দ্রোহের মন্ত্রে ভালোবাসা, মৃত্যুকে ভয় নেই ইউক্রেনীয় যুগলের
প্রথম নিউজ, ডেস্ক : ২৪ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করবেন সেটা আগে ভাবা ছিল না ইউক্রেনীয় যুগল ইয়ারয়না আরেইভা ও তার প্রেমিক সভিয়াতোস্লাভ ফারসিনের। কিন্তু রাশিয়া হামলা শুরু করলে হুট করে তাদের এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সামনে দাঁড়িয়ে তারা যখন একে অপরের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন, সম্ভাব্য বিমান হামলার জন্য সতর্ক করতে শহরজুড়ে তখন বাজছে সাইরেন।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের সিটি কাউন্সিলের ডেপুটি আরেইভা বলছেন, খুবই ভয় লাগছিল, অথচ এটা আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের মুহূর্ত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কানে তখন সাইরেনের শব্দ আসছে।
কথা ছিল মে মাসের ৬ তারিখে বিয়ে করবেন আরেইভা ও ফারসিন। তারপর একটা অনুষ্ঠান হবে নদীর ধারে একটা রেস্তোরাঁয়। ২১ বছর বয়সী আরেইভার স্বপ্ন ছিল, সময়টা হবে অন্যরকম, সে, তার কাছের মানুষগুলো, নদী আর সুন্দর লাইটিং। বিয়ে নিয়ে এভাবেই স্বপ্ন দেখেছিলেন এই তরুণী।
কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যখন ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন, সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় সবকিছু। ভোরের আলো ফোটার আগেই শুরু হয়ে যায় বৃষ্টির মতো মিসাইল হামলা।
লাখো মানুষের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে তিন দিক থেকে হামলা শুরু করে রাশিয়া। ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পূর্বাঞ্চল ও ইউক্রেনের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে যায় মামলার পরিধি।
এখন আমাদের দেশের জন্য লড়তে হবে- আরেইভা ও ফারসিন এ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। ২০১৯ সালে কিয়েভে একটি বিক্ষোভ চলাকালে প্রথম পরিচয় দু’জনের। আর গতকাল হুট কিরে তারা যে বিয়ের সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন তার কারণ হলো- তারা এখন জানেন না যে, সামনে কী আছে তাদের কপালে।
আরেইভা বলেন, সময়টা তো কঠিন হয়ে গেল। আমাদের দেশের জন্য লড়তে হবে। আমরা হয়তো মারা যাব, কিন্তু মৃত্যুর আগে আমরা একে অপরকে পেতে চেয়েছিলাম।
২৪ বছর বয়সী ফারসিন পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তারা এখন স্থানীয় টেরিটোরিয়াল ডিফেন্স সেন্টারে যোগ দেবেন, দেশের সুরক্ষায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন।
আরেইভার ভাষায়, ‘দেশটাকে আমাদের বাঁচাতেই হবে। আমরা যে মাটিতে থাকি সেই মাটিকে রক্ষা করতে হবে। যে মানুষদের ভালোবাসি তাদের বাঁচাতে হবে। খারাপ কিছু যেন না হয়, সেটাই চাই। কিন্তু দেশটাতে বাঁচাতে আমাকে যেকোনো কিছু করতে হতে পারে।
আরেইভা এখনও জানেন না তাদের কী কাজ করতে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, হতে পারে আমাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে, আর আমরা লড়ব। হতে পারে আমরা অন্য কোনোভাবে সাহায্য করব। এ সিদ্ধান্ত তারা নেবে।
সদ্য বিয়ে করা স্বামীকে নিজের সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধু বলে মনে করেন আরেইভা। এখন হয়তো হলো না, কিন্তু একদিন বিয়ের অনুষ্ঠান হবে, আরেইভার চোখে এখনও সেই স্বপ্ন স্পষ্ট।
তিনি বলেন, হতে পারে তারা (রাশিয়া) আমাদের দেশ থেকে চলে যাবে, আর তারপর সব কিছু আবার আগের মতো হয়ে যাবে।
‘আমি চাই, সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাক, আমাদের দেশ আমাদেরই থাকুক। রুশরা না থাকলে আমরা ভালো থাকব, সুখে থাকব।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: