আতঙ্কে ডলার ব্যবসায়ীরা বেচাকেনায় ভাটা

আইনশৃঙ্খলা অভিযানের মুখে আতঙ্কে রয়েছে অবৈধভাবে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারীরা। বন্ধ হয়ে গেছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি। অবৈধদের পাশাপাশি আতঙ্কে রয়েছেন বৈধ লাইসেন্সধারী মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীরাও।

আতঙ্কে ডলার ব্যবসায়ীরা বেচাকেনায় ভাটা

প্রথম নিউজ,ঢাকা:আইনশৃঙ্খলা অভিযানের মুখে আতঙ্কে রয়েছে অবৈধভাবে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারীরা। বন্ধ হয়ে গেছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রা  বিক্রি। অবৈধদের পাশাপাশি আতঙ্কে রয়েছেন বৈধ লাইসেন্সধারী মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীরাও। যার প্রভাব পড়েছে কার্ব মার্কেট তথা খোলাবাজারে বৈদেশিক মুদ্রা বেচাকেনায়। বিদেশগামী যাত্রীরা ডলার কিনতে পারছে না। বিদেশফেরতরাও মানি এক্সচেঞ্জে এসে ডলার বিক্রির সাহস পাচ্ছে না। গত কয়েকদিন ধরে সিআইডি’র অভিযানে বেশকিছু বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসায়ী আটকের পর এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণে বৈধ ও অবৈধ দু’ধরনের মুদ্রা ব্যবসাতেই ভাটা পড়েছে। জব্দের ভয়ে ব্যবসায়ীরা ডলার বের করছেন না। রাজধানীজুড়ে ডলার সরবরাহের যে নেটওয়ার্ক তা ভেঙে পড়েছে।
এভাবে চলতে থাকলে ডলারের দাম আরও বেড়ে যাবে। সম্প্রতি অবৈধভাবে ডলার বেচাকেনার খবর পেয়ে রাজধানীর ৫টি এলাকায় বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জে অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের কাছ থেকে ১ কোটি ১১ লাখ ১৯ হাজার ৮২৬ টাকা সমমূল্যের ১৯টি দেশের মুদ্রাসহ  ১ কোটি ৯৯ লাখ ৬১ হাজার ৩৭৬ টাকা জব্দ করা হয়। গত বুধবার সিআইডি’র সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে বৈধ এক্সচেঞ্জ আছে ২৩৫টি। এর বাইরে প্রায় ১ হাজার অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ সারা দেশে রয়েছে। এই এক্সচেঞ্জগুলো দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে আসছিল বলে সিআইডি’র কাছে অভিযোগ রয়েছে। 
একেকটি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান দৈনিক প্রায় ৭৫ লাখ টাকা লেনদেন করে বলে সিআইডি জানিয়েছে। গতকাল রাজধানীর বেশ কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জ ঘুরে ডলার পাওয়া যায়নি। হোটেল শেরাটনের তিতাস মানি এক্সচেঞ্জ, ডায়মন্ড মানি এক্সচেঞ্জ, বসুন্ধরা শপিং সেন্টারের মিয়া মানি এক্সচেঞ্জ, কলাবাগানের এসকেএফ মানি এক্সচেঞ্জসহ মতিঝিলের বেশ কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জে ডলার কেনা কিংবা বিক্রির প্রস্তাব দিলে তারা রাজি হননি। তবে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী স্বীকার করেছেন তাদের কাছে ডলার থাকলেও পুলিশি হয়রানির ভয়ে তারা বের করছেন না। বিশ্বস্ত ক্লায়েন্টদের সঙ্গে তারা গোপনে লেনদেন করছেন।  দিলকুশা এলাকার দোহার মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানির চেয়ারম্যান মো. মুরাদ হোসেন বলেন, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে রয়েছেন। অবৈধ কিংবা বৈধ ব্যবসায়ী সবাই আতঙ্কে। বাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে না বললেই চলে। গত দু’দিন যাবৎ এই অবস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, বিদেশ ভ্রমণের সময় জনপ্রতি সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার বিদেশে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি আছে। তবে এর পুরোটা নগদ বা নোট আকারে নেয়া যাবে না। নগদ বা নোট আকারে জনপ্রতি একবারে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ডলার নেয়া যাবে। বাকি ৭ হাজার ডলার পর্যন্ত অর্থ ইন্টারন্যাশনাল কার্ডের মাধ্যমে নেয়া যাবে। 
একজন ব্যক্তি বছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার পর্যন্ত পাসপোর্টে এনডোর্স করে নিতে পারবেন। চিকিৎসা বা শিক্ষার মতো বিশেষ প্রয়োজনে বেশি পরিমাণ ডলার নেয়ার প্রয়োজন হলে যৌক্তিক কারণের উপযুক্ত নথি জমা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে। বিদেশ ফেরতের সময় বাংলাদেশের নাগরিকরা যেকোনো অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলার সঙ্গে করে নগদে বা কার্ডে করে আনতে পারবেন। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার নগদে আনতে কোনো ঘোষণা দেয়ার দরকার নেই। তবে ১০ হাজার ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা নগদে আনলে এফএমজি ফরমে বন্দরেই ঘোষণা দিতে হয়। এরপর চাইলে সঙ্গে আনা নগদ ডলারের সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার নিজের জিম্মায় রাখা যায়। এর বেশি হলে সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে অনুমোদিত ব্যাংক বা মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিতে হবে। তবে চাইলে রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) অ্যাকাউন্ট খুলে অতিরিক্ত ডলার ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় রাখার সুযোগ আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী বলেন, সরকারের নজরদারির পর মানি এক্সচেঞ্জগুলো সতর্কতার সঙ্গে লেনদেন করছে। তারা গ্রাহকদের পাসপোর্ট না থাকলে লেনদেন করছে না। কিন্তু প্রভাবশালীদের চাপে পড়ে অনেক সময় তারা নিয়ম ভাঙতে বাধ্য হচ্ছে। আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে তারা একরকম জোর করেই ডলার নিয়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে যেসব লেনদেন হয় তার বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে ডলার নিয়ে অস্থিরতার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, দেশে অনুমোদিত ২৩৫টির বাইরে আরও ৭ শ’র মতো মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠান অনুমোদন ছাড়াই কার্যক্রম চালাচ্ছে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: