ক্ষুব্ধ হলেও ‘সচিবের ভয়ে’ চুপ থাকবেন ইসি কর্মকর্তারা

মন্ত্রিসভায় এনআইডির খসড়া আইন চূড়ান্ত

ক্ষুব্ধ হলেও ‘সচিবের ভয়ে’ চুপ থাকবেন ইসি কর্মকর্তারা

প্রথম নিউজ, ঢাকা: জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০২৩ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। খসড়া চূড়ান্ত হওয়ায় এখন এটি বিল আকারে জাতীয় সংসদে তোলা হবে। সংসদে পাস হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে চলে যাবে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)।

সোমবার (১২ জুন) এনআইডির খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার পর ইসির বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে নির্বাচন কমিশন সচিবের ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে এ বিষয়ে কিছু বলবেন না বলে জানান তারা। এখন দেখার বিষয় ইসির বর্তমান সচিব আমেরিকার স্যাংশনে পড়েন কি না? ভোটারদের তথ্য নষ্ট করলে স্যাংশনে পড়ার সম্ভাবনা আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক কর্মকর্তা বলেন, এর আগে এনআইডি স্থানান্তরের বিরুদ্ধে আমরা সিইসিসহ চার কমিশনারকে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম আমাদের এক কর্মকর্তাকে অন্য কারণ দেখিয়ে শোকজ করেন। সচিব সবসময়ই আমাদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং চাকরি খাওয়াসহ বদলির হুমকি দেন। তিনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় অনেক আপত্তিকর শব্দও ব্যবহার করেন।

অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, এনআইডি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের হাতে তিল তিল করে গড়া একটি প্রতিষ্ঠান। খুবই অল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে নির্বাচন কমিশন এনআইডির সেবা অব্যাহত রেখেছে। সরকারের অধীন অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠানের তুলনায় সবচেয়ে স্বচ্ছ সেবা দেয় এনআইডি। তারপরও সরকারের আমলাদের নজর এনআইডির ওপর থেকে সরেনি। তারা যেকোনো মূল্যে এটা নিয়েই ছাড়বে। আরেক কর্মকর্তা বলেন, আমরা যে জিনিসটা তৈরি করলাম, তারা সেটা নিয়ে এত কিছু করছে, অথচ আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেনি। এটা ঠিক নয়।

এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে গেলে কোন সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, 'এরা তো সবকিছু ধ্বংস করে দেবে। আমাদের সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে এরা ধ্বংস করে দেবে। একটা স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের হাতে এনআইডি আছে, এটা তাদের ভালো লাগছে না। এনআইডির সাথে ভোটার তালিকার সম্পৃক্ততা আছে। তারা এটা নিয়ে যে ভোটার তালিকা ম্যানুপুলেট করবে না তার কোনো নিশ্চয়তা আছে? সুজন সম্পাদক বলেন, 'মাঝে নির্বাচন কমিশন এটা নিয়ে আন্দোলন করেছিল, সেটি কৌশলে থামানো হয়েছে। এখন দেখার বিষয় ইসির বর্তমান সচিব আমেরিকার স্যাংশনে পড়েন কি না? ভোটারদের তথ্য নষ্ট করলে স্যাংশনে পড়ার সম্ভাবনা আছে। এই কথা আমি বিশ্বাস করি বিধায় আপনাকে বললাম। কারণ তারা সব ধ্বংস করে দিয়েছে, আদালতে রিট করেও কোনো লাভ হবে না।’

২০০৬ সাল থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি ও সরবরাহের কাজ ছিল নির্বাচন কমিশনের অধীনে। এখন এ দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগকে দিতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে আজ (সোমবার) ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এরপর এই খসড়া বিল আকারে সংসদে যাবে। সেখানে পাস হওয়ার পর ওই বিল আইনে পরিণত হবে। এই আইনের আওতায় জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে পরিচালিত হবে। তাদের এ সংক্রান্ত একটা অফিস থাকবে। অফিসে একজন নিবন্ধক থাকবেন।