অভিমানে মায়ের সামনে হাতিরঝিলে লাফ দেয় কিশোরী
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল রাত সাড়ে ১২টায় রিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে। নিহত রিয়া পরিবারের সঙ্গে ভাটারা থানার নুরের চালা এলাকায় থাকতো। রিয়া বাবা একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: রাজধানীর হাতিরঝিলের পানিতে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে রিয়া (১৫) নামে এক কিশোরী। অভিমান করে মায়ের সামনেই পানিতে লাফ দিয়ে পড়ে রিয়া। শনিবার (২২ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রিয়া পানিতে লাফ দেয়। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল রাত সাড়ে ১২টায় রিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে। নিহত রিয়া পরিবারের সঙ্গে ভাটারা থানার নুরের চালা এলাকায় থাকতো। রিয়া বাবা একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার রাত ৮টার দিকে রিয়া তার বান্ধবী আনিলার সঙ্গে বাইরে বের হয়। এ সময় তারা রাজধানীর বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করে। অনেক রাত পর্যন্ত মেয়েকে না খুঁজে পেয়ে উদ্ধারের জন্য ভাটারা থানা পুলিশের সহযোগিতা চায় রিয়ার মা। পরে পুলিশ রিয়ার বান্ধবী আনিলা আটক করতে পারলেও রিয়াকে খুঁজে পায়নি।
আরও জানা যায়, বান্ধবীকে আটকের পর হাতিরঝিলে এসে এক হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতার ফোন দিয়ে রিয়া তার মাকে বলে ‘কেন তাকে খোঁজা হচ্ছে, আর তার বান্ধবীকে কেন পুলিশ আটক করেছে; তাকে যেন খোঁজা না হয়। ফোনে সে তার মাকে বলে। পরে রিয়ার মা ওই বিক্রেতাকে আবার ফোন দিয়ে বলে ‘তার মেয়ে বাসা থেকে রাগ করে বের হয়ে গেছে।’ সে এখন কি হাতিরঝিলে আছে? আর যদি রিয়া সেখানে থাকে তাহলে তাকে একটু দেখে রাখার অনুরোধ জানান। পরে ওই বিক্রেতা রিয়ার মাকে জানায় সে (রিয়া) এখন হাতিরঝিলে। এই খবর পেয়ে রিয়ার মা-বাবা হাতিরঝিলে আসে। রিয়া তার মাকে দেখেই পানিতে লাফ দেয়। পরে ওই হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা রিয়াকে বাঁচাতে পানিতে নামে। কিন্তু তাকে পানিতে না পেয়ে ওই বিক্রেতা উঠে চলে আসে। পুলিশ ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দিলে রাত ১২টার দিকে তারা এসে রিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে।
আরও জানা যায়, মরদেহ উদ্ধারের পর ওই হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা ও তার বন্ধুকে আটকে নিয়ে নিয়ে যায় হাতিরঝিল থানা পুলিশ।
হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মো. আওলাদ হোসেন বলেন, আমাদের প্রাথমিক ধারণা রিয়ার (১৫) ওপর পারিবারিক চাপ ছিল অনেক। এই চাপের কারণে তার মনে সৃষ্ট অভিযান থেকে আত্মহত্যার পথ বেচে নিতে পারে। তার যেহেতু এসএসসি পরীক্ষা শেষ, সেহেতু সে এই ফ্রি সময়ে ঘুরতে চেয়েছিল। শুক্রবার বিকেলে মাকে রিয়া বলে সে ঘুরতে যাবে। কিন্তু তার মা তাকে ঘুরতে নিয়ে যায়নি এবং বাসা থেকে বের হতে দেয়নি। সে শুধু তখন তার মাকে বলেছিল ‘তোমরা এতো চাপ দাও, এতো প্রশ্নের জবাব চাও আর ভালো লাগে না।’ মা তাকে বাইরে যেতে না দেওয়ায় সে রাত ৮টায় বাসা থেকে অভিমানে বের হয়ে যায়।
শুক্রবার রাতে রিয়া কোথায় ছিল জানতে চাইলে ওসি বলেন, ওইদিন রাতে সে তার বন্ধুদের (ছেলে-মেয়ে) সঙ্গে ঘুরেছে। তবে সে খারাপ কিছু করেনি। বাসায় যায়নি ওই রাতে। রাতে কড়াইল বস্তির দিকে কোনো বান্ধবীর বাসায় ছিল। এর মধ্যে শুক্রবার রাতে রিয়ার মা-বাবা তার সন্ধানের জন্য ভাটার থানার সহযোগিতা চায়। পরে ভাটারা থানা রিয়ার অবস্থান শনাক্ত করে হাতিরঝিলে। অবস্থান শনাক্ত হওয়ার পর ভাটারা থানার পুলিশ ও রিয়ার মা-বাবা হাতিরঝিলে যায়। রিয়ার তার মাকে আসতে দেখে হয়তো অভিমানে ও ভয়ে পানিতে লাফ দেয়। এক রাত বাসায় ছিল না, মা তাকে নিতে এসেছে এ বিষয়ে তার মনে হয়তো ভয় কাজ করছিল।
হাতিরঝিল থানার ওসি আরও বলেন, এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। আর আটক দুই জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তারা নিরপরাধ, তারা মেয়েটাকে বাঁচাতে গিয়েছিল। মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় নিহত রিয়ার বান্ধবী আনিলা ভাটারা থানায় আছে। মেয়েটির বয়স অল্প। তার পরিবারকে থানায় ডাকা হয়েছে। পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।