গোয়াইনঘাটে ক্লুলেস হত্যার ঘটনা উদ্‌ঘাটিত, গ্রেপ্তার ৪

গোয়াইনঘাটে ক্লুলেস হত্যার ঘটনা উদ্‌ঘাটিত, গ্রেপ্তার ৪
গোয়াইনঘাটে ক্লুলেস হত্যার ঘটনা উদ্‌ঘাটিত, গ্রেপ্তার ৪

প্রথম নিউজ, সিলেট: সিলেটের গোয়াইনঘাটের চাঞ্চল্যকর পাগল মহিলা হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে পুলিশ। ঘটনার মূলহোতাসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ। জেলহাজতে থাকা আটক আসামিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূলহোতা সেবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটক সেবুল উপজেলার ১০নং পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়নের বুধিগাঁও হাওর গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে। অপরাপর আটককৃতরা হলো- পশ্চিম নলজুরী গ্রামের সেনু মিয়ার ছেলে ইউসুফ, মুজিবনগর গ্রামের জলিল মিয়ার ছেলে জব্বার মিয়া, একই গ্রামের বারেক মিয়ার ছেলে বাচ্চু মিয়া। এদের মধ্য আসামি বাচ্চু মিয়া ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। অপর দুইজনও পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়- আটক বাচ্চু মিয়া, জব্বার মিয়া এবং সেবুল মিয়া নিয়মিত ইয়াবা সেবন করতো এবং মাঝে মধ্যে ভারতীয় খাসিয়াদের বাগান থেকে পান-সুপারি চুরি করতো। এ ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় ছিঁচকে চুরিরও অভিযোগ রয়েছে।

 গত ১১ই ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে বাচ্চু মিয়া, জব্বার মিয়া এবং সেবুল মিয়া জব্বারের ঘরে বসে একইসঙ্গে ইয়াবা সেবন করে। ইয়াবা সেবনের একপর্যায়ে তারা ৩ জন মিলে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীকে ধর্ষণ করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাচ্চু, জব্বার ও সেবুল কেক, বিস্কুট এবং কোমল পানীয়র লোভ দেখিয়ে তামাবিল পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন বাজার থেকে অজ্ঞাত মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীকে একটি টিলায় নিয়ে যায়। সেখানে তারা ৩ জন মিলে নারীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী বাধা দিলে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে লাঠি ও পাথর দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে স্থানীয়রা মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞাত ওই নারীর বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) শেখ মো. সেলিম, গোয়াইনঘাট সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ এবং গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে. এম. নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

একইসঙ্গে সিআইডি ও পিবিআই’র ফরেনসিক টিম অজ্ঞাতনামা নারীর পরিচয় শনাক্তের জন্য মরদেহের ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ঘটনার আলামত সংগ্রহ করে। এ ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানার এস আই জহিরুল ইসলাম খান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ১২ই ডিসেম্বর থানায় মামলা করেন। সিলেটের পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুনের দিক-নির্দেশনায় ক্লুলেস এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই এমরুল কবির এক সপ্তাহের মধ্যে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত এবং আটক করেন। এদের মধ্যে জব্বার মিয়াকে ১৫ই ডিসেম্বর, বাচ্চু মিয়াকে ১৮ই ডিসেম্বর আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে এবং সেবুল মিয়াকে ১৯শে ডিসেম্বর রাতে আটক করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যমতে ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি পাথরের খণ্ড ও অজ্ঞাত মহিলার পরিহিত কাপড়-চোপড় এবং ব্যবহৃত কম্বলের পোড়া অংশ বিশেষ উদ্ধার করা হয়েছে।

 গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে. এম. নজরুল বলেন, সিলেটের পুলিশ সুপার মহোদয়ের সঠিক দিক-নির্দেশনায় ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডটির রহস্য উদ্‌ঘাটন এবং ঘটনায় জড়িত ৩ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে কিনা এ বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom