ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি বিএনপিসহ ১১ রাজনৈতিক দল
ইভিএম নিয়ে আলোচনা করতে ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে তিন ভাগে ভাগ করে আমন্ত্রণ জানায় ইসি। এ ক্ষেত্রে প্রথম দফায় ১৩টি দলের বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ অংশ নেয়নি।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) শেষ সংলাপে বেশিরভাগ দল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) পক্ষে মত দিয়েছে। শেষ সংলাপে ইসির ডাকে সাড়া দিয়ে সংলাপে অংশ নেয় ১০টি দল। সংলাপে ৭টি দলই ইভিএমের পক্ষে মত দেয়।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) নির্বাচন ভবনে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এদিন ১৪টি দলকে বৈঠকে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায় ইসি। অনুপস্থিত চারটি দল হলো- সাইফুল হকের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টি, খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), অলি আহমেদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
বৈঠকে উপস্থিত দলগুলোর মধ্যে ইভিএমের পক্ষে- আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), গণতন্ত্রী পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)।
ইভিএমের বিপক্ষে থাকা দলগুলো হলো- বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ও গণফোরাম।
গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুরাইয়া বেগম বলেন, তাদের দল ইভিএম ভোট চায় না। ইভিএমের মাধ্যমে খুব সহজেই জালিয়াতি করার অনেক ম্যাকানিজম রয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী-ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া বলেন, ইভিএমের পুরো পদ্ধতিটাই আস্থাহীনতা। ইভিএম সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোট চুরির যন্ত্র।
সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের সভা প্রধান আবু লায়েন্স মুন্না বলেন, ইভিএম থেকে ইসির সরে আশা উচিত। দেশের ৮০ শতাংশ ভোটার গ্রামে বাস করে। তাদের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করার অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, ইভিএম পরিচিত করানো নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। এই মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোট করা ঠিক হবে না।
গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ড. শাহাদাত হোসেন বলেন, মেশিন যদি ঠিকঠাক থাকে মেশিন ভালো সার্ভিস দেবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট করার মত দেন। স্বল্পতা দূর করে আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে ভোট চায় তারা। বিকল্প ধারার মহাসচিব আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা অবশ্যই ইভিএম চাই। তবে প্রশ্ন হলো এই প্রযুক্তিতে ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন কি-না? সবগুলো বুথে ইভিএম ব্যবহারের সক্ষমতা আছে কি-না? সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ১৪ দল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর চায়। এ ক্ষেত্রে ইভিএমের ব্যবহার চায় তারা।
ওয়াকার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ইভিএম ব্যবহারে আমাদের কোনো আপত্তি নাই। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে ইভিএম ব্যবহারের আগে স্থানীয় নির্বাচনে ভোট করলে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব রেজাউল হক চাঁদপুরী বলেন, সবাই যেহেতু ইভিএম বিষয়ে একমত না এজন্য কমপক্ষে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ আওয়াম লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের দল চায় ইভিএমের মাধ্যমেই সংসদ নির্বাচন হোক। এ ক্ষেত্রে সকল আসনেই যন্ত্রে ভোট নেওয়ার পক্ষে।
ইভিএম নিয়ে আলোচনা করতে ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে তিন ভাগে ভাগ করে আমন্ত্রণ জানায় ইসি। এ ক্ষেত্রে প্রথম দফায় ১৩টি দলের বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ অংশ নেয়নি। এছাড়া দ্বিতীয় দফায় ১৩ টি দলের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) অংশ নেয়নি।
সব মিলিয়ে ৩৯টি দলের মধ্যে মোট ১১টি দল ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি। ২৮টি দল বৈঠকে অংশ নিয়ে তাদের মতামত জানিয়েছে। জাতীয় সংসদের সরকারি দল আওয়ামী লীগ যেমন বৈঠকে অংশ নিয়ে সকল আসনে ইভিএমের ব্যবহার চেয়েছে, তেমনি সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ইভিএম ব্যবহার না করার জন্য ইসির কাছে দাবি জানিয়েছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews