দরিদ্র সিরিয়ায় উদ্ধারকাজ চলছে খালি হাতেই

দেশটির যে এলাকায় ভূমিকম্প হয়েছে তা আবার সবথেকে বেশি যুদ্ধপীড়িত অঞ্চল। দেশটির এই ভয়াবহ দুর্যোগ সামলানোর মতো কোনো অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতিই নেই।

দরিদ্র সিরিয়ায় উদ্ধারকাজ চলছে খালি হাতেই
দরিদ্র সিরিয়ায় উদ্ধারকাজ চলছে খালি হাতেই

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক : এক সময় শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ থাকলেও এক যুগ গৃহযুদ্ধের কারণে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর তালিকায় নেমে এসেছে সিরিয়া। দেশটির যে এলাকায় ভূমিকম্প হয়েছে তা আবার সবথেকে বেশি যুদ্ধপীড়িত অঞ্চল। দেশটির এই ভয়াবহ দুর্যোগ সামলানোর মতো কোনো অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতিই নেই। এরমধ্যে যুক্ত হয়েছে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি। শীতের প্রকোপের মধ্যে এই বৃষ্টি নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডয়চে ভেলের রিপোর্টে জানানো হয়েছে, এমন অবস্থায়ও নিজের প্রতিবেশিকে বাঁচানোর আশায় খালি হাতেই উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয়রা। যে যেভাবে পারছেন দুর্গতদের সাহায্য করে যাচ্ছেন। ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইদলিব প্রদেশ। সরকারবিরোধী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই এলাকায় ধ্বংসস্তূপ থেকে দুর্গতদের উদ্ধারের মতো পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই। ইদলিবের প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তরে তুরস্কের সীমান্তবর্তী শহরটি বলতে গেলে ধুলোয় মিশে গেছে।

সিরিয়ায় সরকারি বাহিনী নিয়ন্ত্রিত আলেপ্পো ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছে। সেখানেও উদ্ধারের পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি নেই। সাধারণ মানুষ যে যার মতো করে সাহায্যের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ৩০ বছর বয়সি স্থানীয় এক নারী জানান, যারা উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই বেসামরিক লোকজন। খালিহাতে ধ্বংসস্তূপ সরানোর চেষ্টা করছেন তারা। কোনো যন্ত্রপাতি নেই। এটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ তারা নিজেরাই ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়তে পারেন। সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সরকার নিয়ন্ত্রিত আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামা ও তারতুস এলাকায় ৬৫৬ জনের মৃত্যু ও ১৪১৯ জনের আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে। তবে এই সংখ্যা বাড়তে পারে বলেও তারা উল্লেখ করেছে।
এদিকে সিরিয়ায় চলমান যুদ্ধে বারবার বিমান হামলার কারণে আগে থেকেই বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিবের ভবনগুলো নাজুক অবস্থায় ছিল। যদিও ইদলিব প্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় নতুন ভবনগুলোও ভূমিকম্পের কারণে গুঁড়িয়ে গেছে। অনেকেই পুরো পরিবারসহ ভবনগুলোর নীচে চাপা পড়েছেন। অবস্থা এমন হয়েছে মৃতের জন্য কাঁদারও কেউ নেই। ভূমিকম্পের পর কয়েকটি এলাকায় মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে গেছে। কত লোকের মৃত্যু হয়েছে তা রাতারাতি নিশ্চিত হওয়ার সুযোগও নেই। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। 

এর আগে সোমবার ভোররাত ৪টা ১৭ মিনিটের দিকে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ৭.৮ মাত্রার এই ভূমিকম্প হয়। তুরস্কের সিরীয় সীমান্তবর্তী শহর গাজিয়ান্তেপে এর উৎপত্তি। এরপর শতাধিক আফটার শক রেকর্ড করা হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পনটির মাত্রা ছিল ৭.৫। ভূমিকম্পে দুই দেশে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার মানুষ মারা গেছেন। এরমধ্যে তুরস্কেই মারা গেছেন প্রায় ৬ হাজার। দেশটিতে আহত ৩৫ হাজার। সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সরকারি হিসেব চালানো সম্ভব নয়। সরকারি এলাকাগুলোতে মৃতে এক হাজারের বেশি। অপরদিকে বিদ্রোহীরা জানিয়েছে তারা ৭০০ মরদেহ উদ্ধার করেছে। 

যুদ্ধবিধ্বস্ত ভবনগুলো থেকে মানুষকে উদ্ধারে সাহায্য করতে কয়েক বছর আগে কাজ শুরু করে হোয়াইট হেলমেট নামের স্বেচ্ছাসেবী দল। ভূমিকম্পের পরও তারা কাজ করছে। তেমন কোনো যন্ত্রপাতি না থাকলেও তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়া মানুষগুলোকে উদ্ধারের। তবে এ কাজে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। তবে স্থানীয়রা বলছেন, এই সাহায্যই পর্যাপ্ত নয়। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর এগিয়ে আসা উচিত। আর কিছু না হোক, অন্তত ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে মানুষকে উদ্ধার এবং চিকিৎসা-সহায়তাটুকু হলেও করা দরকার এখন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: