ক্রিকেটের জন্য কার্তিকেয় বাড়ি ফিরলেন ন’বছর তিন মাস পর

ক্রিকেটের জন্য ১৫ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়েছিলেন কার্তিকেয়। কারখানায় রাতের শিফটে কাজ করেছেন। অথচ প্রতিজ্ঞা ভাঙেননি ২৪ বছরের স্পিনার।

ক্রিকেটের জন্য কার্তিকেয় বাড়ি ফিরলেন ন’বছর তিন মাস পর
রঞ্জি ট্রফি নিয়ে কার্তিয়েক। ফাইল ছবি।

প্রথম নিউজ, ডেস্ক : বয়স তখন মাত্র ১৫। সেই বয়সেই বাড়ি ছেড়েছিলেন সাধনার জন্য। কুমার কার্তিকেয় সিংহের চোখে ছিল শুধু স্বপ্ন। ক্রিকেটার হওয়ার। গড়পরতা আর পাঁচ জন ভারতীয় অভিভাবকের মতোই কার্তিকেয়র বাবা-মাও চাইতেন ছেলে পড়াশোনা করুক। ভাল চাকরি করুক। তবে ক্রিকেট খেলায় তাঁরা বাধা দেননি। কিন্তু উৎসাহও দেননি। কিশোর কার্তিকেয় চাইত ক্রিকেট খেলেই বড় হতে। বাবা-মা, রাজ্য, দেশের নাম উজ্জ্বল করতে। খানিকটা বাবা-মায়ের অমতেই বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, জীবনে কিছু করতে পারলে তবেই আবার বাড়ি ফিরবেন। সেই কার্তিকেয় বাড়ি ফিরলেন ন’বছর তিন মাস পর। নেটমাধ্যমে মায়ের সঙ্গে ছবি দিয়ে কার্তিকেয় লিখেছেন, ‘আমার পরিবার এবং মায়ের সঙ্গে ন’বছর তিন মাস পর দেখা হল। এই অনুভূতি প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই।’ আইপিএলের সময়ই কার্তিকেয় বলেছিলেন, ‘‘আমি গত ন’বছর বাড়ি ফিরিনি। ২০১৩ সালে বাড়ি ছাড়ার সময় মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যত দিন না জীবনে কিছু করতে পারছি, তত দিন বাড়ি ফিরব না। মা-বাবা রোজ ফোন করেন। কিন্তু আমি নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল। আইপিএল শেষ হলে এ বার বাড়ি যাব।’’ মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলেছেন আইপিএল। মধ্যপ্রদেশের হয়ে জিতেছেন রঞ্জি ট্রফি। ক্রিকেটার হিসাবে পরিচিতি পেয়েছেন। নিজের প্রতিজ্ঞা মতো ক্রিকেটীয় সিদ্ধিলাভের পরই বাড়ি ফিরলেন কার্তিকেয়।

ফেলে আসা ন’বছর অবশ্য এরকম চকচকে নয়। নিজেকে ঘষে-মেজে চকচকে করেছেন উত্তরপ্রদেশ পুলিশের কর্মীর ছেলে। ভারতীয় ক্রিকেটে রহস্য স্পিনার হিসাবে পরিচিত কার্তিকেয়। তাঁর উঠে আসাও কম রোমাঞ্চকর নয়। ২০১৩ সালে কানপুরের বাড়ি ছেড়ে দিল্লি চলে আসেন কার্তিকেয়। সে সময় বাবা-মাকে কথা দিয়েছিলেন, তাঁর ক্রিকেটের খরচের জন্য পরিবারের উপর আর্থিক বোঝা চাপাবেন না। কথার খেলাপ করেননি কার্তিকেয়। কিশোর ক্রিকেটার ভেবেছিলেন খেলেই উপার্জন করবেন। তাঁর ভাবনার মতো সহজ ছিল না বাস্তব। রোজগারের জন্য গাজিয়াবাদের এক কারখানায় কাজ নেন কার্তিকেয়। বয়স ১৮ না হওয়ায় আইনের চোখ এড়াতে কাজ করতে হত রাতে। তাতে সুবিধাই হয় কার্তিকেয়র। সারারাত কাজ করার পর সকালে চলে যেতেন ক্রিকেট শিখতে। সর্বত্রই যেতেন হেঁটে। তাতে দিনে ২০-২৫ টাকা বাঁচানো যেত। ওইটুকু সাশ্রয়তেও হত না। দিল্লিতে থাকা, খাওয়ার খরচ যোগাতেই হিমশিম খেতেন কার্তিকেয়। খরচ সামলাতে তাই প্রথম এক বছর দুপুরে কিছু খেতেন না।

দিল্লিতে ক্রিকেট শিখতেন সঞ্জয় ভরদ্বাজের কাছে। ভাল বোলিং করার সুবাদে সঞ্জয়ের অন্যতম প্রিয় ছাত্র ছিলেন কার্তিকেয়। কিন্তু তিনিও জানতেন না ছাত্রের জীবন সংগ্রামের কথা। এক বছর পর বিষয়টি জানার পর সঞ্জয় নিজের অ্যাকাডেমিতে কার্তিয়ের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। অ্যাকাডেমির রাঁধুনির সঙ্গে এক ঘরেই থাকতেন। ক্রিকেট শেখানোর জন্য আর টাকা নিতেন না তিনি। অ্যাকাডেমির রাঁধুনি প্রথম যে দিন কার্তিয়েককে দুপুরে ভাত খেতে দিয়েছিলেন, সেদিন খেতে পারেননি কিশোর ক্রিকেটার। শুধু কেঁদেছিলেন। হাউ হাউ করে কেঁদেছিলেন। বহু দিন পর তাঁর সামনে কেউ দুপুরের খাবার দিয়েছিল সে দিন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom