আমি এক বিশ্বস্ত নেতা ও সহযোদ্ধা হারালাম : তৈমুরের মৃত্যুতে মির্জা ফখরুল

বুধবার বেলা ১১টায় ঠাকুরগাঁও শহরের পাবলিক ক্লাব মাঠে জেলা বিএনপির সভাপতি প্রয়াত তৈমুর রহমানের প্রথম নামাজে জানাজায় সিঙ্গাপুর থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আমি এক বিশ্বস্ত নেতা ও সহযোদ্ধা হারালাম : তৈমুরের মৃত্যুতে মির্জা ফখরুল

প্রথম নিউজ, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তৈমুর রহমানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। দুপুর ১টার দিকে রুহিয়া সালিহিয়া মাদ্রাসা মাঠে তাকে গার্ড অব অনার প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানানো হয়। এরপর দ্বিতীয় জানাজা শেষে সালিহিয়া মাদ্রাসা-সংলগ্ন গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। 

এর আগে রোববার (৩ মার্চ) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ভারতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মঙ্গলবার বিকেলে ভারত থেকে তার মরদেহ দেশে আনা হয়।

বুধবার বেলা ১১টায় ঠাকুরগাঁও শহরের পাবলিক ক্লাব মাঠে জেলা বিএনপির সভাপতি প্রয়াত তৈমুর রহমানের প্রথম নামাজে জানাজায় সিঙ্গাপুর থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় মির্জা ফখরুল শোক প্রকাশ করে বলেন, তৈমুর রহমান ছিলেন বিএনপির এক বিশ্বস্ত যোদ্ধা। হঠাৎ তার চলে যাওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মত নয়। সত্যিকার অর্থেই আমরা এক বিশ্বস্ত নেতা হারালাম।

তিনি আরও বলেন, আজকে আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অত্যন্ত কষ্টের দিন। একজন একনিষ্ঠ রাজনৈতিক ব্যক্তি, একজন সমাজসেবক এবং আমার খুব বিশ্বস্ত একজন রাজনৈতিক সহযোদ্ধাকে হারালাম। তৈমুর শুধু বিএনপির ঠাকুরগাঁও জেলার সভাপতি ছিলেন না, তিনি তার ঊর্ধ্বে ছিলেন। তিনি ঠাকুরগাঁও জেলার সকলের কাছে একজন প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। তিনি মেহনতি মানুষের জন্য রাজনীতি করতেন। আমার রাজনৈতিক জীবনে তিনি ১৯৯১ সালে বিএনপিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি ঠাকুরগাঁও উপজেলার চেয়ারম্যান পদে দাঁড়ান এবং ২০১৫ সালে তিনি বিপুল ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছেন। সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, তৈমুর রুহিয়ার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কথা কম বলতেন, কিন্তু কাজ করতেন বেশি। তিনি ঠাকুরগাঁও জেলার বিএনপিকে সুসংগঠিত করেছেন। যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন আমি তাকে দেখতে যেতে পারিনি। তখন আমি কারাগারে। যখন চিকিৎসার জন্য ভারতে তখন আমি কারাগার থেকে মুক্তি পাই এবং তার সঙ্গে আমার টেলিফোনে কথা হয়। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

এ সময় বিপুলসংখ্যক মুসল্লির অংশ গ্রহণে অনুষ্ঠিত জানাজায় ইমামতি করেন ঠাকুরগাঁও কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব মাওলানা খলিলুর রহমান।

জানাজায় অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদ, নির্বাহী সদস্য জেড এম মর্তুজা তুলা, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, ঠাকুরগাঁও জেলার সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হালিম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সভাপতি বদরুদ্দিন বদর, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক বেলাল উদ্দিন প্রধান, ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের সভাপতি মনসুর আলী, জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক রেজাউর রাজি স্বপনসহ বিভিন্ন অঙ্গনের ব্যক্তিবর্গ।

উল্লেখ্য, গত ১৫ ডিসেম্বর ফুসফুসে ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ভারতে যান তৈমুর রহমান। গত ৬ ফেব্রুয়ারি মুম্বাইয়ে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার হয়। তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন এবং দেশে ফেরার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। কিন্তু গত ৩ মার্চ বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৪টায় হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তার দুই মেয়ে ও তিন ছেলে রয়েছে।

তিনি ২০১৪ সালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি ৩ বার ১নং রুহিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৮৪ সালে প্রথমবার রুহিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দ্বিতীয়বার ১৯৯২ সালে এবং তৃতীয়বার ১৯৯৭ সালে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ছাত্রজীবনে তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এবং পরবর্তীতে সিপিবির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

৯০ এর দশকে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দেন এবং ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। ক্রমান্বয়ে তিনি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সর্বশেষ জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।