দলের প্রত্যেক কেন্দ্রীয় নেতাকে নির্বাচনমুখী হতে হবে : শেখ হাসিনা

এ সময় দলের নেতাকর্মী যারা টকশোতে আলোচনায় অংশ নেন, তাদের বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা বেশি করে তুলে ধরার নির্দেশ দেন তিনি। 

দলের প্রত্যেক কেন্দ্রীয় নেতাকে নির্বাচনমুখী হতে হবে : শেখ হাসিনা

প্রথম নিউজ, ঢাকা: দলের প্রত্যেক কেন্দ্রীয় নেতাকে নির্বাচনমুখী হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চলতি মাসে আমিও ছয়টি জনসভায় অংশ নেব। দায়িত্বপ্রাপ্তদের এলাকায় যেতে হবে। আমরা সরকারে থেকে কী কী করেছি, সেগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। 

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে বুধবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে দেশে ফিরেছেন। ১৬ দিনের সরকারি সফর শেষে গণভবনে পৌঁছালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় তিনি উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এ নির্দেশনা দেন। গণভবনে উপস্থিত একাধিক নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের নির্বাচনী জোর প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, যথাসময়েই নির্বাচন হবে। প্রস্তুত হোন। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সে নির্বাচনে জনগণের রায় নিয়ে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে। দলের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে ভোটের প্রস্তুতি নিতে হবে। আর যারা এই ভোট ঠেকাতে আসবে তাদের প্রতিহত করতে হবে। সরকারের অর্জনগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। একই সঙ্গে বিএনপির জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস, অর্থ লুটপাট, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা, হামলা-মামলা, নির্যাতনের চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।

এ সময় দলের নেতাকর্মী যারা টকশোতে আলোচনায় অংশ নেন, তাদের বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা বেশি করে তুলে ধরার নির্দেশ দেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট (বিজি-২০৮) বুধবার বেলা ১২টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ অন্য মন্ত্রীরা। আনুষ্ঠানিকতা শেষে সফরসঙ্গী ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে সোজা গণভবনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন। এরপর তিনি সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। ২০২০ সালে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর এই প্রথম কেন্দ্রীয় নেতারা গণভবনে যান দলীয় সভানেত্রীকে সংবর্ধনা জানাতে।

উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কিছুটা অসুস্থ ছিলাম। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দেখে সুস্থ হয়ে গেছি। আওয়ামী লীগই আমার প্রাণ, আওয়ামী লীগের কর্মীরাই আমার শক্তি। অসুস্থ থাকলেও তাদের দেখলেই ভালো হয়ে যাই।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানো নিয়েও কথা বলেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার প্রতি তো অনেক উদারতা দেখিয়েছি। তার (খালেদা জিয়া) ভাই, বোন আমার কাছে কান্নাকাটি করেছে। শেখ রেহানাকে ধরেছে। আমার নির্বাহী ক্ষমতাবলে খালেদা জিয়াকে জেল থেকে মুক্ত করে বাসায় থাকার সুযোগ দিয়েছি। দেশের সেরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। এখন যদি বিদেশ যেতে চায় তাহলে তো তাকে জেলে যেতে হবে। আদালতের আদেশ নিয়ে বিদেশে যেতে হবে। এখানে আমার করার কিছুই নেই।

বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন- বিএনপি আন্দোলন করছে, তাদের পলাতক নেতা (তারেক রহমান) বলে, যত টাকা লাগে কোনো সমস্যা নেই। এই ‘এত টাকা’ কোথায় থেকে পেল? তাদের এই টাকার উৎস্য কী? খোঁজ নেওয়া দরকার। তারা ক্ষমতায় থাকতে দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করেছিল। সে কারণে এখনো তারা ‘যত’ টাকা লাগে কোনো সমস্যা নেই বলে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানও বলেছিল, ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি খুনির দল। জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। খালেদা জিয়া ও তাদের কুপুত্র তারেক রহমান আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা করেছিল। সে সময়ে খালেদা জিয়া আমাকে নিয়ে কটাক্ষ করেছিল। বলেছিল, ওনাকে কে মারতে যাবে? ভ্যানিটি ব্যাগে নিজেই গ্রেনেড নিয়ে গেছে। আমার মনে কষ্ট দিতেই খালেদা জিয়া ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করে। কারণ ওইদিন আমি বাবা-মা-ভাইসহ সবাইকে হারিয়ে এতিম হয়েছিলাম। অথচ খালেদা জিয়ার সেদিন জন্মদিন না। শুধু তাই নয়, জাতির পিতার খুনি আবদুল আজিজ পাশাকে মরণোত্তর পদোন্নতি দিয়েছিল। তাকে সব সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিল। অন্য খুনিদের পুরস্কৃত করেছিল। খুনি রশিদকে বিরোধীদলীয় নেতা বানিয়েছিল বিএনপি।   

তিনি আরও বলেন, বিএনপি আজকে হামলা-মামলার যে অভিযোগ করে, তারা কোন মুখে এ কথা বলে। তারা আহসান উল্লাহ মাস্টারকে গুলি করে হত্যা করেছে। নাটোরের মমতাজ উদ্দিন, খুলনার মঞ্জুরুল ইমামকে গুলি ও বোমা মেরে হত্যা করেছে। আমাকে (শেখ হাসিনা) কয়েকবার টার্গেট করেছে। গ্রেনেড হামলা করেছে। আমাদের দলের নেতা তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, মতিয়া চৌধুরী, সাবের হোসেনকে কীভাবে লাঠিপেটা করেছে, সেগুলো কী ভুলে গেছে? বাহাউদ্দিন নাছিমকে কীভাবে নির্যাতন করেছে? শেখ সেলিমকে বিনা ওয়ারেন্টে ধরে নিয়ে কীভাবে রিমান্ডে নির্যাতন করেছে সেগুলো কী বিএনপি ভুলে গেছে? আমরা কী করেছি তাদের? তারা তো আন্দোলন করছে। 

তিনি বলেন, যারা টিভিতে টকশো কর, তারা বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনগুলো বেশি বেশি করে বলবে। ছয় ঋতুর দেশ। মানুষ ভুলে যায়। মনে করিয়ে দিতে হবে। 

গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, অসীম কুমার উকিল, আমিনুল ইসলাম আমিন, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, ফরিদুন্নাহার লাইলী, ড. শাম্মী আহমেদ, ওয়াসিকা আয়েশা খান, ডা. রোকেয়া সুলতানা, শামসুর নাহার চাপা, সিদ্দিকুর রহমান, ড. সেলিম মাহমুদ, সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম, সায়েম খান, আনিসুর রহমান, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, গোলাম কবির রাব্বানী চিনু, প্রফেসর মেরিনা জামান কবিতা, মারুফা আকতার পপি, পারভীন জামান কল্পনা, আজিজুস সামাদ আজাদ ডনসহ অনেকেই।