Ad0111

এলপিজির দাম নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনকে মাঠে নামাতে চায় জ্বালানি বিভাগ

মাঠ পর্যায়ে বাড়তি দামে এলপিজি বিক্রি হচ্ছে।

এলপিজির দাম নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনকে মাঠে নামাতে চায় জ্বালানি বিভাগ
ফাইল ফটো

প্রথম নিউজ, ঢাকা: এলপিজির দাম নিয়ন্ত্রণে অপারগ বিইআরসিকে সহায়তা করতে জেলা প্রশাসনকে মাঠে নামাতে চায় জ্বালানি বিভাগ। জ্বালানি বিভাগের সাম্প্রতিক এক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সৌদি সিপির ওপর ভিত্তি করে প্রতিমাসে এলপিজির দাম ঘোষণা করে বিইআরসি। কিন্তু দেশের কোথাও কোথাও এই দাম কার্যকর হয় না বলে জ্বালানি বিভাগের কাছেও অভিযোগ রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।

জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, আমাদের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানানো হয়েছে, মাঠ পর্যায়ে বাড়তি দামে এলপিজি বিক্রি হচ্ছে। যদি কেউ এই দাম না মানে তাহলে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে লাভ কী? সঙ্গত কারণে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। আমরা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একইসঙ্গে এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে চিঠি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জ্বালানি সচিব।

নানা আলোচনা সমালোচনার মধ্যে বছরের মধ্যভাগে আবার গণশুনানি করে এলপিজি অপারেটরদের কিছু দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করে নতুন দাম নির্ধারণ করে দেয় বিইআরসি। তখন অনেকটা অনুরোধের সুরেই বিইআরসি চেয়ারম্যান অপারেটরদের বলেন, আপনারা এবার নিজেরা একটা ঘোষণা দিন, যাতে এই দামে এলপিজি বিক্রি হয়। কিন্তু সেই অনুরোধে অপারেটররা কোনও সাড়াই দেননি।

এলপিজির দাম নির্ধারণের সময় প্রতি মাসেই যে নির্দেশনা জারি করা হয় সেখানে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার উল্লেখ থাকে। তবে এখনও পর্যন্ত সেভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার খবর আসেনি। অর্থাৎ জেলা প্রশাসন বিষয়টি নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে দেখছেন না। সঙ্গত কারণে জ্বালানি বিভাগ থেকে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে।

এক কর্মকর্তা বলেন, জ্বালানি বিভাগ চাইলেই জেলা প্রশাসন দাম নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামবে এটাও ঠিক নয়। এ জন্য নিয়ম অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিতে হবে। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের নানা ধরনের ব্যস্ততা থাকে। এরমধ্যে নতুন কাজ কতটা করে উঠতে পারবে সেটিও একটি চিন্তার বিষয়। এ জন্য সবচাইতে ভালো হয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে দায়িত্ব দিলে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক জ্বালানি সচিব (৩০ ডিসেম্বর দায়িত্ব থেকে এলপিআরে গেছেন) আনিসুর রহমান বলেন, আমরা জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছি যাতে তারা উদ্যোগ নেয়। এ বিষয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকেও বলেছি। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ পাই, ঢাকা ও চাঁদপুরসহ আশেপাশের এলাকায় এলপিজির দাম বেশি থাকে, আর উত্তরাঞ্চলের দিকে দাম কম। কম দামে বিক্রির অভিযোগও করে এলপিজি মালিকদের সংগঠন লোয়াব। আমরা তখন তাদের বলি, দাম বেশি নিলে তো আপনারা কোনও কথা বলেন না। কিন্তু কম নিলে বলেন কেন? এ দাম নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্ব তো লোয়াব আর বিইআরসির। কিন্তু বিইআরসির সে জনবল নেই। সুতরাং লোয়াব তো দায়িত্ব নিতেই পারে।

সূত্র বলছে, দাম ঘোষণা হলেও ঘোষিত দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না বিইআরসি। এ ধরনের কোনও বিধানও নেই তাদের। আর প্রতি জেলায় তো দূরের কথা খোদ রাজধানীতে অভিযান চালানোর জন্যও তাদের লোকবল নেই।

পর পর তিনবার বাড়ানোর পর গত ২ ডিসেম্বর কমানো হয় তরলিকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ও পরিবহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত এলপিজির (অটোগ্যাস) দাম। ডিসেম্বর মাসের জন্য বেসরকারি পর্যায়ে মূসকসহ প্রতিকেজি এলপিজি ১০৯ টাকা ৪২ পয়সা থেকে কমিয়ে ১০২ টাকা ৩২ পয়সা করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ফলে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম এক হাজার ৩১৩ টাকা থেকে কমে হলো ১ হাজার ২২৮ টাকা। সিলিন্ডার প্রতি কমলো ৮৫ টাকা। যা ৩ ডিসেম্বর থেকেই কার্যকর হয়।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাসাবাড়িতে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত (রেটিকুলেটেড) এলপিজির দামও কমানো হয়। প্রতিকেজি ১০৬ টাকা ১৯ পয়সা থেকে কমিয়ে ৯৯ টাকা ০৮ পয়সা করা হয়েছে। একইভাবে অটোগ্যাসের দাম প্রতি লিটার ৬১ টাকা ১৮ টাকা থেকে কমিয়ে ৫৭ টাকা ২৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। লিটারে কমেছে প্রায় ৩ টাকা ৯৪ পয়সা। শুধু ১২ কেজির সিলিন্ডার নয়, সাড়ে ৫ কেজি থেকে শুরু করে ৪৫ কেজি পর্যন্ত সব সিলিন্ডারের দামই কমানো হয়ে ওই সময়।

রাজধানীর কাঁঠালবাগানের এক দোকানি জানান, ১২ কেজির সিলিন্ডার ১ হাজার ২২৮ টাকা দরেই তিনি বিক্রি করছেন। তবে তার পরিচিত অনেকেই অনেক সময় বাড়তি দামেও সিলিন্ডার বিক্রি করেন। যখন সিলিন্ডার কম থাকে তখন সে সুযোগটা তারা নেয়। গ্রাহক বাধ্য হয়ে বেশি দামে সিলিন্ডারর কেনেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিইআরসির সদস্য (বিদ্যুৎ) মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রতিমাসে এলপিজির দামের আদেশের সঙ্গে প্রতিবারই করণীয় বিষয়ে একটি নির্দেশনা দিয়ে থাকি আমরা। সেখানে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দামের বিষয়ে অভিযানের কথাও বলা হয়।

নির্ধারিত দাম কার্যকর হচ্ছে কিনা, তা নিয়ন্ত্রণে বিইআরসি নিজস্ব কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিইআরসির প্রবিধানমালা না থাকায় এবং জনবল না থাকায় কমিশনের পক্ষে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব নয়। আগামী সোমবার আমরা চলতি জানুয়ারি মাসের নতুন দাম ঘোষণা করবো। সে সময় আবার নির্দেশনা দেওয়া হবে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news