ছাত্রলীগের কাছে অসহায় চবি প্রশাসন
রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় শাখা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের নেতৃত্বাধীন সিএফসি গ্রুপের কর্মীরা প্রথম আলোর প্রতিনিধি ও সাংবাদিক সমিতির সদস্য মোশাররফ শাহ্কে মারধর করার পাশাপাশি ‘আর নিউজ করিস, তারপর দেখব কে বাঁচাতে আসে- বলে হুমকিও দেয়।
প্রথম নিউজ, চবি: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আবারো এক সাংবাদিককে মারধর করে আহত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি)-এর নেতাকর্মীরা। রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় শাখা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের নেতৃত্বাধীন সিএফসি গ্রুপের কর্মীরা প্রথম আলোর প্রতিনিধি ও সাংবাদিক সমিতির সদস্য মোশাররফ শাহ্কে মারধর করার পাশাপাশি ‘আর নিউজ করিস, তারপর দেখব কে বাঁচাতে আসে- বলে হুমকিও দেয়।
চলতি বছরে ৪ সাংবাদিক মারধর ও হেনস্তার শিকার: চলতি বছরে এ নিয়ে ৪ বার সাংবাদিক মারধর ও হেনস্তার ঘটনা ঘটায় ছাত্রলীগ। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সমকাল প্রতিনিধি, আরটিভি’র ভিডিও জার্নালিস্ট এমরাউল কায়েস মিঠু, ঢাকা স্টেট পত্রিকার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি এবং সর্বশেষ সংবাদ প্রকাশের জেরে প্রথম আলোর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি মোশাররফ শাহ্কে মারধর ও হেনস্তা করে ছাত্রলীগের কর্মীরা।
গত ৫ বছরে দেড় শতাধিক বার সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছে আনুমানিক ১ হাজার: তুচ্ছ ঘটনা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষে জড়াচ্ছে নেতাকর্মীরা। ২০২২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ বার সংঘর্ষ হয় উপগ্রুপগুলোর মধ্যে। এতে অন্তত আহত হয়েছে ২শ’ ৫০জন কর্মী। হেনস্তা থেকে বাদ পড়েনি প্রধান প্রকৌশলী, শিক্ষকপ্রার্থীরাও: গত ২৮ আগস্ট চবি’র ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলীকে মারধর এবং ভারপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তার কাছে চাঁদা দাবিসহ তাকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক রাজু মুন্সীর বিরুদ্ধে। এছাড়া জানুয়ারিতে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিতে আসা এক প্রার্থীকে শিবিরের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ তুলে মারধরের অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।
ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার মান: সংঘর্ষ, ভাঙচুরের ঘটনার প্রভাব পড়ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, সংঘর্ষের সময় আমরা আতঙ্কে থাকি। কারণ সে সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, রাস্তা বন্ধ করে দেয়, প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এতে করে খারাপ লাগা কাজ করে। যা পড়াশোনায় প্রভাব ফেলে।
কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা: এদিকে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর রোববার চবি শাখা ছাত্রলীগকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটি বিলুপ্তির পর আনন্দ মিছিল করতে দেখা যায় উপগ্রুপগুলোকে।
বিচার হয়নি কোনো ঘটনার: সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিকাণ্ডের মতো ন্যক্কারজনক কোনো ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করেননি কর্তৃপক্ষ। এতে করে অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রশাসনের অদক্ষতার বলেই এমনটা হচ্ছে বলে মনে করেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩ এর অধ্যাদেশকে সমুন্নত রেখে আইনের শাসন এবং নীতি নৈতিকতা মেনে প্রশাসন পরিচালনা করতে হয়। কিন্তু এই প্রশাসনের আগ্রহের জায়গা হচ্ছে নিয়োগ বাণিজ্য এবং ব্যক্তিগত সুবিধা আদায় করা। নিয়োগ কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন সুবিধাভোগ করতে করতে প্রশাসনের ইমেজ তলানিতে পৌঁছে দিয়েছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের যে একটা প্রশাসন আছে তা কেউ অনুভব করে না। এভাবে একটা বিশ্ববিদ্যালয় চলে না। প্রথম আলোর প্রতিনিধিকে মারধর কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর আগেও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যার বিচার হয়নি। বিচারহীনতার সংস্কৃতির দরুন এখানে এতো এতো অব্যবস্থাপনা রয়েছে, প্রশাসনের কোনো ভাবমূর্তি নেই। ডিসিপ্লিনারি কমিটি ঘটনাগুলোর বিচার করে শাস্তি দেয় আবার ছাত্রলীগ ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করে দেয়, নতজানু নীতি ফলো করে শাস্তি কার্যকর অর্থাৎ যে লাউ সে কদু। এসব বিচার করার জন্য করা, কার্যত কিছুই না।
এদিকে বারবার সাংবাদিকের উপর হামলাকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খ. আলী আর রাজী। তিনি বলেন, এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে যেমন বাধা তেমনি গণতন্ত্রের জন্যও বড় ধরনের বাধা। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলতে হলে দেশে গণতন্ত্র বলে কিছু থাকবে না। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে ফলাফল আরও ভয়াবহ হবে বলে মনে করেন তিনি।