ভিসির বাসভবনের সামনে দাবি নিয়ে ঢাবি ছাত্রীরা

এসব অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন বিভিন্ন বর্ষে অধ্যয়নরত কুয়েত মৈত্রী হলের অর্ধশত শিক্ষার্থী।

ভিসির বাসভবনের সামনে দাবি নিয়ে ঢাবি ছাত্রীরা
ঢাবিতে উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকের পর হলে ফিরলেন ছাত্রীরা

প্রথম নিউজ, অনলাইন: বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাধ্যক্ষ নাজমুন নাহারের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনের সামনে প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের একদল ছাত্রী। ছাত্রীদের অভিযোগগুলোর মধ্যে আছে আসন বরাদ্দের ক্ষেত্রে কালক্ষেপণ করা, হল ক্যানটিনের খাবারের মানোন্নয়নে উদ্যোগ না নেওয়া, শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উদাসীনতা, নানা আশ্বাস দিয়ে পরে তা না পূরণ করা ইত্যাদি।

আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা কুয়েত মৈত্রী হলের এক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেখানে অন্য হলে আমাদের সহপাঠীরা প্রথম বর্ষে সিট পেয়ে গেছে, সেখানে তৃতীয় বর্ষ শেষ হতে চললেও আমরা সিট পাইনি, গণরুমে থাকছি। আমাদের আসন না দিয়ে হল প্রশাসন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের সিট দিচ্ছে। জানতে চাওয়া হলে কর্তৃপক্ষ আমাদের বলেছে, উপাচার্য চলমান শিক্ষাবর্ষকে সিট দেওয়ার নিয়ম করেছেন।’

এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের কি সিট পাওয়ার অধিকার নেই? আমরা যখন বলেছি যে সিট দিতে হবে, তখন হল প্রাধ্যক্ষ ভাইভার নামে নাটক সাজিয়েছেন। তিনি দুই দিনের মধ্যে আমাদের স্থানীয় অভিভাবক ও গ্রাম থেকে মা–বাবাকে নিয়ে আসতে বলেছেন। সিট পাওয়ার আশায় আমরা কষ্ট করে অভিভাবক ও মা–বাবাকে এনেছি। সেই ভাইভার ছয় মাস হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত ফলাফল বা সিট কিছুই আমরা পাইনি। প্রাধ্যক্ষ সিট নিয়ে ডিপ্লোম্যাসি করছেন।’

অন্যান্য অভিযোগ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ছাত্রী বলেন, ‘সর্বশেষ আন্তহল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের অনুশীলনে ছাত্রীদের ন্যূনতম সহযোগিতা করা হয়নি। খেলার জন্য ছাত্রীদের দেওয়া হয়েছে স্কুলের বাচ্চাদের কেডস। অথচ অন্য হলের ছাত্রীরা ভালো মানের জুতা পরে খেলায় অংশ নিয়েছেন। মাঠে সবাই আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করেছে।’

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘ক্রিকেট খেলতে গিয়ে আমাদের হলের এক ছাত্রী গুরুতর আহত হন। হল প্রশাসন তাঁর খোঁজখবর পর্যন্ত নেয়নি। বুধবার হলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছিল। অন্যান্য হলে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উপলক্ষে ছাত্রীদের টি-শার্ট, ট্রাউজার দেওয়া হলেও আমাদের হলে সব ছাত্রী তা পাননি। দুপুরের খাবার দেওয়া হয়েছে বিকেল চারটায়। সেটা ছিল হল ক্যানটিনে রান্না করা নিম্নমানের পোলাও।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সব হলে যদি বাজেট আসে, মৈত্রী হল কি আলাদা? প্রতিটি হলের জন্য সমান বাজেট বরাদ্দ হয়, তাহলে আমরা কেন আমাদের আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো থেকে বঞ্চিত হব?’

ক্ষুব্ধ আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ছাত্রীদের হলগুলোতে সরস্বতীপূজার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটি হলে আলোকসজ্জা, সাউন্ড সিস্টেম থেকে সব ক্ষেত্রে প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের উপস্থিতি ছিল। কিন্তু আমাদের হলের শিক্ষকেরা আসেননি। আলোকসজ্জা দূরের কথা, সাজানোর কোনো খবর নেই; যেখানে আমাদের পাশে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে দুই দিন ধরে আলোকসজ্জা আছে। এই পরিস্থিতি দেখার পর ছাত্রীদের ক্ষোভ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এ কারণেই আমরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছি।’

অভিযোগ তুলে ধরে আন্দোলনে থাকা কুয়েত মৈত্রী হলের আরেকজন ছাত্রী বলেন, ‘আমরা যদি বলি, ক্যানটিনের খাবারের দাম বাড়লেও মান কমে গেছে, প্রাধ্যক্ষ ক্যানটিন পরিচালকের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। হলের সমস্যার বিষয়ে কোনো শিক্ষার্থী ফেসবুকে কিছু লিখলে তাঁকে ডেকে নিয়ে অপমান করেন প্রাধ্যক্ষ। এমনকি পরিবারকে ফোন করে ওই শিক্ষার্থীর সম্পর্কে বাজে কথা বলেন তিনি। বিভিন্ন সমস্যার কথা বলতে বলতে সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর আমরা আজকে এখানে এসে অবস্থান নিয়েছি।’

এই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ‘সমাধানের আশ্বাস দেওয়ার এক মাসের মধ্যে প্রাধ্যক্ষের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এসে আমাদের বলেছেন, প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করবেন। কিন্তু আমরা আর তা চাই না। প্রাধ্যক্ষ অনেক আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু কিছুই করেননি। তাই আমরা এই মুহূর্তে তাঁর পদত্যাগ চাই।’

আরেক ছাত্রীর অভিযোগ, ‘কুয়েত মৈত্রী হলে পর্যাপ্ত পাঠকক্ষ নেই। পর্যাপ্ত আবাসিক শিক্ষকও নেই। পানির ফিল্টারের ব্যবস্থা যথাযথ নয়। ক্যানটিনে বেশি দামে নিম্নমানের খাবার বিক্রি হয়। হল প্রাধ্যক্ষ ছাত্রীদের সমস্যা সমাধানে সম্পূর্ণ উদাসীন।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রাধ্যক্ষ নাজমুন নাহারের মুঠোফোনে একাধিক কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: