অবরুদ্ধ জনপ্রশাসন সচিব ও এপিডির দপ্তর
বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফেরামের অবস্থান

প্রথম নিউজ, অনলাইন : বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের অবস্থান কর্মসূচির ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে জনপ্রশাসন সচিব ও মন্ত্রণালয়টির এপিডি অনুবিভাগের কার্যক্রম। এমনকি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব অফিসও করেননি। এপিডি অফিসে কর্মকর্তারা উপস্থিত হলেও সেখানে কোনো কাজই হয়নি। বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা সকাল থেকে এপিডির দপ্তরেই অবস্থান নেন। ফলে স্বাভাবিক কোনো কার্যক্রম হয়নি এপিডি অনুবিভাগে।
তাদের দাবি, স্বৈরাচার ও স্বেচ্ছাচার শেখ হাসিনা বিদায় হলেও প্রশাসনে বহাল আছে তার দোসররা। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে কিছু সুবিধাভোগী মতলববাজ কর্মকর্তা। তারা প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে এবং সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র করছে। ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগী ও লুটেরা ওইসব কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করতে হবে। জনপ্রশাসন সচিবসহ চুক্তিভিত্তিক কর্মে নিয়োজিত সবার চুক্তি বাতিল করতে হবে।
মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কার্যকরী সভাপতি ও সাবেক সচিব আবদুল খালেকের নেতৃত্বে ৩৫ থেকে ৪০ জন কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) দপ্তরে অবস্থান নিয়ে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন।উপস্থিত সবাই সরকারের সাবেক সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। তাদের অবস্থানের ফলে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এপিডির দপ্তর।
জানতে চাইলে সাবেক সচিব ও বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কার্যকরী সভাপতি মো. আবদুল খালেক যুগান্তরকে বলেন, আমরা বর্তমান সরকারের সমর্থক। সরকারের কাছে আমরা বারবার দাবি করে এসেছি ফ্যাসিবাদের দোসরদের সরকারি চাকরি থেকে অপসারণ করতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদের সমর্থকরা এখনো গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল। এমনকি তাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে জনপ্রশাসন সচিবসহ অনেক কর্মকর্তা বর্তমানে চুক্তিভিত্তিক কর্মে নিয়োজিত। অবিলম্বে তাদের সবার চুক্তি বাতিল করতে হবে। তাদের চুক্তি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলতেই থাকবে।
আবদুল খালেক আরও বলেন, স্বৈরাচারের দোসর পানিসম্পদ সচিব মো. নাজমুল আহসান, কৃষি সচিব ড. মো. ইমদাদ উল্লাহ মিয়ান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জায়েদা পারভীন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুল ইসলাম এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেনকে (চলতি দায়িত্ব) অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই প্রতিহত করা হবে। তাদের নিয়োগ বাতিল করতে হবে। অনুরূপ আরও যারা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে বসা তাদের নিয়োগ বাতিল করে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
এদিকে আওয়ামী সুবিধাভোগী অবাঞ্ছিত পাঁচ সচিবসহ চুক্তিতে নিয়োজিত জনপ্রশাসন সচিবের অপসারণ দাবি করেছে বঞ্চিত হয়ে অবসরে যাওয়া অতিরিক্ত সচিব ফোরাম। মঙ্গলবার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে মিনি কনফারেন্স রুমে অবস্থান নিয়ে তারা এ দাবি জানান। ফোরামের আহ্বায়ক ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. মো. নাসির উদ্দিন এবং সদস্যসচিব আবদুল মান্নান ইলিয়াস যুগান্তরকে বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে সুবিধাবাদী আবার বর্তমান সরকারের সময়ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছে। এটা দুঃখজনক এবং তাদের চুক্তি বাতিল করতে হবে। তাদের অপসারণের দাবিতেই আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি। আমরা বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি এবিএম আব্দুস সাত্তার সাহেবের নেতৃত্বের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছি।
তারা আরও বলেন, ফ্যাসিবাদীদের দোসররা এখনো প্রশাসনে আছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও তারা বিভিন্ন বৈষম্য সৃষ্টি করছে। তারা মানুষের ন্যায্য দাবি মানতে বাধার সৃষ্টি করছে। তাদের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আব্দুস সাত্তার স্যারের নেতৃত্বে আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।
তারা আরও বলেন, বর্তমান জনপ্রশাসন সচিব ড. মোখলেস উর রহমান আমাদের হেয় করেছেন। আমরা তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম, তিনি কথা দিয়েছিলেন বঞ্চনা নিরসন কমিটির মাধ্যমে বঞ্চিত অতিরিক্ত সচিবদের বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করবেন। এ নিয়ে একটা কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটিতে আমাদের আবেদন করতে বলেছিলেন এবং আমরা আবেদন করেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে দেখলাম সেই কমিটি তিনি বাতিল করেছেন।ফলে এতে আমরা অপমানিত হলাম।
নাসির উদ্দিন বলেন, তিনি (জনপ্রশাসন সচিব) একজন অস্থির প্রকৃতির মানুষ। তার মতো একজন অস্থির মানুষ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে থাকাটা সমীচীন না।
অপরদিকে এ সময় বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি মো. নূরুল ইসলামের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন কর্মচারী জনপ্রশাসনে করিডরে অবস্থান নেয়। তারা সাবেক সচিব ও বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি এবিএম আব্দুস সাত্তারের ডাকে সাড়া দিয়ে সেখানে অবস্থা নিয়েছেন বলে জানান। এ সময় তারা একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বিতরণ করেন।
এতে বলা হয়, নিয়োগ বিধিমালা অনুসারে নন-ক্যাডার সহকারী সচিবের ফিডার পদে প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও) ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের (পিও) মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ৪০০ জনকে সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে হবে। সচিবালয়ের এও এবং পিওদের পদ-নাম পরিবর্তন করে উপ-সহকারী সচিব করতে হবে। তৃতীয় শ্রেণির পদ পরিবর্তন করে অতিরিক্ত উপ-সহকারী সচিব এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পদ-নাম সাচিবি সহকারী করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গঠিন অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন কমিটি বাতিল করতে হবে। বাংলাদেশ সচিবালয়ে কর্মরত সব কর্মচারীকে রেশনিং সুবিধা দিতে হবে। সচিবালয় ভাতা চালু করতে হবে। কর্মচারীদের জন্য ৩০ শতাংশ মহার্ঘভাতা চালু করতে হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের অপর অংশের নেতা বাদিউল কবির স্বাক্ষরিত বিবৃতি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। আমরা সাবেক সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বে যে আন্দোলন চলছে সর্বাত্মকভাবে সমর্থন করি। পতিত ফ্যাসিস্টের সব কার্যক্রম স্থগিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন সমর্থন করি এবং সাধুবাদ জানাই। একাত্তরের বেইমান দোসরদের পুনর্বাসনের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কার্যকরী সভাপতি মো. আব্দুল খালেকের সঙ্গে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য ফোরামের অপর অংশের সভাপতি মো. বাদিউল কবিরের কথাকাটি হয়েছে বলে জানান একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এ বিষয়ে আব্দুল খালেক যুগান্তরকে বলেন, বাদিউল কবির কর্মচারী শুলভ আচরণ করেননি। তিনি জামায়াতপন্থি কিছু কর্মচারী ও আওয়ামীপন্থি কর্মচারীদের নিয়ে চলাফেরা করেন। তার বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।
বাদিউল কবির যুগান্তরকে বলেন, আমরা কিছু দাবি নিয়ে জনপ্রশাসন সচিবের দপ্তরে গিয়ে দেখি সচিব অফিসে নেই। পরে এপিডি স্যারের দপ্তরে গিয়ে দেখি তিনি অবরুদ্ধ। আমরা কেন সেখানে গেলাম- তা নিয়ে স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে, কথা কাটাকাটির কোনো ঘটনা ঘটেনি।