তত্ত্বাবধায়ক না এলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না : মির্জা ফখরুল

কোনো নির্বাচন হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

তত্ত্বাবধায়ক না এলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না : মির্জা ফখরুল
তত্ত্বাবধায়ক না এলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না : মির্জা ফখরুল

প্রথম নিউজ, ঢাকা : যতক্ষণ পর্যন্ত দেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার না আসছে ততক্ষণ কোনো নির্বাচন হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার না আসছে। আগামী নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। 

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। 

২০০৯ সালে পিলখানায় শহীদদের স্মরণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের দেয়ালের লেখা পড়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, মানুষের চোখের ভাষা দেখেন। দেখবেন এই সরকারের প্রতি মানুষের শুধু ঘৃণা আর ঘৃণা। এই মুহূর্তে সবাই চায় এই সরকারের পরিবর্তন।

দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক হতে হবে। এটা শুধু বিএনপির বা অন্য কোনো দলের জন্য নয়। দেশের মানুষের জন্য, দেশকে রক্ষা করার জন্য আজ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কেউ এখানে নিরাপদ নয়। 

পিলখানার ঘটনা প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারির ঘটনা যেন আর কোনোদিন ঘটতে না পারে, সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম-লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে রাজপথে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটা গণবিপ্লব করে এদেরকে পরাজিত করতে হবে। এটাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। 

বিএনপির চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, গত আগস্ট মাস থেকে আমরা যখন চাল, ডাল, তেল ও লবণের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেছি, তখন থেকে সরকার গুলি করে আমাদের ১৭ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে।  ইতোমধ্যে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে, এখনও আমাদের কয়েক হাজার নেতাকর্মী কারাগারে। এই যে ভয়াবহ, এর থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, বিএনপি'র মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, ঢাকা দক্ষিণ বিএনপি'র সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু প্রমুখ।

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন রুখে দেয়া হবে: দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন রুখে দেয়া হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার বিকালে ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে নবাবগঞ্জের পদযাত্রা্পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, ‘‘ এই নির্বাচন(জাতীয় নির্বাচন) তারা(সরকার) করতে চায় আবার আগের মতো। আবার আগের মতো ভোট লুট করে নিয়ে যাবে, চুরি করে নিয়ে যাবে। আমরা কী সেই নির্বাচন করতে দেবো? আমরা কী রুখে দাঁড়াবো।”
‘‘ রুখে দাঁড়াবো। আমাদের অস্তিত্বের জন্য, আমাদের অধিকারের জন্য, আমাদের বাংলাদেশেকে রক্ষা করবার জন্য, বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করবার জন্য আমাদের আজকে রুখে দাঁড়াতে হবে। এই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। আমরা বার বার মার খাচ্ছি বাংলাদেশের মানুষ। এবার আর মার খেতে রাজি নই।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ সরকার যদি নিরপেক্ষ থাকতো আপনার ভোট আপনি দিতে পারতেন। যাকে খুশি তাকে দিতে পারতেন। এখন কী সেটা হয়। হয় না। এখন ওদের(আওয়ামী লীগ সরকার) কথা হচ্ছে, আমার ভোট আমি দেবো, তোমার ভোটও আমি দেবো।
‘‘ এজন্য এখন মানুষ বলতে শুরু করেছে আগে যদি জানতাম তোর ভাঙা নৌকায় উঠতাম না। এই নৌকা মানুষ নেবে না। কারণ এই নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগ এদেশের অর্থনীতিকে ধবংস করে দিয়েছে। চুরির শেষ নাই… এবং কাজ না করে টাকা নিয়ে চলে যায়। আর ১০ টাকার জিনিস ১০০ টাকা বিল করে নিয়ে চলে যায়।”
তিনি বলেন, ‘‘ পদ্মাসেতু করেছে খুব ভালো। কিন্তু পদ্মাসেতুর ১০ হাজার কোটি টাকায় ৩০ হাজার কোটি টাকা করেছে। আর পাতাল রেলে করে কি কি করে? উন্নয়নের নদী বয়ে যাচ্ছে।”
‘‘ কিন্তু উন্নয়নে সাধারণ মানুষের উপকার হচ্ছে না। এই সরকার যদি আবার আসে তাহলে এদেশের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না, জাতির কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।”
নবাবগঞ্জ শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে বেলা আড়াইটায় শুরু হয়ে দুই কিলোমিটার পদযাত্রা করে বক্সবাজার মোড়ে এসে শেষ হয়।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ঢাকা জেলা আহ্বায়ক খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চলনায় সমাবেশে বিএনপির শিরিন সুলতানা, দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন, তমিজ উদ্দিন, নাজিম উদ্দিন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ প্রমূখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।
পদযাত্রায় মহাসচিব, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ জেলার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও যুব দল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্র দলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী এই পদযাত্রায় অংশ নেন।
গ্যাস-বিদ্যুত-নিত্য পণ্যে দাম কমানো, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপি সারাদেশে জেলায় জেলায় ২৫ ফেব্রুয়ারি পদযাত্রা করে। রোববার ঢাকা জেলার এই পদযাত্রার কর্মসূচিটি হলো। 
ক্ষমতাসীনদের ব্যাপক দুর্নীতির কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এরা ফুলে ফুলে সব কলা গাছ হয়ে গেছে। যার পায়ে স্যান্ডেল ছিলো সে এখন বিরাট গাড়ি চালায় এবং বড় বড় বাড়ি তৈরি করেছে সব আওয়ামী লীগের লোকেরা। এই বাংলাদেশের মানুষের রক্ত চুষে নিয়ে, ট্যাক্স চুরি করে নিয়ে।”

‘‘ আর বক্তব্য নয়। এখন আমাদের শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে সোচ্চার হয়ে সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, আমরা ১০ দফা দিয়েছি.. তোমরা অবিলম্বে পদত্যাগ করো, সংসদকে ভেঙে দাও এবং একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দাও। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটা নিরপেক্ষভাবে একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করবে সেই কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে জনগন সেখানে ভোট দেবে। যার ভোট সে দেবে, যাকে খুশি তাকে দেবে। সেখানে যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়ে আসে আসুক আপত্তি নাই। কিন্তু জনগনের ভোটে আসতে হবে।”
তিনি বলেন, ‘‘ আমরা এই সংগ্রাম আমরা শুরু করেছি বাংলাদেশকে রক্ষা করবার জন্য, বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করবার জন্য। তাই আসুন আমরা বিশেষ করে তরুন যুব সমাজকে আহ্বান জানাব, বাংলাদেশে যত পরিবর্তন হয়েছে, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৯০ আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ সব কিছু তরুন যু্বকরা করেছে।”
‘‘ তরুনদের বলব, এগিয়ে আসুন। পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে হবে, পরিবর্তন করতে হবে। গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকার যারা আমাদের সমস্ত অর্জনকে ধবংস করে দিয়েছে তাদেরকে পরাজিত করে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।”

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: