ঘুষ না দেওয়ায় মিলছে না বিদ্যুৎ সংযোগ
অথচ ২০১৮ সালে এই উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়ন উপজেলা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
প্রথম নিউজ, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ঘুষ না দেওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে চরাঞ্চলের দেড় শতাধিক গ্রাহক। উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নে ৩৯ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণপূর্বক ২৭ কিলোমিটার এলাকায় সংযোগ দেওয়া হলেও পরিদর্শককে টাকা না দেওয়ায় বাকি ১২ কিলোমিটার এলাকায় সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। অথচ ২০১৮ সালে এই উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়ন উপজেলা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুন মাসে চিলমারী উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়ন উপজেলা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণার পর উপজেলার চরাঞ্চল চিলমারী ইউনিয়নকে বিদ্যুতের আওতায় নেওয়ার লক্ষ্যে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে রমনা মডেল ইউনিয়নের জোড়গাছ ঘাট এলাকা থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশ দিয়ে ৫ কি.মি পথে ব্যয়বহুল সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হয়। ক্যাবল স্থাপনের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন দুর্গম চরাঞ্চল চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতী, বৈলমন্দিয়ার খাতা, কড়াই বরিশাল, ঢুষমারা, গাজীরপাড়া, বিশার পাড়া, আমতলা, ছালিপাড়া, যুগ্নিদহ, মানুষমারা ও আঠারোপাখি গ্রামের ৩৯ কি.মি. লাইন নির্মাণ করে পল্লী বিদ্যুৎ। নির্মিত ৩৯ কি.মি. লাইনের মধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ চিলমারী জোনাল অফিসের পূর্ববর্তী ডিজিএম এর সময়ে ২৭ কি.মি এলাকায় ২ হাজার ২০০ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। বিদ্যুতের এসটি তার টানানো, সার্ভিস তার লাগানো ও বাড়ি ওয়ারিং করা হলেও পরিদর্শককে উৎকোচের অর্থ না দেওয়ায় এখন পর্যন্ত বাকি ১২ কি.মি. এলাকায় মিটার সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে চিলমারী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আমতলা এলাকায় ২২টি বাড়ি, মানুষমারারচর এলাকায় ৩৮টি বাড়ি, আঠারো পাখি এলাকায় ৩৫টি বাড়ি ও যুগ্নিদহ এলাকায় ৪৫টি বাড়ি মিলে মোট ১৪০টি বাড়িতে বিদ্যুতের ওয়ারিং করা হয়েছে কিন্তু মিটার সংযোগ দেওয়া হয়নি। ওই সমস্ত বাড়িতে ১ বছর আগে এসটি তার ও সার্ভিস তার প্রদান করা হয়েছে এবং বাড়িগুলো ওয়ারিং করে তাদের জন্য ৬টি ট্রান্সফরমার বরাদ্দ করে এলাকায় প্রদান করা হয়েছে। টাকা-পয়সা খরচ করে এতসব কাজ করেও অজানা কারণে দীর্ঘদিন পরেও তাদের মিটার প্রদান করা হয়নি। মানুষমারারচর এলাকায় এহসানুল হক ও মোন্নাফ আলী ব্যাপারীর নামে দুইটি সেচের লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে কিন্তু বিদ্যুতের সংযোগ না দেওয়ায় তারা কৃষি জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না।
এ সময় মানুষমারারচর এলাকার কয়েকবজন বাসিন্দা জানান, বিদ্যুতের লাইন নির্মাণ হওয়ায় তারা গরু মোটা-তাজা করনের প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। সে মোতাবেক তারা গরুও কিনেছিলেন। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় তারা গরু নিয়ে বিপাকে পড়েন। বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় অতিরিক্ত গরমে গরু অসুস্থ হয়ে যাওয়া এবং চুরি-ডাকাতির ভয়ে কম মূল্যে দুইটি গরু বিক্রি করেছেন বলেন জানান নওশাদ আলী নামের এক খামারী।
একই এলাকার মো. এহসানুল হক জানান, বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য তারা কয়েক দফায় বর্তমান ডিজিএম এর নিকট গেলে তিনি পরিদর্শক লুৎফর রহমানকে পরিদর্শন পূর্বক প্রতিবেদন প্রদান করতে বলেন। তিনি আরও জানান, ওয়ারিং পরিদর্শক লুৎফর রহমান এলাকা পরিদর্শনে এসে বিভিন্ন ত্রুটি বের করেন এবং তার সহযোগী সাহেব আলীর মাধ্যমে মিটার প্রতি ১ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন। টাকা দিলে দুই দিনেই মিটার সংযোগ দেওয়ার কথা বলেন তারা।
তাজুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, সহজে বিদ্যুতের সংযোগ পেতে টাকা উত্তোলন করে তৎকালীন সহকারী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মোক্তারুলকে ১৬ হাজার টাকা দিয়েছি। তিনি বদলি হয়ে যাওয়ায় কাজ ও টাকা কোনটিই পাচ্ছি না।অভিযুক্ত পল্লী বিদ্যুৎ ওয়ারিং পরিদর্শক মো. লুৎফর রহমান উৎকোচের কথা অস্বীকার করে জানান, তিনি কারো কাছে টাকা-পয়সা চাননি। ওই এলাকায় বাড়ি ওয়ারিংয়ের কথা তার জানা নেই বলেও জানান তিনি।
তৎকালীন সহকারী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মোক্তারুল ইসলাম বলেন, আমি কোনো টাকা নেইনি। আমি ওই এলাকার গ্রাহকের বিদ্যুৎ প্রদানের জন্য সহযোগিতা করেছি মাত্র। এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুত সমিতির চিলমারী জোনাল অফিসের ডিজিএম প্রকৌশলী মো.মোস্তফা কামাল বলেন, ওই এলাকাগুলোতে ওয়ারিং সম্পন্ন না হওয়ায় সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না।