চড়া মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির জন্য বড় আতঙ্কের
মূল্যস্ফীতি এখন কেবল সাধারণ মানুষের কাছেই নয়; বরং পুরো অর্থনীতির জন্য হয়ে উঠেছে বড় আতঙ্কের।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: চড়া মূল্যস্ফীতির সীমাহীন অস্বস্তি নিয়ে শেষ হলো আরও একটি অর্থবছর। বিবিএসের হিসাবে, জুনে এই হার সামান্য কমলেও, অর্থবছর শেষে গড় দাঁড়িয়েছে পৌনে দশ শতাংশে। যেখানে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে খাদ্যপণ্য। এমন অবস্থায় নতুন অর্থবছরে এই হার সাড়ে ছয়ে নামিয়ে আনতে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা।
মূল্যস্ফীতি এখন কেবল সাধারণ মানুষের কাছেই নয়; বরং পুরো অর্থনীতির জন্য হয়ে উঠেছে বড় আতঙ্কের। প্রায় দুই বছর ধরে চলা এই সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা, নতুন করে গরিব বানিয়েছে বড় একটা জনগোষ্ঠীকে। অন্যদিকে, খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতেও, নিত্য-নতুন উপায় খুঁজেছেন অনেকে। সেই অস্বস্তিতেই পার হলো আরও একটি অর্থবছর।
বিবিএসের হিসাবে, ২০২৩-২৪ এর জুলাইয়ে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশে শুরু হওয়া মূল্যস্ফীতি জুনে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৭২ শতাংশে। ফলে, ১২ মাসের গড় উঠে যায় পৌনে দশের কাছাকাছি। অথচ, সরকার তা নামাতে চেয়েছিল সাড়ে ছয় শতাংশে। তবে, এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়েছে খাদ্যপণ্য কিনতে। বছর ব্যবধানে যা বাড়ে সাড়ে দশ শতাংশের ওপরে। যদিও খাদ্য বহির্ভূত পণ্য বা সেবায় এই খরচ বৃদ্ধির প্রবণতা ছিল সামান্য কম।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা যদি দেখি মাছের দাম, ডিমের দাম, রসুন-পেঁয়াজের দাম, সেটা কিন্তু গড় মূল্যাস্ফীতি থেকে বেশি। সুতরাং সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার নিরীক্ষে যদি আমি মূল্যাস্ফীতিকে দেখি, সেটা কিন্তু এই যে উপাত্ত এটা থেকেও কিন্তু সেটার যে নেতিবাচক প্রভাব তা সাধারণ মানুষের উপর বেশি পড়ছে।
দেশে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয় ২০২২ সালের আগস্টে। আন্তর্জাতিক বাজার আর টাকার অবমূল্যায়নের অজুহাতে, মাসের ব্যবধানে দুই শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৯ এর ঘরে। এরপর বাজার নজরদারি কিংবা মুদ্রানীতির পরিবর্তন- কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসেনি এই সূচক। এমন অবস্থায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই হার কীভাবে সাড়ে ছয় শতাংশে নেমে আসবে- সেই প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের।
তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি একটা রেঞ্জের মধ্যে যদি থাকে যে, ৩ থেকে ৫ শতাংশ, সেটা সহনীয়। কিন্তু এরকম যখন মূল্যস্ফীতি হয় এটা কেবলমাত্র ভোক্তা কল্যাণে না, এটা উৎপাদন, বিনিয়োগ তার উপরেও একটা নীতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে এবং সেটা পরবর্তীতে আমাদের যে জিডিপির প্রবৃদ্ধি তার উপরেও সেটার একটা প্রভাব পড়বে। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ শতাংশের ওপরে। অথচ, সেবছরও সরকার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল সাড়ে পাঁচের কিছু বেশি।