দেশের বিভিন্ন জায়গায় বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু

দেশের বিভিন্ন জায়গায় বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: সারাদেশে বজ্রপাতে ১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এরমধ্যে কুমিল্লার বরুড়ায় ২ জন, মুরাদনগরে ২ জন, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে ২ জন ও  মিঠামইনে একজন, সুনামগঞ্জের শাল্লায় একজন, নেত্রকোনার কলমাকান্দায় একজন ও মদনে একজন রয়েছেন। আজ সোমবার সকালে ও দুপুরে আকস্মিক বজ্রপাতে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-

কুমিল্লা: কুমিল্লার দুই উপজেলায় বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও একজন। তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে জেলার বরুড়া ও মুরাদনগর উপজেলায় পৃথক দুইটি ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার কোরবানপুর পূর্ব পাড়া কবরস্থানের পাশের মাঠে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- উপজেলার দেওড়া গ্রামের জসিম উদ্দিন ভূইয়ার ছেলে জুয়েল ভূইয়া (৩৫) ও কোরবানপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়া (কালীবাড়ি) এলাকার মৃত বীরচরণ দেবনাথের ছেলে নিখিল দেবনাথ (৬০)।
এদিকে দুপুরের দিকে বরুড়া উপজেলার খোশবাস ইউনিয়নের পয়ালগুচ্ছ গ্রামে বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- ওই এলাকার মৃত খোকন মিয়ার ছেলে ফাহাদ হোসেন (১৩) এবং একই এলাকার আব্দুল বারেক মিয়ার নাতি সায়মন হোসেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুজনই উপজেলার বড় হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল। হালকা মেঘলা আবহাওয়ায় তারা মাঠে ঘুড়ি উড়াচ্ছিল। আকস্মিক বজ্রপাতে মারাত্মক আহত হলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলেও চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। হঠাৎ এই মর্মান্তিক ঘটনায় দুই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে বজ্রপাতের পৃথক ঘটনায় এক নারীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অষ্টগ্রামে ইন্দ্রজিত দাস (৩০) ও স্বাধীন মিয়া (১৪) নামে দুইজন এবং মিঠামইনে ফুলেছা বেগম (৬০) নামে একজন নারী নিহত হয়েছেন। অষ্টগ্রামে হাওরে বোরো ধান কাটার সময় বজ্রপাতে ইন্দ্রজিত দাস ও স্বাধীন মিয়া নিহত হয়। অন্যদিকে মিঠামইনে বাড়ির পাশে ধানের খলায় কাজ করার সময় ফুলেছা বেগম নিহত হন। সোমবার সকালে বজ্রপাতে এসব প্রাণহানির ঘটনাটি ঘটে। নিহতদের মধ্যে ইন্দ্রজিত দাস অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের হালালপুর গ্রামের মৃত যতিন্দ্র দাসের ছেলে, স্বাধীন মিয়া একই উপজেলার খয়েরপুর আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের খয়েরপুর গ্রামের ইদ্রিছ মিয়ার ছেলে এবং ফুলেছা বেগম মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোড় ইউনিয়নের রাণীগঞ্জ গ্রামের মৃত আশ্রাব আলীর স্ত্রী।

অষ্টগ্রাম থানার ওসি রুহুল আমিন জানান, সোমবার সকালে হালালপুর গ্রামের পাশে হাওরে ইন্দ্রজিত দাস ধান কাটছিলেন। এসময় বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এছাড়া একই সময়ে খয়েরপুরের হাওরে ধান কাটার সময়ে বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই স্বাধীন মিয়া মারা যায়।

এদিকে মিঠামইন থানার এসআই অর্পণ বিশ্বাস জানান, সোমবার সকালে রানীগঞ্জ গ্রামে বাড়ির পাশে ধানের খলায় কাজ করার সময়ে বজ্রপাতের ঘটনায় ফুলেছা বেগম মারা যান। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

শাল্লা (সুনামগঞ্জ): সুনামগঞ্জের শাল্লায় হাওরে বজ্রপাতে রিমন তালুকদার নামের এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বুড়িজাঙ্গাল হাওরে এ ঘটনা ঘটে। রিমন তালুকদার (২০) শাল্লা উপজেলার ১নং আটগাও ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের জাহেদ মিয়ার ছেলে, সে শাল্লা কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো সোমবার সকালে শাল্লার বুড়িজাঙ্গাল হাওরে গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যায় রিমন। এসময় হঠাৎ বৃষ্টিপাত শুরু হলে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার আগেই বজ্রপাতে রিমন তালুকদার ও তার সঙ্গে নিয়ে যাওয়া একটি গরুর মৃত্যু হয়।
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, বজ্রপাতে এক কলেজশিক্ষার্থী ও একটি গরুর মৃত্যু হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে শিক্ষার্থীর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

কলমাকান্দা (নেত্রকোনা): কলমাকান্দা উপজেলায় বজ্রপাতে দিদারুল হক নামে এক মাদ্রাসার শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার রাত সাড়ে ১০টায় উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের হাফসা রা: আনহু মহিলা মাদ্রাসা ও আন নূর ইসলামী একাডেমির সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ তথ্য নিশ্চিত করেন কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেন।

নিহত দিদারুল ইসলাম উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ধুনন্দ গ্রামে মধ্যপাড়ার নুরুল ইসলামের ছেলে। তিনি খারনৈ এলাকার হাফসা রা: আনহু মহিলা মাদ্রাসা ও আন নূর ইসলামী একাডেমির শিক্ষক ছিলেন। খারনৈ ইউপি চেয়ারম্যান মো. ওবায়দুল হক জানান, রোববার রাত সাড়ে দশটার দিকে বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়। এসময় শিক্ষক দিদারুল হক বাইরে থেকে মাদ্রাসায় যাচ্ছিলেন। তখন বিকট শব্দ একটি বজ্রপাতের শব্দ শুনতে পায় স্থানীয়রা। পরে মাদ্রাসার মাঠে গিয়ে দিদারুল হকের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন তারা। পরে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।এ বিষয়ে কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেন বলেন ,বজ্রপাতে দিদারুল হক নামে একজন মাদ্রাসার শিক্ষকের মৃত্যু হয়। স্থানীয়ভাবে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিহতের মরদেহ রাতেই তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি: নেত্রকোনার মদনে বজ্রপাতেই আরাফাত (১০) নামের এক মাদ্রাসার ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। আরাফাত উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের তিয়শ্রী গ্রামের মো. আব্দুস ছালাম মিয়ার একমাত্র ছেলে।  জানা গেছে, আরাফাত বাড়ির পাশের একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত। সোমবার  ফজরের নামাজের পর নিজ বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে বজ্রপাতের ঘটনার স্বীকার হয়। এতে  ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে ইউএনও অলিদুজ্জামান জানান, আরাফাত নামে এক মাদ্রাসার ছাত্র বজ্রপাতে মারা গেছে খবর পেয়েছি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তার পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।