‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’ গাওয়া শিল্পীকে বিটিভির অডিশন থেকে বাদ দেয়া হয়
নাজনীন আকতার মৌসুমী
প্রথম নিউজ, বিনোদন ডেস্ক: শৈশব থেকেই সঙ্গীতের চচ্চর্া ছিল শিল্পী নাজনীন আকতার মৌসুমীর। তার সঙ্গীত চচ্চর্ার শুরুটা ছিলো নওগাঁ জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে। মৌসুমী নওগাঁ সরকারি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। ২০১২ সালে জনসম্মুখে গান গাওয়া শুরু। নওগাঁ শিল্পকলায় চর্চার সময়ই আনুষ্ঠানিকভাবে স্টেজ শো’তে অফার পান। তারপরই শুরু হয় সঙ্গীত ”চ্চর্ার নিমগ্নতা। নাজনীন আকতার মৌসুমী পরিবারও রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা। তার দাদা ও বাবার পরিবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের আদর্শে অনুপ্রাণিত। শিল্পী মৌসুমীও পরিবারের অনুপ্রেরণায় জাতীয়তাবাদী দলের বড় সমাবেশ ও অনুষ্ঠানে নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশন করে মানুষের মন জয় করতে পেরেছেন।
মৌসুমী বলেন, আওয়ামী স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের আগেই আমার ঢাকায় আসা। বড় ভাই জাহিদুল আলম সঙ্গীত পরিচালক ও শিল্পী ইথুন বাবু’র সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। বলতে পারেন তারপর পথচলা শুরু। সে সময় ইথুন বাবুর লেখা দুটি গান রিলিজ হওয়ার আগেই পরিবেশন করে শ্রম্নতাদের ব্যাপক সাড়া পাই। তারপর ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে গান করি । এতে প্রধান বিষয় ছিল দেশাত্ববোধক ও দলীয় সঙ্গীত। ইথুন বাবুর লেখা ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’ গানটি প্রথম পরিবেশন করি ওপেন স্টেজে লাইভ শো। পরবর্তী সময়ে একক পারফর্মেন্স করে গানটি রেকর্ড হয়। বিশেষ করে ইথুন বাবুর লেখা এই দুটো গান মানুষের মধ্যে একটা জাগরণ তৈরি করে। কারণ গানের লিরিকসটা ছিল মূলত দেশপ্রেমের। এতে সবার মধ্যে একটা নতুন জাগরণ তৈরি হয়।
পরবর্তী পর্যায়ে সঙ্গীত পরিচালক ও শিল্পী ইথুন বাবুও থেমে থাকেননি। তিনি একের পর এক বিপ্লবী গান লিখে যান। যেমন, দেশটা তোমার বাপের নাকি, ফিরায়ে দে মোর ভোটের অধিকার, তোমার চেয়ার ভেঙ্গে যাচ্ছে, তোমার তলে তলে ব্যথা যে, মামা বাড়ির আবদার, দেশে কোনো বিচার নাই, টেইক ব্যাক বাংলাদেশ, শহীদ জিয়া না থাকলে স্বাধীনতা ঘোষণা হতো না, চল চল ঢাকা চল, জন্মদিন জন্মদিন বিএনপি’র শুভ জন্মদিন, মারলে নিজের পায়ে কুড়াল, আমি শহীদ জিয়ার কথা বলছি, ক্ষমতা এন্টারপ্রাইজ ও যন্তর মন্তর। শিল্পী মৌসুমী বলেন, এসব গান জনগণ গ্রহণ করেছে এবং এক পর্যায়ে জনগণের মুখে মুখে গানগুলো শোনা যেত।
এরমধ্যে ‘ক্ষমতা এন্টারপ্রাইজ’ গানটি গত ৩ আগস্ট রিলিজ হয়। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের দু’দিন আগে রিলিজ হয়। আন্দোলন নিয়ে ইথুন বাবু মোট ৩৯টি গান লিখেন। এই গান শিল্পী নাজনীন আকতার মৌসুমী দেশের বিভিন্ন জেলায় দলীয় সমাবেশে পরিবেশন করেন। প্রথমে বিভাগীয় শহর রাজশাহী ও রংপুর তারপর সৈয়দপুর, নওগাঁ, বগুড়ায় গান করেন। এরপর কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রামে তারপর ঢাকা বিভাগে গাজীপুর এবং ময়মনসিংহ—ভালুকা, নেত্রকোনা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ পরবর্তী পর্যায়ে গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর ভাঙ্গার সমাবেশে ও রোডমার্চগুলোতে গান পরিবেশন করেন।
শিল্পী মৌসুমী বলেন, রাজপথে যখন ছিলাম তখন অনেক হুমকি, ধামকি ও হামলার ঘটনার স্বীকার হই। তারপরেও থেমে যাইনি। কারণ উল্লেখ করে শিল্পী মৌসুমী বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উৎসাহে আমি এগিয়ে যাই। তার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হই। তিনি আমাকে উৎসাহ দেন এবং এত ত্যাগ স্বীকার করেও সাহসিকতার সাথে সব সমাবেশে গান পরিবেশন করি, এজন্য আমাকে অনুপ্রাণিত করেন । সরকার পতন আন্দোলনের সময় বাসায় থাকতে পারিনি, পালিয়ে থাকতে হয়েছে। শিল্পী আরও বলেন, আমার বাবা—মা ও পরিবারকে হুমকি দেয়া হতো। তারপরও তারা পিছপা হননি বরং আমার সাহস যোগিয়েছেন। অবশেষে ৫ আগস্ট আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেলাম।
শিল্পী নাজনীন আকতার মৌসুমী আরও বলেন, স্বৈরাচার সরকার পতনের পর প্রাণ খুলে কথা বলতে পারছি। অথচ স্বৈরাচার সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে বিটিভিতে প্রোগ্রামতো দূরের কথা। অডিশন দিলাম তাও আমাকে বাদ দেয়া হয়। যেহেতু আমি স্বৈরাচার বিরোধী গান করেছি তাই আমাকে বাদ দেয়া হয়। এখন কি করছেন, জবাবে শিল্পী মৌসুমী বলেন, আপাতত সঙ্গীত নিয়েই আছি। সঙ্গীতের মধ্যে প্রাণ খুঁজে পাই। অনেক স্বপ্ন আছে দেশের প্রতি, দলের প্রতি। এখন স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারি এটাই তো অনেক।
সঙ্গীতে কাদের আইডল মনে করেন জবাবে শিল্পী মৌসুমী বলেন, আমার আইডল রুনা লায়লা, আইয়ুব বাচ্চু, সাবিনা ইয়াসমিন ও কনকচাঁপা। মূলত তাদের গান শুনেই সঙ্গীত চচ্চা শুরু করি।