তেলের মূল্যবৃদ্ধি: রাস্তায় ভিক্ষা না হয় অনাহারে মৃত্যুর আশঙ্কা

নুরুল ইসলামের সংসারে দু’টি ছোট বাচ্চা এবং বাবা-মা রয়েছে

 তেলের মূল্যবৃদ্ধি: রাস্তায় ভিক্ষা না হয় অনাহারে মৃত্যুর আশঙ্কা
 তেলের মূল্যবৃদ্ধি: রাস্তায় ভিক্ষা না হয় অনাহারে মৃত্যুর আশঙ্কা-প্রথম নিউজ

প্রথম নিউজ, ডেস্ক : নুরুল ইসলামের সংসারে দু’টি ছোট বাচ্চা এবং বাবা-মা রয়েছে। নিজের সঙ্গে তাদের প্রয়োজনও পূরণ করতে হয় নুরুলের। বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ জ্বালানি তেলের দাম ৫০ শতাংশেরও বেশি বাড়িয়েছে। তেলের দাম বৃদ্ধির পেছনে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধকে দায়ী করেছে দেশটি। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি ক্রমবর্ধমান আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। তেলের এই ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির জন্য কেউ কেউ ভিক্ষার জন্য রাস্তায় নামতে হবে বলেও আশঙ্কা করছেন। রোববার (১৪ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শাকসবজি পরিবহনের জন্য ট্রাক ব্যবহার করেন মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। ট্রাকে পেট্রোল নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় তিনি বলেন, তিনি ভয় পাচ্ছেন যে তাকে হয়তো শিগগিরই ভিক্ষা করতে রাস্তায় নামতে হবে। বাংলাদেশে জ্বালানির দামের অপ্রত্যাশিত বৃদ্ধির ফলে পেট্রোলের দাম প্রতি লিটার ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১৩০ টাকায় পৌঁছেছে। এমনকি ডিজেল ও কেরোসিনের দামও বেড়েছে ৪২.৫ শতাংশ। তেলের ব্যাপক এই মূল্যবৃদ্ধি মোহাম্মদ নুরুল ইসলামকে এমন এক অবস্থায় ফেলে দিয়েছে যেখানে তিনি নিজের মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটাতে অর্থ জোগাড়ের জন্য কার্যত সংগ্রাম করছেন। গত নয় বছর ধরে একটি পরিবহন কোম্পানিতে কাজ করছেন নুরুল। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা দিনাজপুরের বাসিন্দা ৩৫ বছর বয়সী এই যুবক তার নিজ শহর থেকে তাজা পণ্য রাজধানী ঢাকায় পরিবহন করে থাকেন। মোহাম্মদ নুরুল ইসলামের সংসারে দু’টি ছোট বাচ্চা এবং বাবা-মা রয়েছে। নিজের সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রয়োজনও নুরুলের পূরণ করতে হয়। কিন্তু জ্বালানি তেলের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাকে তার পুরো বেতন দিতে পারছেন না নিয়োগকারী কর্তারা।  নুরুল ইসলাম বলছেন, ‘বাজারে গিয়ে আমি আমার পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত খাবার কিনতে পারি না। জ্বালানির দাম যদি এভাবে বাড়তে থাকে, আমি আমার বাবা-মায়ের দেখাশোনা করতে পারব না বা আমার সন্তানদের স্কুলেও পাঠাতে পারব না।’ তার আশঙ্কা, ‘আমি যদি আমার চাকরি হারাই, তাহলে আমাকে রাস্তায় ভিক্ষা করা শুরু করতে হতে পারে।’

১৬ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি জনসংখ্যার এই দেশটিতে অগণিত আরও বহু মানুষ এখন একইরকম দুর্দশার মুখোমুখি হচ্ছেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সংকটে রয়েছে। বাংলাদেশের জ্বালানিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘আমরা জানি দাম বৃদ্ধি অনেক বড় বিষয়, কিন্তু বিদেশে জ্বালানির দাম বাড়লে আমরা কী করতে পারি?’ সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, তার প্রশাসন অতীতে তেলের মূল্যবৃদ্ধি এড়াতে ভর্তুকি দিয়েছিল, কিন্তু দাম বাড়ানো এখন অনিবার্য ছিল। তার দাবি, ‘যদি বিশ্বব্যাপী দাম একটি স্তরে নেমে আসে, আমরা কিছু সমন্বয় করার চেষ্টা করব।’ গত সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধির খবর ঘোষণা করার পর শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষ পেট্রোল স্টেশনে বিক্ষোভ করেছে। মূল্যবৃদ্ধিকে প্রত্যাখ্যান করে তারা আগের দাম ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন।

এছাড়া বাংলাদেশে বিক্ষোভ বিক্ষিপ্ত হলেও ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে। তবে নসরুল হামিদ বিশ্বাস করেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমলেও শ্রীলঙ্কার মতো পরিণতি এড়াবে বাংলাদেশ। তবে তেলের এই ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেশ বড় বিপদেই পড়েছেন মোসাম্মাদ জাকিয়া সুলতানা নামে এক নারী। এই নারী তার অসুস্থ সন্তানকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাস ভাড়ার খরচ বহন করতেও হিমশিম খাচ্ছেন। তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর জ্বালানি খরচের কারণে গণপরিবহনের ভাড়া বেড়েছে বেশ অনেক। আর তাই গণপরিবহনে ভ্রমণের একান্ত প্রয়োজন হলেই কেবল সেটি ব্যবহার করছেন জাকিয়া। হাসপাতালে যাওয়ার পথে বাসে তিনি বিবিসির সাথে কথা বলেন, এসময় তার পাশে ছিল তার কিশোরী মেয়ে। জাকিয়া বলছেন, খাদ্যের দামের সাম্প্রতিক এই বৃদ্ধি ইতোমধ্যেই তাকে কঠোরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তিনি বলছেন, ‘শুধু যে বাসের ভাড়া বেড়েছে তাই নয়, বাজারে সব কিছুর দামও বেড়েছে, যার ফলে আমার সংসারের খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।’ তার ভাষায়, ‘এটা শুধু বাসের ভাড়া নয়। রিকশা ও অন্যান্য পরিবহনের ভাড়া বেড়েছে, তাই বাড়ি থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।’

দিনাজপুরের আরও প্রত্যন্ত অঞ্চলে গল্প একই রকম। শিউলি হাজদা জেলার ফুলবাড়ীর একটি ধানক্ষেতে কাজ করেন। তিনি বলছেন, খামারের মাধ্যমে যে আয় হয় তাতে খাবার কেনার সামর্থ্য তার নেই। তিনি বলেন, হঠাৎ করে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে চাষের খরচ অনেক বেশি হয়ে গেছে। শিউলি হাজদার ভাষায়, ‘যা বেতন পাই, তাতে কেবল আমাদের জীবনযাত্রার ব্যয় বহন করা যায়। সবকিছু এতো ব্যয়বহুল, আমরা আমাদের বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য পর্যাপ্ত খাবার কিনতে পারি না।’ বাংলাদেশে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় শিউলির মতো বহু মানুষ বলছেন, তাদের উপার্জন কোনো কাজে আসছে না। শিউলি বলছেন, ‘সরকার দ্রুত জ্বালানি তেলের দাম না কমালে আমরা অনাহারে মরব।’

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom