কোলের শিশু নিয়ে টিসিবির লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা
প্রথম নিউজ, ঢাকা: ‘পুলিশরে তো লাইন ছাড়াই তিন-চাইর প্যাকেট দিয়া দেন, আর আমাগো বেলায়ই খালি আইন দেখান। এই মহিলা দুধের সন্তানডারে লইয়া কতক্ষণ দাঁড়াইয়া আছে। উনারে দিয়া দিলে কার এমন কী ক্ষতি অয়। রাজধানীর নিউমার্কেটের অদূরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ গবেষণা ইনস্টিউটের প্রবেশদ্বার সংলগ্ন রাস্তায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যবাহী ট্রাকের পণ্য বিক্রেতাকে উদ্দেশ্যে করে এক নারী ক্ষুব্দকণ্ঠে এ কথা বলছিলেন। এ সময় তার পাশেই সাত-আট মাসের একটি ছোট্ট শিশুকে কোলে নিয়ে টাকা হাতে বিক্রেতাকে পণ্য দিতে অনুরোধ জানাচ্ছিলেন শিশুটির মা। কিন্তু বিক্রেতার সাফ জবাব লাইন ছাড়া পণ্য বিক্রি করলে লোকজন তাকে আস্তো রাখবো না। তাই শিশুর মাকে লাইনে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেন।
এ সময় শিশুটির মা দুই একবার লাইন দাঁড়িয়ে এগোনোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে মন খারাপ করে রাস্তার এক কোনে দাঁড়িয়ে থাকেন। গতকাল সোমবার মধ্যদুপুরে জাগো নিউজের প্রতিবেদকের চোখে এমন ঘটনা ধরা পড়ে। আজ পহেলা ফাল্গুন, শুরু হয়েছে বসন্তকাল। ক্যালেন্ডারের পাতার হিসেবে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও আজ। এ দিনটিতে যখন যান্ত্রিক নগর বাসিন্দাদের অনেকেই পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে মনের আনন্দে বাসন্তি রঙের শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরিধান করে অনেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন সেই একই সময়ে রাজধানীর বিভিন্নপয়েন্টে স্বল্পআয়ের মানুষগুলো টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাকের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সোমবার এ প্রতিবেদক সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখেছেন প্রতিটি ট্রাকের সামনে নারী, পুরুষ ও শিশুদের উপচেপড়া ভিড়। ভিড় সামাল দিতে পণ্য বিক্রেতাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে পণ্য বিক্রির জন্য তারা কখনো টোকেন আবার কখনো হাতে সিরিয়াল নম্বর লিখে দিচ্ছেন। পণ্য দেওয়ার পর কোথাও কোথাও হাতে কালি দিচ্ছেন। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও কেউ পণ্য না পেয়েই ফিরে যাচ্ছেন।
ক্রেতারা জানান, বাজার মূল্যের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে পণ্য কিনতে ছুটে আসছেন তারা। টিসিবির ট্রাকে প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা, মসুর ডাল ৬৫ টাকা, সয়াবিন তেল ১১০ টাকা এবং পেঁয়াজ ৩০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এস পণ্যের বাজারমূল্য অনেক বেশি। সাহানা নামে এক নারীকে রাস্তায় টিসিবির ট্রাকের পাশে ফুটপাতে বসে চায়ে রুটি ভিজিয়ে খেতে দেখা যায়। সকাল থেকে টিসিবির ট্রাকের অপেক্ষায় নাস্তাও করতে পারেননি। সাহানার হাতে ৮ নম্বর সিরিয়ালের কাগজ। কিন্তু তিনি পণ্য পাননি।
কেন পাননি জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, তিনি অসুস্থ, এত ভিড়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি করে পণ্য কিনতে পারছেন না। টিসিবির বিক্রেতাদের অনুরোধ করলেও তারা লাইন ছাড়া পণ্য দেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছে বলে জানান সাহানা। টিসিবির বিক্রেতাদের অভিযোগ— তারা সুশৃঙ্খলভাবে সবাইকে সিরিয়াল ধরে পণ্য দেওয়ার জন্য চেষ্টা করলেও অনেকেই সিন্ডিকেট করে লাইনে লোক দাঁড় করিয়ে তিন-চারবার করে পণ্য কিনে নেন। তাদের পক্ষে সব কিছু সামাল দেওয়া সম্ভব হয় না বলে স্বীকার করেন তারা।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: