ডলার সংকটে সেপ্টেম্বরে এলসি খোলার হার কমেছে ৩১%
আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে দেশের রপ্তানি ৬.২৪% কমেছে; রেমিট্যান্স কমেছে ২৫%
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশ ব্যাংকের সাময়িক তথ্য অনুসারে, দেশে ডলার সংকটের কারণে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানির জন্য লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার হার কমেছে ৩১.১৬ শতাংশ। আমদানিকারকরা সেপ্টেম্বরে ৫.৭০ বিলিয়ন ডলারের এলসি খুলেছেন, যা গত বছরের একই মাসে ছিল ৮.২৮ বিলিয়ন ডলার। কারখানার যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মতো সব ধরনের আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদায়ী অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকে। ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ নাগাদ রিজার্ভ ৪১.৮২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা আগেরবারের থেকে কমেছে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভ হ্রাস রোধে সরকার সরকারি আমদানি ছাড়া সব ধরনের পণ্যের ওপর শতভাগ এলসি মার্জিন ঘোষণা করেছে। ফলে আমদানির পরিমাণ কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন থেকে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির হার নিম্নমুখী। আমদানিকারকরা জুনে ৮.৪৪ বিলিয়ন ডলারের এলসি খুলেছিলেন, যা সেপ্টেম্বরে ৫.৭০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
জুন মাসে এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ ছিল ৭.৭৫ বিলিয়ন ডলার। টানা তিন মাসের পতনের প্রবণতা সেপ্টেম্বরেও অব্যাহত ছিল। এ মাসে এলসি সেটেলমেন্ট ৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও, এলসি নিষ্পত্তি আগস্টের তুলনায় ১.৩১ বিলিয়ন বা ১৮% কমেছে।
এদিকে, সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার ৯.১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, বুধবার পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এ তথ্য জানান। জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭.৪৮% যা আগস্টে ২.০২ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির সর্বোচ্চ হার ছিল ১১.৯৭%।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যখন আমদানির ওপর শর্ত আরোপ করে তখন আমদানি নিয়ন্ত্রণ জরুরি ছিল। কারণ অনেক অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, "আমাদের দেশ অনেকাংশে আমদানির ওপর নির্ভরশীল। তাই শিল্প যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়ে কোনো কাজ হবে না। আমাদের বড় আমদানি অব্যাহত রাখতে হবে।"
তিনি বলেন, আমদানির মূল্য বাড়লেও আয়তন বাড়েনি। সালেহউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও গভীরভাবে দেখা উচিত যে পণ্যগুলো ঠিকভাবে আসছে কি না। এখন দেখার সময় যে, কোনো কাজে মেশিন আনা হচ্ছে নাকি মেশিন আমদানির নামে ওভার ইনভয়েসিং করে টাকা পাচার করা হচ্ছে।
"গত বছর আমদানি প্রায় ৩৫% বেড়েছে কিন্তু এর ফলে শিল্পের উৎপাদনশীলতা বেড়েছে এমন কোনো লক্ষণ নেই। এর মাধ্যমে প্রচুর অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। উৎপাদন বাড়াতে হলে সংশ্লিষ্ট আমদানি বাড়াতে হবে। অন্যথায় মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে," যোগ করেন তিনি।
এদিকে, সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার ৯.১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম জানিয়েছেন, আমদানি কমলেও ডলার সংকট সাত মাসেও শেষ হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত অর্থবছরে ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। যদিও এই অর্থবছরে ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে এটি পরিমিত ছিল, তবে এটি এখন পর্যন্ত সরকারি আমদানির জন্য ব্যাংকগুলোতে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ডলার সংকট চলছে। এ অবস্থায় অনেক বিদেশি ব্যাংক বাংলাদেশি ব্যাংকে তাদের ঋণসীমা বা ক্রেডিট লাইন কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক আমদানি দায় পরিশোধে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে আমদানি অর্থায়নে আগ্রহ বাড়াতে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ১০টি বিদেশি ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংক থেকে দেশীয় ব্যাংকগুলোতে ঋণ পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, সেপ্টেম্বরে অনেক বিদেশি ব্যাংকের ঋণ আগের মাসের তুলনায় কমেছে। দেশে গত তিন মাসে আমদানি কম হলেও, মূলত রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ৪.৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়াও, আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে দেশের রপ্তানি ৬.২৪% কমেছে এবং রেমিট্যান্স ২৫% কমে ১.৫৪ বিলিয়ন ডলার হয়েছে যা সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।