ধরপাকড়ে নেমে সমালোচনায় পুলিশ
ভোটের মাঠে হঠাৎ ধরপাকড়ে নেমে আলোচনা-সমালোচনায় পুলিশ।
প্রথম নিউজ, নারায়ণগঞ্জ : ভোটের মাঠে হঠাৎ ধরপাকড়ে নেমে আলোচনা-সমালোচনার খাতা খুলেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে নগরজুড়ে। কয়েকদিন ধরে পুলিশ অভিযানে থাকায় রাত ১০টার পরই নগর হয়ে যাচ্ছে সুনসান। যে নগরে ফুটপাতজুড়ে মধ্যরাত পর্যন্ত থাকত হকারদের হাঁকডাক, সেখানে এখন রাত ১০টা বাজতেই দোকান গুটান তারা। রাতে আর জমছে না চায়ের কাপের আড্ডা। ফলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের উৎসবের রং খানিকটা বিবর্ণ। কয়েকজন হকারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুলিশ এমনিতেই তাদের ফুটপাতে বসতে দেয় না। প্রতিনিয়ত পুলিশের সঙ্গে খেলতে হয় লুকোচুরি। এখন নির্বাচনী ধরপাকড় শুরু হয়েছে। তাই কাস্টমারও নাই। এ কারণে আগেভাগেই দোকান গুটাই।
২০১১ ও ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত নাসিকের প্রথম ও দ্বিতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয় পান সেলিনা হায়াৎ আইভী। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নাগরিক পরিষদের ব্যানারে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। ওই সময় দলের সমর্থিত প্রার্থী থাকলেও প্রতীকে নির্বাচন হতো না। ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়েই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হন আইভী। এটি আইভীর তৃতীয়
নির্বাচন। এবারও আইভী নৌকার প্রার্থী। এটি তার চতুর্থ নির্বাচন।
তবে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। অতীতের কোনো নির্বাচনে আইভীর পক্ষে প্রশাসনকে যুক্ত হতে দেখা যায়নি। এবার প্রশাসন আইভীর জন্য কাজ করছে- এ অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের। পুলিশ ইতোমধ্যেই তৈমূরের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারও করেছে। অভিযান চালানো হচ্ছে অনেকের বাড়িতে। পুলিশের অভিযান থেকে বাদ যায়নি আইভীবিরোধী ছাত্রলীগ নেতাদের বাড়িও।
নগরজুড়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আইভীর জন্য কেন পুলিশের এ ধরনের অভিযান। পুলিশ নির্বাচনের এই সময়ে যে কারণেই অভিযান চালাক না কেন, এটাকে দেখা হচ্ছে আইভীর পক্ষাবলম্বন হিসেবে। কারণ পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযানে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক থেকে শুরু করে বাদ যায়নি তৈমূরের পক্ষে কাজ করা সাধারণ মুদি দোকানিও।
কেন এমনটা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল বলেন, '২০১১ ও ২০১৬ সালে বিএনপির প্রার্থী ছিল। ওইসব নির্বাচনে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। কিন্তু নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছিল। ২০১১ সালে শেষ মুহূর্তে বিএনপির প্রার্থী দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরে গিয়েছিলেন। ফলে আইভীর জয় সহজ হয়েছিল। আইভীর বিশাল কর্মী বাহিনী না থাকায় এবার পুলিশ বাহিনী তার পক্ষে মাঠে নেমেছে। তৈমূর আলমের একজন কর্মীকে গ্রেপ্তার মানে ভোটের মাঠে তৈমূরের এগিয়ে যাওয়া। আমরা এতে উদ্বিগ্ন নই।'
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদ সদস্য ও আইভী নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আনিসুর রহমান দিপু বলেন, 'গত দুইবারের নির্বাচনে পুলিশের এ ধরনের অভিযান দেখা যায়নি। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কিছুদিন আগে নারায়ণগঞ্জে শেষ হওয়া ইউপি নির্বাচনের আগে ও পরে সহিংসতা হয়েছিল। সিটি করপোরেশনের পাশে অনেক ইউনিয়ন রয়েছে। ইউনিয়নের অনেকেই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে- এমন খবর থেকেই পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী তার প্রচারণাকালে এ প্রসঙ্গে বলেন, 'কাদের ধরা হচ্ছে আমি জানি না। আমি কাউকে গ্রেপ্তার করতে বলিনি। এটা পুলিশের ব্যাপার।'
স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম বলেন, 'আমার পক্ষে গণজোয়ার দেখেই সরকারি দলের প্রার্থীর হয়ে পুলিশ আমার নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে।'
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম বলেন, 'পুলিশ অযথা কাউকে গ্রেপ্তার করছে না। যাদের ধরা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো না কোনো অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযান নির্বাচনের আগ পর্যন্ত চলবে।'
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: