তাড়াশে তালাবদ্ধ ফ্ল্যাটে মা-বাবা ও মেয়ের গলাকাটা লাশ
গত সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে তালা ভেঙে কক্ষে প্রবেশ করে বাসার মালিক বিকাশ সরকার, মেয়ে পারমিতা সরকার তুষি এবং স্ত্রী স্বর্ণা সরকারের গলাকাটা লাশ শনাক্ত করে পুলিশ।
প্রথম নিউজ, সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের তাড়াশ পৌর সদরের বারোয়ারি বটতলা মহল্লার নিজ বাসায় মা-বাবা, মেয়েসহ ৩ জনকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে তালা ভেঙে কক্ষে প্রবেশ করে বাসার মালিক বিকাশ সরকার, মেয়ে পারমিতা সরকার তুষি এবং স্ত্রী স্বর্ণা সরকারের গলাকাটা লাশ শনাক্ত করে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেন তাড়াশ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নুরে আলম। গতকাল দুপুরের দিকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পাশাপাশি তিনি আরও জানান, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। যা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় হয়ে থাকতে পারে বলে পুলিশ ধারণা করছে। আর জেলার সিআইডি, ডিবি, র্যাব ও পিবিআই পুলিশের একাধিক টিম ঘটনা অনুসন্ধানে কাজ করছে।
হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিরা হলেন- তাড়াশ পৌর এলাকার শোলাপাড়া মহল্লার মৃত কালিচরণ সরকারের ছোট ছেলে বিকাশ সরকার (৪৫), বিকাশের স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার (৩৮) ও মেয়ে তাড়াশ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী পারমিতা সরকার তুষি (১৫)। অপরদিকে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এদিকে সকালে একই পরিবারের ৩ জনের হত্যাকাণ্ডের খবর জানাজানি হলে নিহতের স্বজন ও এলাকার উৎসুক জনতা ওই এলাকার বাসায় ভিড় জমান।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত শনিবার রাতে বিকাশ সরকারকে বাজারে দেখা গেছে। এরপর থেকে তাকে ও তার স্ত্রী, মেয়েকে স্বজনরা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও পাচ্ছিলেন না। পরে অনেক খোঁজাখুঁজ করেও তাদের সাড়া না পেয়ে বাসায় গিয়ে তার ফ্ল্যাটে তালাবদ্ধ দেখতে পায়। পরে সোমবার রাত আড়াইটার দিকে তারা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বন্ধ ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে ভেতরে গিয়ে তাদের জবাই করা লাশ দেখতে পান।
স্থানীয়রা জানান, তাড়াশ পৌর এলাকার শোলাপাড়া মহল্লার মৃত কালিচরণ সরকারের দুই ছেলে। বড় ছেলে প্রকাশ সরকার। তিনি এক সময়ে ঠিকাদারি করতেন। পাশাপাশি বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। আর ছোট ছেলে বিকাশ সরকার হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তাড়াশ উপজেলা শাখার কোষাধ্যক্ষ ও তাড়াশ গোপাল জিউ বিগ্রহেরও কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। তারা দুই ভাই প্রায় দুই যুগ ধরে তাড়াশ পৌর সদরের বারোয়ারী বটতলার বাসার ৩য় তলার আলাদা দু’টি ফ্ল্যাটের বসবাস করতেন। সেই সঙ্গে বাসার প্রথম ও দ্বিতীয় তলার তিনটি ফ্ল্যাটে আরও তিনজন ভাড়াটিয়া বসবাস করেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, এক সময় বিকাশ ওষুধের ব্যবসা করলেও বর্তমানে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া প্রায় ৭০-৮০ বিঘার পুকুর ও ফসলি জমি ভাগাভাগি করে তা ভোগ-দখল করে আসছেন। আর এর আয় দিয়েই তাদের জীবিকা নির্বাহ হয়ে আসছে। সেই সঙ্গে ছোট ভাই ও বড় ভাইয়ের মধ্যে তেমন বনিবনা ছিল না বলে জানা গেছে।
এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত ঘটনার বিভিন্ন আলামত সংগ্রহসহ বাসার ভাড়াটিয়া ও পরিবারের লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার প্রাথমিক ধারণা নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে অবস্থানরত উল্লাপাড়া সহকারী পুলিশ সুপার অমৃত কুমার সূত্রধর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।