এডিপি বাস্তবায়নে মন্থর গতি প্রভাব পড়বে প্রবৃদ্ধিতে
আইএমইডি’র তথ্য অনুযায়ী, চার বছরের মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সবচেয়ে কম এডিপি’র বাস্তবায়ন হয়েছে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: চলমান অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাত্র ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। এটি গত চার অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সবচেয়ে কম। এ ছাড়া আলোচ্য সময়ের মধ্যে এক টাকাও খরচ করতে পারেনি বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন। পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। এতে দেশের প্রবৃদ্ধির হার কমবে। সাধারণ মানুষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে।
আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, বিগত জুলাই-ডিসেম্বর মাসে এডিপি’র মোট ৬১ হাজার ৭৩৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে দেশজ উৎস থেকে জোগান দেয়া হয়েছে ৩৪ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের ২০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বিদেশি সহায়তার খরচ হয়েছে ২৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের ২৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। আর বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আইএমইডি’র তথ্য অনুযায়ী, চার বছরের মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সবচেয়ে কম এডিপি’র বাস্তবায়ন হয়েছে।
এ সময় এডিপি বাস্তবায়নের হার হলো ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গতবার একই সময়ে এই হার ছিল ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। প্রথম ছয় মাস বিবেচনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপি’র আকার ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। আর মোট প্রকল্পের সংখ্যা হচ্ছে ১ হাজার ৩৯২।
এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কোনো টাকা খরচ করতে পারেনি বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন। প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ৩০ কোটি টাকা। এ ছাড়া একই সময়ে ১০ শতাংশের কম এডিপি বাস্তবায়ন করা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে রয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। অন্যদিকে ১৫ শতাংশের কম এডিপি বাস্তবায়ন করেছে এমন মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে রয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।
আইএমইডি’র তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিদেশি সহায়তার এক টাকাও খরচ করতে পারেনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া স্থানীয় সরকার বিভাগ ব্যয় করেছে ৩০ দশমিক ৫৭ শতাংশ টাকা। এ ছাড়া আলোচ্য সময়ে সবচেয়ে বেশি এডিপি বাস্তবায়ন করেছে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ। প্রতিষ্ঠানটির এডিপি বাস্তবায়নের হার ৯৩ দশমিক ৪২ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার প্রকল্পের ব্যয়ে লাগাম টেনেছে। এতে অনেক প্রকল্পে অর্থ ব্যয় করা যাচ্ছে না। সেই প্রভাব পড়েছে এডিপি বাস্তবায়নের ওপর।
এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মানবজমিনকে বলেন, রাজনৈতিক ও নির্বাচনের কারণে গত ৬ মাসে দেশের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ছিল। তার চেয়ে বড় বিষয় সরকারের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে দেশীয় মুদ্রা নাই। এজন্য স্থানীয় মুদ্রায় অর্থায়ন করতে পারেনি। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঘাটতি থাকার কারণে প্রকল্পের প্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি করতে পারেনি। অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সংকটের কারণেই এডিপি বাস্তবায়ন হার কম হয়েছে। তিনি বলেন, প্রকল্পে সরকার যে ব্যয় করে সেখান থেকে অনেক সময় গরিব মানুষেরা উপকৃত হয়। এখন গরিব মানুষের পক্ষে যেই সম্পদগুলো যায়, সেগুলো কম যাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার কম হবে বলেও জানান তিনি।