ইংলিশ মিডিয়ামে রি-অ্যাডমিশন ফি বন্ধসহ ৫ দাবি
আজ শনিবার (২৬ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্যারেন্টস ফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোয় রি-অ্যাডমিশন বা পুনরায় ভর্তিতে নেওয়া ফি আদায় বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, শিক্ষার্থী ও তাদের আবেগকে পুঁজি করে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো দিন দিন টিউশন ফি বাড়িয়ে চলছে, যা সমীচীন নয়।
আজ শনিবার (২৬ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্যারেন্টস ফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আজম খান বলেন, সন্তানদের বৈশ্বিক নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে আমরা অভিভাবকরা আমাদের নিজেদের আয়ের একটা বড় অংশ ব্যয় করি। দেশের জাতীয় কারিকুলাম ও শিক্ষার মান নিয়ে সাধারণ অভিভাবকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে সংশয় আছে। ইংরেজি মাধ্যম কারিকুলাম যেহেতু আন্তর্জাতিক মানের ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত; এসব স্কুলে আমরা আমাদের সন্তানদের পড়াচ্ছি।
আমাদের এই আবেগকে পুঁজি করে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলেগুলো দিন দিন টিউশন ফি বাড়িয়েই চলেছে। এছাড়া বছর বছর রি-অ্যাডমিশন ফি নিচ্ছে আদালতের আদেশ এবং সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে। কিছু কিছু বড় স্কুল আবার রি-অ্যাডমিশন ফি ১২ মাসের মধ্যে ভাগ করে টিউশন ফি অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দিয়েছে। বেশিরভাগ স্কুল পুনরায় ভর্তিতে ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে।
তিনি বলেন, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোয় মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। আবার কিছু কিছু স্কুলে মাসিক টিউশন ফি ৮০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর ভর্তি ফি ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। কোনো কোনো স্কুলে ভর্তি ফি ২ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। তাছাড়া কিছু কিছু স্কুল ডেভেলপমেন্ট, ইউটিলিটি, বিবিধ ফিসহ বিভিন্ন নামে অর্থ আদায় করছে। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর এই অতি বাণিজ্যিক আচরণের কারণে আমরা অভিভাhকরা দিশেহারা।
ফেরদৌস আজম খান আরও বলেন, আমাদের শিশুদের তথা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষা ও সুশিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার, অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের সমন্বিত দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, বর্তমানে অধিকাংশ ইংরেজি মাধ্যম স্কুল কর্তৃপক্ষগুলো উচ্চ আদালতের নির্দেশ অবমাননা করে, এমনকি সরকারি নির্দেশাবলীর কোনো তোয়াক্কা না করে অত্যন্ত অমানবিক ও অযৌক্তিকভাবে অভিভাবকদের বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতি দেখিয়ে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে অসামঞ্জস্যমূলক উচ্চ হারের টিউশন ফি এবং রি-অ্যাডমিশন ফি আদায়ের অপচেষ্টায় লিপ্ত।
অনেকক্ষেত্রে আমাদের সন্তানদের মানসিকভাবে হেয় করা হচ্ছে। যা আমাদের সন্তানদের সাংবিধানিক ও মৌলিক মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এছাড়া ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোয় সার্বিক শিক্ষার মানও দিন দিন কমছে। শিক্ষকরা স্কুলে না পড়িয়ে তাদের নিজেদের কোচিং সেন্টারে যেতে ছাত্র ছাত্রীদের বাধ্য করছে। এর ফলে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে ইংরেজি মাধ্যম কোচিং সেন্টার। অভিভাবকদের নির্বাহ করতে হচ্ছে স্কুল ফি এবং কোচিং ফি। এইসব দেখার মতো কেউ নেই।
এ সময় পাঁচ দফা দাবি উপস্থাপন করে বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্যারেন্টস ফোরাম। এরমধ্যে রয়েছে- ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর রি-অ্যাডমিশন ফি নেওয়া অবিলম্বে বন্ধ করা এবং মাসিক টিউশন ফি যৌক্তিকীকরণ; সরকারি নির্দেশানা মেনে ২০১৭ সালে প্রকাশিত গেজেট মোতাবেক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো পরিচালনা; সুষ্ঠু পরিচালনা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে দুজন নির্বাচিত অভিভাবক প্রতিনিধি স্কুল ম্যানেজিং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা; জাতীয় বাজেটে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা ব্যবস্থার জন্যে বরাদ্দ রাখা ও সরকারি উদ্যোগে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল স্থাপন; যাতে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর মধ্যে একটি সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা গড়ে ওঠে এবং শিক্ষার সার্বিক মান বাড়ে।
সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্যারেন্টস ফোরামের সভাপতি এ কে এম আশরাফুল হক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ জেড এম সালাউদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ মো. আলী আজম তুষার, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. নাদিয়া রুম্মান, মাহফুজা মাহবুব প্রমুখ।