আবারও বেড়েছে মসলার দাম
চাল-ডাল, মাছ-মাংসের সঙ্গে নতুন করে বেড়েছে মসলা পণ্যের দাম।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: রমজানের আর মাত্র এক মাস বাকি। এর মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। চাল-ডাল, মাছ-মাংসের সঙ্গে নতুন করে বেড়েছে মসলা পণ্যের দাম। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। স্বস্তির খবর নেই কোনো বাজারেই। সরজমিন রাজধানীর শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পিয়াজ ও এলাচের দাম। গত সপ্তাহেও পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজিতে। ৩ দিনের ব্যবধানে তা বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা। প্রতি কেজি এলাচের দাম বেড়েছে ৮শ’ থেকে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত। লবঙ্গের কেজিতে বেড়েছে ২০০ টাকা। আদা-রসুনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত।
মসলার আমদানিকারকরা বলছেন, অনেক হাত ঘুরে খুচরা বাজারে পণ্য যায়। পথিমধ্যে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সামনে রমজান, ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফার প্রবণতার ফলে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। শেওড়াপাড়া কাঁচাবাজারে অবস্থিত হেনা ট্রেডার্সের বিক্রেতা শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মানভেদে প্রতি কেজি এলাচ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার, ৩ হাজার ৬শ’ ও ৪ হাজার টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও এই মসলা বিক্রি হয়েছে ২২শ’, ২৪শ’, ২৮শ’ টাকা দরে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এলাচের দাম বেড়েছে ৮০০ থেকে ১২শ’ টাকা। লবঙ্গের দাম জানতে চাইলে শাহাদাত বলেন, ১০০ গ্রাম লবঙ্গের দাম ২২০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও এর দাম ছিল ২০০ টাকা। এই হিসাবে প্রতি কেজিতে লবঙ্গের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা।
কাজীপাড়া কাঁচাবাজারে অবস্থিত সুমন ভ্যারাইটিজের স্বত্বাধিকারী শিপন শিকদার জানান, প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। গত সপ্তাহেও এর দাম ছিল ৮০ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৪০ টাকা। গত সপ্তাহে আদা-রসুনের দাম ছিল ২০০ টাকা।
বাজারে রাঁধুনী মসলার প্রতিটি প্যাকেটের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। হলুদের গুঁড়ার দাম ৫৫ টাকা থেকে ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬৫ টাকা। মরিচের গুঁড়ার দাম ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১০০ টাকা। গরুর মাংসের মসলা ২০ টাকা থেকে ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ২৫ টাকা। মুরগির মাংসের মসলার প্যাকেট ১৮ টাকা থেকে ২ টাকা বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা।
এ ছাড়া ৩ দিনের ব্যবধানে ছোলার দাম ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১১০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও এই ছোলা বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। গত সপ্তাহেও মসুর ডাল ছিল ১৪০ টাকা কেজি। ৩ দিনের ব্যবধানে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজিতে। গত সপ্তাহেও এই মুরগির দাম ছিল ১৮০ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লারের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি মুরগির দাম ৫২০ টাকা থেকে ৬০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৫৮০ টাকা।
আদা-রসুনের আমদানিকারক মোশারফ শিকদার বলেন, আমি পোর্টের মাল পোর্টেই বিক্রি করে দেই। বাজারে আদা-রসুন নিলে তখন বেশি দামে বিক্রি করি। শ্যামবাজারে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়। তারা ৫ থেকে ৬ টাকা বেশি দামে বিক্রি করে। খুচরা বাজারে দাম বাড়ার সঠিক কোনো কারণ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক হাত হয়ে তাদের কাছে এসব দ্রব্য যায়। তারা এক ব্যাগ করে মাল কেনে। ১৫ দিনে তা বিক্রি করে। এ সময়ে পচে যাওয়ার কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে পারে।
ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফার প্রবণতার ফলে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরবরাহ পরিস্থিতির কারণে দাম বাড়তে পারে। অতি মুনাফার প্রবণতা তো আছেই। যখন মুদ্রাস্ফিতি বেশি থাকে তখন সবাই বেশি মুনাফা করতে চায়। মানুষের লোভের লাগাম না টানলে দাম কমবে না। বিত্তশালীরা পণ্য কেনার সময় দাম-দর করে না জানিয়ে তিনি বলেন, আমদানি ব্যয় বাড়ার সঙ্গে কম বিক্রি করে মানুষের বেশি লাভ করার চাহিদা বেড়েছে। মধ্যবিত্তের সংখ্যাও বেড়েছে। এখন মানুষ দাম দর করে না। বিত্তশালীরা ১০ থেকে ১২ টাকার কোনো পার্থক্য করে না। অর্থনীতি জটিল একটি প্রক্রিয়া। আগের মতো মানুষের মধ্যে প্রতিবাদের বিষয়টি নেই।
দাম বাড়ার লজিক্যালি কোনো কারণ নেই উল্লেখ করে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, সামনে রমজান। ব্যবসায়ীরা এক মাস ব্যবসা করে ১১ মাস বসে খাওয়ার চিন্তা করে। তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছে। এর সপক্ষে কোনো যুক্তি নেই। বিভিন্ন চক্র মিলে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। যত হাত ঘুরবে দাম তত বাড়বে। মুদ্রাস্ফিতির জন্য পণ্যের দাম এত বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো কারণ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফিতির জন্য দাম ৫ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। বাকিটা তাদের অজুহাত। টাকা ইনকামের জন্য তাদের এই ধান্দা।