তাপদাহে নাকাল জনজীবন

১৯৬৫ সালে ঢাকায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। এরপর এই প্রথম ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গতকাল। এদিকে টানা পনেরো দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে চুয়াডাঙ্গা জেলায়। গতকাল এই জেলার তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তাপদাহে নাকাল জনজীবন

প্রথম নিউজ, অনলাইন: তীব্র দাবদাহে পুড়ছে দেশ। প্রচণ্ড গরমে জনজীবনে হাঁসফাঁস। এরমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে। ১৯৬৫ সালে ঢাকায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। এরপর এই প্রথম ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গতকাল। এদিকে টানা পনেরো দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে চুয়াডাঙ্গা জেলায়। গতকাল এই জেলার তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন শনিবার ছিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সারা দেশে বয়ে যাওয়া তীব্র এই দাবদাহ আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তারা বলছে, ধীরে ধীরে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ছে। এতে গরমে মানুষের অস্বস্তি আরও বাড়বে। তবে ১৮ তারিখের পর থেকে দেশের কিছু কিছু এলাকায় বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হবে এবং তাপমাত্রা কমে আসবে। 

আবহাওয়া বিদ মো. আব্দুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, সাধারণত এপ্রিল মাসে দেশের তাপমাত্রা বেশিই থাকে। তবে তাপমাত্রার পরিমাণটা এবার একটু বেশি। অন্যবার তাপদাহের স্থায়িত্ব সর্বোচ্চ পাঁচদিন থাকলেও এবার ১১ দিনেরও বেশি সময় ধরে তাপদাহ চলছে। এই তাপদাহ আরও বাড়বে। তিনি বলেন, বাতাসে এখন জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম রয়েছে। এজন্য তীব্র তাপমাত্রা থাকলেও মানুষ ঘামছে না। কিন্তু ধীরে ধীরে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ছে। এতে মানুষের অস্বস্তির পরিমাণ বাড়বে। বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ১৮ তারিখের আগে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না। চলতি মাসের ১৯ বা ২০ তারিখে সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ঢাকায় আপাতত বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। চুয়াডাঙ্গাতে ২৪শে এপ্রিলের পর বৃষ্টি হতে পারে। এখন বৃষ্টিপাত হলেই বজ্রপাত ও কালবৈশাখী ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এ বছর তাপমাত্রার তীব্রতা এত বেশি কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণত এই সময় বাতাসে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকার কথা সেটি এখন নেই। এজন্য তাপদাহ বেড়েছে। জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন হতে পারে যে মার্চ মাস থেকে এপ্রিলের দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত টানা প্রায় ১৭ দিন বৃষ্টিপাত হয়েছে। হয়তো বায়ুম-ল পরিষ্কার করে ফেলেছিল। তার যে প্যারামিটার দিয়ে বৃষ্টি ও মেঘ বানাবে সেটি ক্লিয়ার করে ফেলেছে। এখন সেটি পূরণ করতে অনেক সময় লাগছে বলে জানান তিনি। 

কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ মানবজমিনকে বলেন, ২১শে এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা শহরে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রতিদিনই ৩৯ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা নির্দেশ করেছে সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল। এ ছাড়া ১৮ থেকে ২০শে এপ্রিল রাজশাহী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা এবং যশোর জেলায় ৪১ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা নির্দেশ করেছে সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল। এবং ২৩শে এপ্রিলের পর থেকে দেশের কোনো জেলাতে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তিনি আরও বলেন, আগামী ২৩শে এপ্রিল থেকে দেশে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিমা লঘুচাপ এখন পাকিস্তান ও ইরানের সীমান্তে অবস্থান করছে। সপ্তাহের শেষের দিকে এটি ভারতে প্রবেশ করা শুরু করবে এবং আগামী ২১ তারিখের দিকে ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ দিয়ে অতিক্রম করবে। এর ফলে বাংলাদেশের সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোতে মেঘের সৃষ্টি হওয়া শুরু হবে। এবং ২৩শে এপ্রিলের পর থেকে বাংলাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড় শুরু হওয়ার সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করছে আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো।