।  মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এই সরকার, যারা নির্বাচিত নয়। যারা জোর করে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে- তারা বিগত ১৪ বছরে এই বাংলাদেশের সমস্ত সম্ভাবনাগুলোকে ধ্বংস করেছে। তারা আমাদের দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠাগুলো ধ্বংস করেছে। তারা আমাদের অর্থনীতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং রাজনীতি ধ্বংস করেছে। 

বিএনপির বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যুবদল যদি কৌশল ঠিক করতে পারে এবং রাজপথ দখল করতে পারে তাহলে শেখ হাসিনা পতন অনিবার্য। সেটা হবে, জেলা পর্যায়েও যদি যুবদল সঠিক নেতৃত্ব দেয়। কিন্তু যদি ব্যাপারী ও আরদদাররা নেতৃত্বদের তাহলে হবে না। বাঁশের লাঠি সবার হাতে থাকবে। আত্মরক্ষার জন্য। আর আঘাত করলে পাল্টা আঘাত করতে হবে।

সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুপুর ১টি থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে যুবদলের হাজার হাজার নেতা কর্মীরা ব্যানার, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত ফেস্টুন, জাতীয় ও দলীয় পতাকাসহ জড়ো হতে শুরু করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে, লাল, সবুজ, হলুদ এবং সাদাসহ বিভিন্ন রঙের ক্যাপ পরেও সমাবেশ অংশ নেন নেতাকর্মীরা।

এদিকে সমাবেশকে ঘিরে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং এর আশ-পাশ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেন বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্নার সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।