আইনজীবীর ১২ কোটি টাকা ফি, অনুসন্ধানের নির্দেশ হাইকোর্টের

‘আইনজীবী ইউসুফ আলী গ্রামীণ ফোনের আইনজীবী হওয়া সত্ত্বেও কোম্পানিটির স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে শ্রমিক–কর্মচারীদের পক্ষে মামলা লড়েছেন, যা বার কাউন্সিল আইনের লঙ্ঘন।

আইনজীবীর ১২ কোটি টাকা ফি, অনুসন্ধানের নির্দেশ হাইকোর্টের
আইনজীবীর ১২ কোটি টাকা ফি, অনুসন্ধানের নির্দেশ হাইকোর্টের

প্রথম নিউজ,  ডেস্ক :  আইনি ফি হিসেবে সম্প্রতি বিপুল টাকা নেওয়া–সম্পর্কিত বিতর্কসহ অন্যান্য বিতর্কিত বিষয়ে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ অনুসন্ধান করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও বার কাউন্সিলের সচিবকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল দেন। এক আইনজীবীর আইনি ফি হিসেবে বিপুল টাকা নেওয়া–সম্পর্কিত বিতর্কসহ অন্যান্য বিষয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম আশরাফুল ইসলাম ওই রিট করেন। আর যে আইনজীবীকে নিয়ে অভিযোগ, তাঁর নাম মো. ইউসুফ আলী। আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী এম আশরাফুল ইসলাম নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ রেজাউল হক। গ্রামীণ টেলিকম ও এর প্রতিষ্ঠাতা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে লভ্যাংশের বকেয়া পাওনার দাবিকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক–কর্মচারী ইউনিয়ন ও চাকরিচ্যুত শ্রমিক–কর্মচারীরা মামলা করেন। শ্রমিক–কর্মচারীদের আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী। লভ্যাংশের বকেয়া পাওনার দাবি ও পরিশোধ নিয়ে পরে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়। এ নিয়ে আইনজীবী ইউসুফ আলী শ্রমিক–কর্মচারীদের কাছ থেকে ১২ কোটি টাকা ফি নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

আদালত থেকে বেরিয়ে আইনজীবী এম আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আইনজীবী ইউসুফ আলী গ্রামীণ ফোনের আইনজীবী হওয়া সত্ত্বেও কোম্পানিটির স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে শ্রমিক–কর্মচারীদের পক্ষে মামলা লড়েছেন, যা বার কাউন্সিল আইনের লঙ্ঘন। ইউসুফ আলীর ১২ কোটি টাকা ফি নেওয়া ও প্রেস ব্রিফিংয়ে বিরূপ মন্তব্য করার বিষয়টির অনুসন্ধান চেয়েছি। কেননা, বার কাউন্সিল আইন অনুসারে ভুক্তভোগী বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে তাঁদের সম্পত্তি বা মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো সুবিধা, এমনকি যেকোনো পরিমাণ ফি আইনজীবীরা নিতে পারেন না। শুনানি নিয়ে আদালত ওই রুল দিয়েছেন। বার কাউন্সিল ও বার কাউন্সিলের সচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।’

শুনানিকালে আদালত বলেন, একটি পোর্টালে এসেছে, আইনজীবীর (শ্রমিক–কর্মচারীদের) ফান্ডে ১২ কোটি টাকা গেছে। সেটি হলে ভুল বার্তা যাবে। উপমহাদেশে এমন কোনো আইনজীবী হননি, যাঁর ফি ১২ কোটি টাকা হবে। স্বচ্ছতার খাতিরে আদালত ও আইনজীবীর শুদ্ধতা নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে, সে জন্য সমঝোতা চুক্তি ও পাওনা পরিশোধের বিবরণী হলফনামা আকারে দাখিল করতে বলা হলো। আইনজীবীদের তথ্যমতে, লভ্যাংশের বকেয়া পাওনাকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক–কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে গত বছর হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। এর শুনানি নিয়ে আদালত কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। ৪ এপ্রিল আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়। পরে মামলা প্রত্যাহারের শর্তে পাওনা পরিশোধ নিয়ে দুই পক্ষের সমঝোতা হয়েছে জানিয়ে আদালতে মামলা না চালানোর কথা বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ মে না চালানোর দিক বিবেচনায় মামলা (অবসায়ন আবেদন) খারিজ হয়। এরপর ৩০ জুন ‘গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক–কর্মচারী ইউনিয়ন বনাম গ্রামীণ টেলিকম এবং অন্যান্য’ শিরোনামে মামলাটি কার্যতালিকায় ওঠে।

৩০ জুন আইনজীবী ইউসুফ আলী বলেছিলেন, ১৭৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মোট পাওনা টাকার পরিমাণ আনুমানিক ৪৩৭ কোটি। এর মধ্যে ১৬৮ জনের পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। চারজন মারা গেছেন ও চারজন বিদেশে থাকার কারণে তাঁদের পাওনা পরিশোধের বিষয়টি বিলম্বিত হচ্ছে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom