দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু
প্রথম নিউজ ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। রোববার সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোট বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এর আগে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দেশব্যাপী মোতায়েন করা হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা রাজধানীর ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানমন্ডি সুধাসদনের ঠিকানায় ভোটার হওয়ায় তিনি এ কেন্দ্রে ভোট দেন।
রোববার সকাল ৮টায় ভোট শুরুর পর কেন্দ্রে গিয়ে তিনি তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এ সময় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। রাজধানীর ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, নিউ মার্কেট এবং কলাবাগান থানা এলাকা নিয়ে ঢাকা-১০ সংসদীয় আসনের একটি ভোটকেন্দ্র ঢাকা সিটি কলেজ।
এদিকে নির্বাচনে অনিয়ম হলে প্রয়োজনে কেন্দ্র বা নির্বাচনী এলাকার ভোটগ্রহণ সামগ্রিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। শনিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এ কথা জানান। এর আগে বিকেলে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে সিইসি বলেন, বিরোধী পক্ষ ভোট বর্জনের পাশাপাশি প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। এতে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে উঠিয়ে আনা কঠিন হবে। এমন পরিস্থিতিতেও ভোটাররা কেন্দ্রে আসবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে বারবার অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ দেওয়া হলেও বিএনপিসহ ইসির নিবন্ধিত ১৬টি রাজনৈতিক দলসহ ৬৪টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের বাইরে রয়েছে। তিন দশক ধরেই দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মধ্যে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এই লড়াই কখনও রাজনীতির টেবিলে, আবার কখনও রাজপথে সহিংসতায় রূপ পেয়েছে। ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হওয়ার পর তৃতীয়বারের মতো দলীয় সরকারের অধীনে এবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিরোধী দলের বর্জনের মধ্যেই ১৫৩ আসনে প্রার্থীরা বিনা ভোটে জয় নিশ্চিত করেন। বাকি আসনে ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল ৫ শতাংশের মতো। এর পর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপিসহ প্রায় সব দল অংশ নিলেও নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ভোটের আগের রাতেই নৌকায় ছিল মেরে বাক্স ভরে রাখার অভিযোগ ছিল সে নির্বাচনে। এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি দেখানো হয়েছিল ৮০ শতাংশ। যদিও ভোটার উপস্থিতির হার নিয়েও বড় বিতর্ক রয়েছে। ২৯৯ আসনে আজ সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনের ভোট স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ১৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৫ লাখ ৯২ হাজার ১৬৯ ও নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার ১৪০ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৮৪৮ জন।
নির্বাচনে মোট প্রার্থী ১ হাজার ৯৬৯ জন। এর মধ্যে ২৮টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৫৩২ জন ও স্বতন্ত্র ৪৩৭ জন। নারী প্রার্থী ৯৬ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ২ জন। যদিও জাতীয় পার্টিসহ একাধিক দলের এবং বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
আজকের ভোটে সারাদেশে কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ২৪টি এবং ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৫৮টি। এর মধ্যে আগের দিন ২ হাজার ৯৭১ ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে, বাকি ৩৯ হাজার ৫৩ কেন্দ্রে আজ সকালে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকছেন ৬৬ জন এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ৫৯০ জন। কেন্দ্রের নিরাপত্তায় সারাদেশে ৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫৫ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭৬৭ জন ও আনসার ৫ লাখ ১৪ হাজার ২৮৮ জন। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রের যাতায়াতের নিরাপত্তায় থাকবেন দেড় লাখ সদস্য।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইসির আমন্ত্রণে ৩২ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক ঢাকায় এসেছেন। এর বাইরে ১২৬ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক এসেছেন নিজ উদ্যোগে। পাশাপাশি ইসির নিবন্ধিত সংস্থার অধীনে দেশি পর্যবেক্ষক থাকছে ২০ হাজার ৭৭৩ জন।