আইনজীবী জয়নুল আবেদীন পঞ্চদশ সংশোধনীতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে
প্রথম নিউজ, অনলাইন: সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি। ফলে হাইকোর্টের কাছে এই সংশোধনী বাতিল চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে রুল শুনানি শেষে ব্রিফিংকালে এ কথা জানান তিনি।
এর আগে একই দিন আদালতে দ্বিতীয় দিনের মতো সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা প্রশ্নে রুলের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এদিন তিনি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে তার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, জনমত উপেক্ষা করে একক সিদ্ধান্তে শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনেন, যা অসাংবিধানিক।
তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে জারি করা রুলের শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, কেউ যেন বলতে না পারে যে, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) হাইকার্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রুলের তৃতীয় দিনের শুনানিতে এমন মন্তব্য করেন।
এদিন কোর্টের বিরতির আগে বিএনপির পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন শুনানি করেন। বিরতির পর বিকেলে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শাহরিয়ার কবির। তিনি সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং অনুচ্ছেদ ৭ (বি) ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু অনুচ্ছেদ নিয়ে যুক্তি তুলে ধরেন। একপর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, এই রায়টি আমরা কলমের মাধ্যমেই লিখবো। মানুষ এটি ৫০ বছর বা আরও বেশি দিন মনে রাখবে। কেউ যেন বলতে না পারে যে আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। এরপর আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করেন।
শুনানির বিষয়ে জয়নুল আবেদীন বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর সংবিধান অনুযায়ী করা হয়নি। এটা সম্পূর্ণভাবে সংবিধান বিরোধী। এখানে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়নি। জনগণ যাতে ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে না পারে সেজন্য পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়েছে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত ১৩তম সংশোধনী মামলায় আপিল বিভাগের রায়ে সময় প্রধান বিচারপতি নিজের মুখে বলেছিলেন আগামী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। পরবর্তীতে সাতদিন পরে সংবিধান সংশোধন হয়ে গেল। এ মামলার লিখিত রায় প্রকাশের আগেই সংবিধান সংশোধন হয়ে যায়।
অপরদিকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক অবসরে যাওয়ার ১৬ মাস পরে লিখিত রায় দিলেন। তখন আমি সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি হিসেবে বলেছিলাম এই রায়কে কোনো রায় বলা যায় না। এবং যে পঞ্চদশ সংশোধনী হয়েছে সেটা সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে। এইসব দিক আমরা আদালতে তুলে ধরে বলেছি যে এই সংবিধান সংশোধনী যেটা করা হয়েছে। সেটা সম্পূর্ণভাবে সংবিধান বিরোধী। তবে কিছু কিছু বিধান রয়েছে যেগুলো থাকা দরকার। এবিষয়ে পরবর্তীতে আমরা লিস্ট করে আদালতে প্লেস করবো। এখানে মূল বিষয় হলো পঞ্চদশ সংশোধনীর সংবিধান মোতাবেক হয়নি। এটা সংবিধান বিরোধী হয়েছে।
আদালতে বদিউল আলম সুজনসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া। বিএনপির পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল। জামায়াতের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তামিম খান। এর আগে গত ৩০ অক্টোবর প্রথম দিন এবং ৬ নভেম্বর দ্বিতীয় দিনের শুনানি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ দুইদিন শুনানি করেছেন ড. শরিফ ভূঁইয়া।
গত ১৯ আগস্ট জনস্বার্থে পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তির করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। পরে আবেদনকারী পক্ষ রুলটি শুনানির জন্য বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন কোর্টে উপস্থাপন করেন। এরপর আদালত রুল শুনানির জন্য ৩০ অক্টোবর দিন রেখেছিলেন।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট করেন। অন্য চারজন হলেন, তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। এরপর এ রুলের ওপর মতামত দিতে বিএনপি, জামায়াত, গণফোরাম, ও আইনজীবী মোস্তফা আসগর শরিফী প্রমুখ যুক্ত হন।
পঞ্চদশ সংশোধনী আইনে (২০১১) বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন।