গাজীপুরে অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ, ভাংচুর

মঙ্গলবার মহানগরীর সালনায় অবস্থিত নাসিরুদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওই সড়ক অবরোধ করেন। এতে যান চলাচল ব্যহত হয়।

গাজীপুরে অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ, ভাংচুর
গাজীপুরে অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ, ভাংচুর

 প্রথম নিউজ, গাজীপুর : গাজীপুরে একটি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার মহানগরীর সালনায় অবস্থিত নাসিরুদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওই সড়ক অবরোধ করেন। এতে যান চলাচল ব্যহত হয়।  শিক্ষার্থীরা জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজমা নাসরিনের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন করবো। তিনি আমাদের সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহার করেন। কোনো শিক্ষার্থীর বেতন এক মাস বাকি থাকলে ক্লাস থেকে বের করে দেন। কোনো অভিযোগ নিয়ে গেলে সমাধান করেন না। অভিভাবকদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেন। তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গেলে মঙ্গলবার সকালে স্কুলের ভেতরে বহিরাগত মাস্তান দিয়ে আমাদের কলেজ শাখার এক বড় বোন ও বড় ভাইকে মারধর করেন। এই প্রতিবাদে সকাল ১০টার দিকে আমাদের স্কুল ও কলেজ শাখার শিক্ষার্থীরা পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেয়। 

এ ছাড়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগও রয়েছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা অধ্যক্ষের বিষয়ে অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পাইনি। এজন্য বাধ্য হয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেছি। তার বিষয়ে বা স্কুল কলেজের কোনো অভিযোগ করলেই তিনি রুমে ডেকে নিয়ে আমাদের অপমান করেন। একই দাবিতে ৬ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও ওই মহাসড়ক অবরোধ করেছিল। গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে সালনা এলাকার নাসিরুদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করেন। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে অধ্যক্ষকে কলেজ থেকে গাজীপুর থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে মহানগর, হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ গিয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সোয়া ১২টার দিকে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নিলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল ইসলাম জানান, কলেজে অধ্যক্ষের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকায় আন্দোলন চলাকালে তাকে সসম্মানে কলেজ থেকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বিকাল পৌনে ৪টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা থানা চত্বরেও অবস্থান করছে। এর আগে তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে গিয়েছিল। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজমা নাসরিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। সম্প্রতি নির্বাচনের মাধ্যমে কলেজ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তা বোর্ডে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এ অবস্থায় নির্বাচনে পরাজিত পক্ষের লোকজন ওই কমিটি নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। তারই ধারাবাহিকতায় তারা কলেজের শিক্ষার্থীদের উস্কে দিচ্ছে এবং তাদের মহাসড়কে নামিয়ে দিয়েছে।

গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি সৈয়দ মোরাদ আলী জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে। আগে থেকেই এটি চলে আসছিল। প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কাজকর্মে একটি পক্ষ খুশি নাও হতে পারেন। প্রাতিষ্ঠানিক কাজকর্ম প্রতিষ্ঠানের প্রধানকেই করতে হয়। অন্যদিকে শিক্ষকদের মধ্য থেকে একজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হওয়ার ইচ্ছে আছে বলেও আমার কাছে তথ্য রয়েছে। শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ উস্কে দিয়ে থাকতে পারে। কেননা, আন্দোলনের বিষয়ে শিক্ষার্থীরাও আমাকে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। আগে পরে কোনো খবর নেই। হঠাৎ করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ব্যাপারে কথা উঠছে তিনি আর্থিক অনিয়ম করেছেন। এটা এরকম কোনো বিষয় নয় যে, কেউ কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেই তা সত্য হয়ে যাবে। আগে থেকেই কমিটি নিয়ে যেহেতু দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। সেই ক্ষোভ এখন গিয়ে পড়েছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ওপর।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছে কমিটি সেগুলো খতিয়ে দেখবে। এর আগ পর্যন্ত অধ্যক্ষ কলেজে যাবেন না।  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক কমিটির এক সদস্য বলেন, আন্দোলনের পেছনে কয়েকজন শিক্ষকও জড়িত আছেন। অধ্যক্ষকে সরিয়ে কলেজের জ্যেষ্ঠ এক শিক্ষককে অধ্যক্ষের আসনে বসানোর পাঁয়তারা করছেন। এ কাজে শিক্ষার্থীদেরও উস্কে দিচ্ছেন তারা।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: