চার রোহিঙ্গা শরণার্থী পেল ইউএনএইচসিআর ন্যানসেন রিফিউজি অ্যাওয়ার্ড

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটি জানায়, বিজয়ী চারজন হলেন- আবদুল্লাহ হাবিব, সাহাত জিয়া হিরো, সেলিম খান ও শাহিদা উইন। 

চার রোহিঙ্গা শরণার্থী পেল ইউএনএইচসিআর ন্যানসেন রিফিউজি অ্যাওয়ার্ড

প্রথম নিউজ, ঢাকা: কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত চারজন রোহিঙ্গাকে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে যৌথভাবে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা-ইউএনএইচসিআর ন্যানসেন রিফিউজি অ্যাওয়ার্ড-এর আঞ্চলিক বিজয়ী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
 
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটি জানায়, বিজয়ী চারজন হলেন- আবদুল্লাহ হাবিব, সাহাত জিয়া হিরো, সেলিম খান ও শাহিদা উইন। 

বুধবার জেনেভাতে চলমান বৈশ্বিক শরণার্থী সম্মেলন গ্লোবাল রিফিউজি ফোরামে এক অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

বিজয়ীদের মধ্যে একজনের জন্ম কুতুপালং ক্যাম্পে শরণার্থী হিসেবে, আর বাকি তিনজন ২০১৭ সালে নিরাপত্তা ও আশ্রয়ের খোঁজে নিজ দেশ থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন। তারা নিজ জনগোষ্ঠীর মানুষের দারুণ সব গল্প খুঁজে বের করেন এবং স্মার্টফোন ও ক্যামেরার মাধ্যমে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরেন।

শরণার্থী জীবনের একেবারে কাছ থেকে নেওয়া এই মানবিক চিত্রের মাধ্যমে আবদুল্লাহ হাবিব, সাহাত জিয়া হিরো, সেলিম খান ও শাহিদা উইন রোহিঙ্গাদের চোখে রোহিঙ্গাদের জীবন দেখার এক সুযোগ এনে দেন বিশ্বের কাছে। বিজয়ী সেলিম বলেন, আমার লেন্সে আমি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শক্তি ও সাহসের চিত্র তুলে আনি সারা বিশ্বের কাছে।

জিয়া বলেন, আমরা চাই না যে আমাদের কথা বিশ্ব ভুলে যাক। আমি চাই দুনিয়ার মানুষ যেন রোহিঙ্গাদের আর দশটা মানুষের মত ভাবে।  আবদুল্লাহ বলেন, এই গল্পগুলোর মাধ্যমে আমরা রোহিঙ্গাদের আওয়াজ তুলে ধরার চেষ্টা করি। বিশ্বের সঙ্গে একটি সেতুবন্ধনের চেষ্টা করি।

শাহিদা বলেন, আমার সমাজে রোহিঙ্গা নারীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। আমি তাদের হয়ে কথা বলতে চাই। তাদের জীবন তুলে আনতে চাই আমার লেন্সে, আর আমার কবিতার মাধ্যমে তাদের আবেগগুলো জানাতে চাই।

এই চারজনের ছবি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, ফটোগ্রাফি ম্যাগাজিন কিংবা প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রয়েছে তাদের হাজারো ফলোয়ার। নিজ জনগণের কন্ঠ তুলে ধরা ছাড়াও তারা বিভিন্ন কর্মশালার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেন।

বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধি সুম্বুল রিজভী বলেন, এখানে বলার মত অনেক গল্প আছে। আশার গল্প, ভালোবাসার গল্প, হারানোর গল্প, আর মিয়ানমারে নিজ বাড়িতে ফেরার আকুতির গল্প। এই চারজন শিল্পীর অসাধারণ ছবিগুলো সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে এমন সব অভূতপূর্ব কাহিনী নিয়ে আসে যা ক্যাম্পের বাইরে দেখা যায় না। তাদের লক্ষ্য বাংলাদেশে থাকা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জীবনে পরিবর্তন আনা।

প্রসঙ্গত, শরণার্থী আভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ও রাষ্ট্রহীন মানুষদের সুরক্ষায় অসাধারণ অবদান রাখা ব্যক্তি, দল ও সংস্থাদের ১৯৫৪ সাল থেকে ইউএনএইচসিআর-এর ন্যানসেন পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৬০-এরও বেশি ব্যক্তি, দল ও সংস্থা নিজ ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হওয়া মানুষদের জন্য অনন্য সেবা ও অতুলনীয় কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ এই পুরস্কার পেয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে মানবিক প্রচেষ্টার কারণে আঞ্চলিক বিজয়ীদেরও এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।