আমেরিকা বাংলাদেশ-ভারতকে যে বার্তা দিলো

আমেরিকা বাংলাদেশ-ভারতকে যে বার্তা দিলো

প্রথম নিউজ, অনলাইন:  বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে এখন নানামুখী আলোচনা। বিশেষ করে ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার পতন এবং পালিয়ে দিল্লিতে আশ্রয় নেয়ার পর থেকে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সম্পর্ক টানাপড়েনের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার প্রতি ভারতের অন্ধ সমর্থন এখনো বহাল। দিল্লি ডান-বাম না দেখে গত ১৫ বছর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের শাসনেই ভরসা রেখেছে। হাসিনার শাসনামলে নানা ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন ছিল গণতান্ত্রিক বিশ্বে। 

সাপ্তাহিত রাজনৈতিক ম্যাগাজিন জনতার চোখে মিজানুর রহমানের প্রকাশিত এক রচনায় বিষয়টি উঠে আসে। 

যেখানে বলা হয়- গুম-খুন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, মানুষের বাক- স্বাধীনতা তথা ভোটের অধিকার হরণের সমালোচনা ছিল দুনিয়া জুড়ে। কিন্তু ভারত শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার পক্ষেই থেকেছে। একটি দলকে ক্ষমতায় রাখতে গিয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী বাংলাদেশকে হারানোর ঝুঁকি নিতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি ভারতের (বাইপার্টিজান) নেতৃত্ব। সীমান্তে গুলি-হত্যার ঘটনা আগেও ঘটেছে। এখনো ঘটছে। কিন্তু আগে বেশির ভাগ গুলি হতো চোরাকারবারিদের টার্গেট করে। নিরীহ শিশু-কিশোর কিংবা নারীকে হত্যার ঘটনা ফেলানী ছাড়া বিরল। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সীমান্তে সংঘটিত দু’টি লোমহর্ষক ঘটনা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এ নিয়ে ঢাকায় ভারতীয় দূতকে তলব করা হয়েছে। এটাও নজিরবিহীন।  উভয় সরকারের বক্তৃতা-বিবৃতিতে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। সরকারি চিঠিপত্রে বেশ শক্ত ভাষার ব্যবহার হচ্ছে। এ সবই দু’দেশের সম্পর্ক তিক্ততার চরমে পৌঁছার ইঙ্গিত। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের বক্তব্যও ভালোভাবে নিচ্ছে না ভারত। তারা নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে ঢাকায় ভিসা কার্যক্রম শিথিল রেখেছে। এতে অনেক বাংলাদেশি জরুরি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।  দেশটির ঋণে বাংলাদেশে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। কর্মীরা কাজে যোগদানে অনীহা দেখাচ্ছেন। যদিও এ নিয়ে দিল্লিকে দফায় দফায় অনুরোধ করে চলেছে ঢাকা। এই যখন অবস্থা তখন সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহী হয়েছে উভয়ের বন্ধুরা। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য সমর্থন রয়েছে। অনেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পেছনে ওয়াশিংটনের ভূমিকা থাকতে পারে বলে বিশ্বাস করেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের তরফে কখনোই তা স্বীকার করা হয়নি। বরং বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বা বাইরের শক্তি নয়, বাংলাদেশের মানুষই বুকের তাজা রক্ত ঢেলে ‘রেজিম চেঞ্জ’ করেছে। এটা অস্বীকারের জো নেই যে, আওয়ামী শাসনে দেশের বেশির ভাগ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। খোদ আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরাও। তারা পরিস্থিতির পরিবর্তন চেয়েছিলেন। 

তবে শেখ হাসিনার এমন শোচনীয় পরাজয় চাননি। দেশত্যাগ তো নয়ই। সমালোচনা রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি বন্ধু-উন্নয়ন অংশীদারদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে বাংলাদেশের গত ৩টি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে সমর্থনই কাল হয়েছে ভারতের। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় ছিল বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা আর ভারত বিরোধিতাকে সমার্থক বানিয়ে প্রচার! শেখ হাসিনা সরকার তার গদি ধরে রাখতে ভারত বিরোধিতাকে ‘কার্ড’ হিসেবে ব্যবহার করেছে যথেচ্ছ ভাবে।