গোপন কারাগারে শিশুদেরও আটক রেখেছিলেন ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা

গোপন কারাগারে শিশুদেরও আটক রেখেছিলেন ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: শত শত বন্দির সঙ্গে দুগ্ধপোষ্য শিশুদেরকেও গোপন বন্দিশালায় রেখেছিলেন ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার শাসনামলে জোরপূর্বক গুমের তদন্তকারীদের এক রিপোর্টে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট কমিশন। এ খবর দিয়ে তুর্কি বার্তা সংস্থা টিআরটি ওয়ার্ল্ড বলছে, অন্তত অর্ধ ডজন শিশু তাদের মায়েদের সঙ্গে হাসিনার গোপন কারাগারের অন্ধকারে মাস কাটিয়েছে বলে উঠে এসেছে তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়েছে, ওই মায়েদের জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় তাদের দুগ্ধপোষ্য শিশুদের জোরপূর্বক দুধ পান থেকে বিরত রাখা হয়। আটক সেসকল নারীদের ব্ল্যাকমেইল করতেই এমন ভয়াবহ মানসিক নির্যাতন চালিয়েছে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার বিশেষ বাহিনী। 

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তিনি বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন। ছাত্রজনতার আন্দোলন চলাকালে জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইতোমধ্যেই হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ইতিমধ্যেই হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং শত শত মানুষকে বেআইনিভাবে অপহরণ ও গুম করে গোপন কারাগারে বন্দি করা।  

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন একাধিক যাচাইকৃত ঘটনা রয়েছে যেখানে নারীদের সঙ্গে তাদের সন্তানদেরও গুম করা হয়েছে। ২০২৩ সালেও এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে কমিশন। প্রতিবেদনে এমন একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে যেটি রীতিমতো লোমহর্ষক। এক নারীকে তার আরও দুই শিশুসহ গর্ভবতী অবস্থায় গোপন কারাগারে নিয়ে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। 

কমিশন জানিয়েছে, একজন প্রত্যক্ষদর্শী তদন্তকারীদের সেই গোপন কারাগারে নিয়ে যান। যেখানে শিশু অবস্থায় তার মায়ের সঙ্গে তাকে আটক রাখা হয়েছে। তাদের গুমের সঙ্গে বাংলাদেশের আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সংশ্লিষ্টতার কথা জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার মা এখনও ফিরে আসেননি। 

অন্য একটি ঘটনায়, এক দম্পতি এবং তাদের শিশুকে আটক করা হয়েছিল এবং জিজ্ঞাসাবাদের সময় বাবাকে চাপ দেওয়ার জন্য ‘মানসিক নির্যাতনের অংশ হিসাবে’ শিশুটিকে মায়ের দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত রাখা হয়েছিল। অবশ্য ক্ষমতায় থাকাকালীন হাসিনার সরকার জোরপূর্বক গুমের এসব ঘটনা অস্বীকার করত। সাবেক এই সরকার দাবি করেছিল, নিখোঁজদের মধ্যে কয়েকজন ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করার সময় ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা গেছেন। কমিশন বলছে, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অপহৃত প্রায় ২০০ বাংলাদেশি এখনোও নিখোঁজ রয়েছেন।