আরব আমিরাত ও সৌদি সফরে যাচ্ছেন পুতিন
প্রথম নিউজ, ডেস্ক : মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দুই দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও সৌদি আরব সফরে যাচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। চলতি সপ্তাহেই তার এই সফর অনুষ্ঠিত হতে পারে।রাশিয়ার সংবাদ আউটলেটের বরাত দিয়ে সোমবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব সফর করবেন বলে সোমবার পুতিনের সহযোগী ইউরি উশাকভের বরাত দিয়ে রাশিয়ার সংবাদ আউটলেট শট জানিয়েছে।
পুতিনের এই দুই সফরের খবর এমন এক সময়ে সামনে এলো যখন গত বৃহস্পতিবার জ্বালানি তেল উৎপাদন ও রপ্তানিকারী দেশসমূহের জোট ওপেক প্লাস স্বেচ্ছায় দৈনিক তেল উৎপাদন কমাতে সম্মত হয়েছে। রাশিয়ার পাশাপাশি আমিরাত ও সৌদি আরবও ওপেক প্লাসের সদস্য।
অবশ্য স্বেচ্ছায় উৎপাদন কমানোর এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের কারণে বৈশ্বিক বাজারগুলো এই চুক্তির প্রতি সন্দেহের সাথে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তবে ওপেক প্লাসের সেই ঘোষণার পর গত সপ্তাহে তেলের দাম ২ শতাংশ কমেছে এবং সোমবার তা আরও কমে যায়।
উশাকভকে উদ্ধৃত করে রুশ সংবাদ আউটলেট শট বলেছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করবেন এবং তারপর সেখান থেকে সৌদি আরব যাবেন। সেখানে প্রধানত সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে পুতিনের আলোচনা হবে।
উশাকভ বলেছেন, ‘আমি আশা করি, সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে খুব দরকারী আলোচনা হবে, যেটিকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।’
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খুব কমই বিদেশ ভ্রমণ করেছেন এবং যেগুলোতেও গেছেন তার বেশিরভাগই আবার সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন-ভুক্ত দেশগুলোতে। আর সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দেশগুলোর বাইরে পুতিনের শেষ সফর ছিল গত অক্টোবরে চীনে।
রয়টার্স বলছে, ওপেক প্লাসে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক ছাড়াও পশ্চিমা নয় এমন দেশগুলোর সাথে বৈশ্বিক জোট গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন পুতিন। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী তিনি। আর এর মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা যে ব্যর্থ হয়েছে সেটিই দেখাতে চান পুতিন।
উল্লেখ্য, ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ করার অভিযোগে চলতি বছরের মার্চ মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। পুতিনের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, তিনি বেআইনিভাবে ইউক্রেনের শিশুদের রাশিয়াতে সরিয়ে নিয়েছেন।
আর এরপরই পুতিনের বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ সীমিত হয়ে যায়। আদালত বলছে, এই অপরাধ গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর থেকেই ঘটে চলেছে। একই অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের শিশু অধিকার বিষয়ক কমিশনার মারিয়া এলভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধেও।
মূলত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের হাতে বিচারিক ক্ষমতা থাকলেও কোনও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা নেই। আইসিসি যা করতে পারে তা হলো, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিভিন্ন দেশের সহায়তায় গ্রেপ্তার করা এবং গ্রেপ্তারের পরে তাকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে বিচারের জন্য হাজির করা।
এছাড়া আইসিসি তার বিচারিক ক্ষমতাও শুধু সেসব দেশে প্রয়োগ করতে পারে, যে দেশগুলো এই আদালত গঠন করতে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। চুক্তিটি রোম সংবিধি নামে পরিচিত। রাশিয়া এই সংবিধিতে স্বাক্ষর করেনি। তাই পুতিন বা মারিয়া এলভোভা-বেলোভাকে আপাতত এই আদালতের হাতে সমর্পণের কোনও সুযোগ নেই।
অন্যদিকে ইউক্রেনীয় শিশুদের রাশিয়ায় নির্বাসনের অভিযোগ মস্কো অস্বীকার করেছে এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির মতো পদক্ষেপকে আপত্তিকর বলে অভিহিত করেছে। তবে রাশিয়া বলেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এই সিদ্ধান্ত আইনত অকার্যকর, কারণ রাশিয়া আইসিসির সদস্য নয়।
এছাড়া সৌদি আরব বা সংযুক্ত আরব আমিরাতও এই আদালতের সদস্য নয়। তাই প্রেসিডেন্ট পুতিন আইসিসি ওয়ারেন্টের অধীনে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয় ছাড়াই এই দুই দেশে ভ্রমণ করতে পারেন।