Ad0111

গুম-হুকুমের প্রধান আসামি গণভবনে: রিজভী

তিনি বলেন, ‘বিগত একযুগের বেশি সময় ধরে বিনা ভোটের অবৈধ সরকার গুম, খুন, অপহরণকে তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার রক্ষা- কবজে পরিনত করেছে।

গুম-হুকুমের প্রধান আসামি গণভবনে: রিজভী
বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

প্রথম নিউজ, ঢাকা: দেশের প্রতিটি শোকার্ত মানুষের ধারণা প্রতিটি গুম-হুকুমের প্রধান আসামি গণভবনে বসে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘বিগত একযুগের বেশি সময় ধরে বিনা ভোটের অবৈধ সরকার গুম, খুন, অপহরণকে তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার রক্ষা- কবজে পরিনত করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাব বাহিনী ও ৭ র‌্যাব-পুলিশ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর চাপে পিছু হটায় গুম-খুনের আতঙ্কে থাকা পরিবারগুলোতে কিছুটা হলেও স্বস্তি নেমে এসেছিল। কিন্তু ইদানীং আবারো পুরানো পৈশাচিক চেহারায় ফিরে এসে গুমের মতো ভয়াবহ অপরাধ শুরু করেছে সরকার।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘আগে শুধু শেখ হাসিনার  ব্যক্তিগত বাহিনী রূপে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে র‌্যাপিড এ্যকশন ব্যাটেলিয়ান-র‌্যাবকে। এদেরকে নিয়োজিত করা হয়েছে পৃথিবীর জঘন্যতম এই অপরাধ সংগঠনে। এরপরে রাষ্ট্রিয় আরেকটি বাহিনী গোয়েন্দা পুলিশ ও পুলিশকেও গুম-অপহরণ-বন্দুকযুদ্ধে নামানো হয় গোটা দেশে। এখন সিআইডিকেও গুম-অপহরণে নামানো হয়েছে। এহেন পৈশাচিকতায় তাদের সাজানো গল্প একই থাকে, প্রথমে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া, অতঃপর কখনো অনন্তকালের জন্য অর্ন্তধান-নিখোঁজ, কখনো অস্ত্র উদ্ধারের নামে ক্রসফায়ারের হত্যা আবার কখনো রাস্তার ধারে অথবা ডোবা নালা বা নদীতে লাশ পাওয়ার রোমহর্ষক নাৎসীয় বর্বরতা। অনাচার দুঃশাসন, লুটপাট, টাকা পাচার আর মেগা দুর্নীতির স্ফীতিতে বহমান রয়েছে ক্ষমতাসীনদের পরিবারবর্গ।

ইতিমধ্যে জাতিসংঘ থেকে গুম হওয়া সম্পর্কে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ পর্যালোচনা করে জরুরি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। 

তিনি বলেন, ‘দুরাচার অবৈধ সরকারকে আতঙ্ক ঘিরে ফেলেছে। স্বয়ংক্রিয় ভোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুম-খুন নিয়ে প্রলাপ বকছেন। আলটপকা কথা বলায় পারঙ্গম পররাষ্ট্র মন্ত্রী দায়িত্ব এড়ানোর জন্য ‘ভূমধ্যসাগরে সলিলসমাধি’ তত্ত্ব হাজির করে গুম খুনের শিকার পরিবারগুলোর সাথে নির্দয় নির্লজ্জভাবে উপহাস-পরিহাস করছেন। ইতিমধ্য গুম-খুন-অপহরণের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্যবসা- বানিজ্য আমদানি-রফতানিতে বিরূপ প্রভাব পড়া শুরু করেছে। 

ক্ষন গণনা চলছে নিশিরাতের সরকারের বিদায়ের এমন মন্তব্য করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আওয়ামী দুঃশাসনের ভয়ংকর শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেতে দেশবাসীর আসন্ন দুর্বার আন্দোলনের আশংকায় সরকার ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। তবে সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই সরকার এই মুহূর্তে পদত্যাগ না করলে মিটিং-মিছিল-স্লোগান প্রতিরোধে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠবে বাংলাদেশ।

রিজভী সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমরা সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, গুম-অপহরণ-দুঃশাসন চালিয়ে যেভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন তার পরিণতি হবে ভয়ংকর। সেদিন বেশী দূরে নয় যে দিন গুম-খুন অপহরণের শিকার পরিবারগুলোর শোকার্তরা কাফনের কাপড় পরে স্বজনদের খোঁজে গণভবনের দিকে রওনা দিবে। দেশের প্রতিটি শোকার্ত মানুষের ধারণা প্রতিটি গুমের হুকুমের প্রধান আসামি বসে আছেন গণভবনে। গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ গণতন্ত্র হত্যার বিচার এদেশেই হবে। কারণ এদের জন্য মানবতা ভয়ঙ্কর ঝুঁকির মধ্যে পরেছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশকে ঘিরে ধরেছে অদ্ভুত এক রহস্যময় আঁধার। রাস্ট্র ও সরকারে কোথায় কি হচ্ছে সব কিছুতেই অস্পষ্টতা-রহস্যময়তা। জার্মানিতে কাঁথা বালিশ চাদরের ফ্যাক্টরি পরিদর্শনের নামে পুলিশ প্রধানসহ তিন কর্মকর্তার সফর সংক্রান্ত সরকারি আদেশ গত ৭ ফেব্রুয়ারি জারি হয়। 

তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছিল, বালিশের কাভারসহ ডাবল সাইজের এক লাখ পিস বিছানার চাদরের শিপমেন্ট নিশ্চিত করতে এই তিন কর্মকর্তা ৯ দিনের জন্য জার্মানি যাচ্ছেন। পাশাপাশি তারা ফ্যাক্টরি একসেপ্টেন্স টেস্টেও (এফএটি) অংশ নেবেন। এ নিয়ে চরম বিতর্ক দেখা দেয়ায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে আরেকটি প্রেসনোট দিয়ে বলা হয়েছিল এনিয়ে বিভ্রান্তি কিছু নেই। যা হয়েছে নিয়ম মাফিক হয়েছে। ছিল শুধু কিছু জিওতে শব্দগত ভুলের কারণে বিভ্রান্তির সৃষ্টি। 

রিজভী বলেন, ‘১২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বাক্ষরত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ তিন সদস্যের জার্মানি সফর নিয়ে বিভ্রান্তি ও প্রপাগান্ডা ছড়ানো হলেও মূলত চাদর ও বালিশের কাভার নেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ থেকেই। তবে এসব প্রস্ততের জন্য রঙ আসবে জার্মানির একটি কোম্পানি থেকে। কার্যত ওই রঙয়ের গুণগত মান দেখতেই জার্মানি যাচ্ছেন আইজিপিসহ ওই তিন সদস্য। প্রচন্ড সমালোচনা ও চাপের মুখে গতকাল মঙ্গলবার দেখলাম পুলিশ সদর দফতর থেকে আবারো বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছে কাঁথা বালিশ চাদর কেনার ইস্যু নিয়ে পুলিশ প্রধানকে ঘিরে যা কিছু বলা হচ্ছে সবই ‘বানোয়াট বিভ্রান্তিকর’। 

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘জার্মানি বিছানার চাদর উৎপাদন ও রপ্তানিকারক কোনো দেশ নয়, তারা ভারী শিল্পের দেশ। সঙ্গত কারণে আইজিপির চাদর, বালিশের কাভার ক্রয়ের জন্য জার্মানি গমণের কোনো অবকাশ নেই। ‘এখন জনমনে প্রশ্ন-তাহলে ৭ ফেব্রুয়ারি সুনিশ্চিত ভঙ্গিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে কাঁথা বালিশ ফ্যাক্টরি পরিদর্শনের যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল তা-কি ভুল ছিল? এটা কি এখন প্রত্যাহার করা হয়েছে? আইজিপির নাম কি ভুলে দেয়া হয়েছে? নাকি তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা ছিল? বড় প্রশ্নটি হচ্ছে রাষ্ট্র-সরকারের অভ্যন্তরে হচ্ছেটা কি? সরকারের নাটাই কার হাতে?

অল্প কিছুদিন আগে সিরাজগঞ্জ সদর থানার যুবদল নেতা নিহত আকবর আলীর পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে দাবি করে আরও বলেন, ‘হত্যার আসামিরা জামিন পেয়ে এলাকায় গিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে এবং নিহত আকবর আলীর আত্মীয়-স্বজনদের দোকানপাটে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে অথচ পুলিশ উপস্থিত থাকলেও নির্বিকার থেকেছে। এহেন পরিস্থিতে নিহতের পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আওয়ামী লীগাররা ছাড়া এদেশে আর কারো কোনো নিরাপত্তা নেই। উল্লিখিত ঘটনা এই সরকারের নির্দয় মনোবৃত্তির সার কথা, এটাই আওয়ামী শাসনের নমুনা।  

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, সহ-দফতর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news