আমাদের লড়াই হামাসের সঙ্গে, ফিলিস্তিনের সঙ্গে নয় : নেতানিয়াহু

আমাদের লড়াই হামাসের সঙ্গে, ফিলিস্তিনের সঙ্গে নয় : নেতানিয়াহু

প্রথম নিউজ, ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যে অভিযান পরিচালনা করছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ), তা পুরোপুরি হামাসের বিরুদ্ধে। সাধারণ বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের কোনো ক্ষোভ নেই বলে জানিয়েছেন এই ভূখণ্ডের প্রধানমন্ত্রী বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহু।

সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহুর পক্ষে তার মুখপাত্র তাল হেইনরিশ এই তথ্য জানিয়েছেন।

হেইনরিশ বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইসরায়েলের লড়াই হামাসের বিরুদ্ধে, ফিলিস্তিন বা সেখানকার সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে নয়।’

‘তবে আমাদের প্রশ্ন— হামাস কেন গাজার জনগণকে মানব বর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে? আপনারা যারা সংবাদকর্মী, হামাসের কোনো নেতার সঙ্গে যদি আপনাদের যোগাযোগ থাকে— তাহলে তাকে এই প্রশ্নটি করবেন।’

সংবাদ সম্মেলনে হেইনরিশ জানান, হামাসের সাম্প্রতিক হামলায় নিহত ইসরায়েলিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সোমবার সাক্ষাৎ করেছেন নেতানিয়াহু। সাক্ষাৎকালে এসব পরিবারের সদস্যরা হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের দৃঢ় অবস্থানকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেছেন সেখানকার প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র।

‘আজকের দিনটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। সাম্প্রতিক হামলায় নিহত ইসরায়েলিদের পরিবারের সদস্যরা আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানিয়েছেন, পুরো ইসরায়েলি জাতি এখন মাথা উঁচু করে চলতে চায় এবং হামাসের ধ্বংস দেখতে চায়।’

‘তাদের এই সহনশীলতা আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। অনেক সময় দেখা যায়, যারা সবচেয়ে কষ্টে থাকেন, তারাই সবথেকে বড় শক্তির উৎস হয়ে ওঠেন।’

প্রায় দুই বছর ধরে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেওয়ার পর গত ৭ অক্টোবর ভোররাতে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে একের পর এক রকেট ছোড়া শুরু করে হামাস এবং সূর্যের আলো ফোটার আগেই ইসরায়েলের দক্ষিণাংশের সীমান্ত বেড়া বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ওই ভূখণ্ডে প্রবেশ করে শত শত সশস্ত্র হামাস যোদ্ধা।

প্রাথমিক গোয়েন্দা তথ্য ও প্রস্তুতির অভাবে হামলার শুরুর দিকে খানিকটা অপ্রস্তুত থাকলেও অল্প সময়ের মধ্যে তা কাটিয়ে পূর্ণ শক্তিতে যুদ্ধের ময়দানে নামে ইসরায়েল এবং প্রথম দিন থেকেই গাজায় বিমান হামলা শুরু করে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

হামাসের হামলায় প্রথম দিনই ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন কয়েকশ ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক। এছাড়াও দেড় শতাধিক মানুষকে এদিন জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে গেছে হামাস। এই জিম্মিদের ভাগ্যে কী ঘটেছে— তা এখনও অজানা।

মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে তাল হেইনরিশ জানান, সাম্প্রতিক এই হামলা সম্পর্কে যোদ্ধাদের যেসব নির্দেশনা দিয়েছিল হামাসের হাইকমান্ড, সেসব নির্দেশনার লিখিত কপি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাতে এসেছে। তিনি আরও জানান— সেসব কপিতে ইসরায়েলের বেসামরিক স্থাপনায় হামলা, সাধারণ ইসরায়েলিদের হত্যা ও অপহরণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যোদ্ধাদের।

‘এবং যোদ্ধারা তাদের হাইকমান্ডের নির্দেশ প্রায় অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে,’ মন্তব্য করেন তাল।

আইডিএফ এবং হামাসের গত ১০ দিনের যুদ্ধে এ পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৪শ’রও বেশি ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক; আর গাজা উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ২ হাজার ৮৩৭ জনে। এই নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু ও নারী রয়েছেন।

এছাড়া আহত হয়েছেন ৯ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন গাজার ১০ লাখেররও বেশি ফিলিস্তিনি।

তবে সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে হেইনরিশ দাবি করেছেন, আইডিএফ কেবল হামাসের স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আইডিএফ মূলত হামাসের হেডকোয়ার্টারগুলো, তাদের মর্টার নিক্ষেপ কেন্দ্র ও অন্যান্য সামরিক স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে। তারা যদি সাধারণ ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করত, তাহলে হতাহতের সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি হতো।’