৬ বছরেও শেষ হয়নি ড্রেন নির্মাণের কাজ

নির্মাণকাজ শুরু হবার পর থেকে ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও ড্রেন কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে মহাসড়কের দুই পাশে থাকা শত শত ব্যবসায়ী ও পথচারিসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।

৬ বছরেও শেষ হয়নি ড্রেন নির্মাণের কাজ

প্রথম নিউজ, রাজবাড়ী: রাজবাড়ী জেলা শহরের পৌরসভা এলাকার মধ্যে মহাসড়কের দুই পাশে ড্রেনের নির্মাণ কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ পড়ে আছে। নির্মাণকাজ শুরু হবার পর থেকে ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও ড্রেন কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে মহাসড়কের দুই পাশে থাকা শত শত ব্যবসায়ী ও পথচারিসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।

রাজবাড়ি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জন গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততা উন্নীতকরণ প্রকল্পের (গোপালগঞ্জ অঞ্চল) আওতায় রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। সড়কের তিনটি অংশে ভিন্ন ভিন্নভাবে দরপত্র আহ্বান করা হয়। তিন অংশের মোট চুক্তিমূল্য প্রায় ৩০২ কোটি ২৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে রাজবাড়ী শহরের শ্রীপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে চরলক্ষ্মীপুর আহমদ আলী মৃধা কলেজ এলাকা পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার রাস্তা চার লেনে উন্নীত করার কথা। এই কাজের দায়িত্ব পায় স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ও ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন। ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৬ জুন কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল।

জানা যায়, এ প্রকল্পের আওতায় সড়কের উত্তরে চার কিলোমিটার ও দক্ষিণে পৌনে ৫ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণকাজের যৌথভাবে দায়িত্ব পায় স্পেকটা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ও ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড শিপিং ও রানা বিল্ডার্স। সড়কসহ পুরো কাজের ব্যয় ধরা হয় ৬০ কোটি ২০ লাখ টাকা। তবে কাজের মেয়াদ ৫ বার বাড়ানোর পর রাস্তার কাজ সম্পন্ন হলেও ড্রেনের কাজ বাকি রয়েছে ৭০ শতাংশ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মূল টাকার ৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার বিল ইতোমধ্যে তুলে নিয়েছেন। যা প্রকল্প ব্যয়ের ৭৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজবাড়ী জেলা শহরের রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের শ্রিপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে আহম্মেদ আলী মৃধা কলেজ পর্যন্ত রাস্তার মূল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রাস্তার মাঝখানে সড়ক বিভাজকও বসানো হয়েছে। বৃষ্টিতে ও ড্রেনের কাজের জন্য মাটি খোড়ার ফলে মহাসড়কের উভয়পাশে কিছু কিছু স্থানে কার্পেটিং ভেঙে গর্ত হয়ে গেছে।

এছাড়া শ্রিপুর বাস টার্মিনাল থেকে কামনা বিল্ডিং পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশের ড্রেনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু শহরের ফায়ার সার্ভিস এলাকা থেকে আহম্মদ আলী মৃধা কলেজ পর্যন্ত ড্রেনের কাজ বন্ধ রয়েছে প্রায় দেড় বছর। মাঝেমধ্যে কিছু স্থানে ড্রেনের কাজ হলেও দেওয়া হয়নি ঢাকনা বা স্ল্যাব, বের হয়ে আছে রড। আবার অনেক অংশে এখনো মাটি খোঁড়াই হয়নি। ড্রেনের স্ল্যাব বা ঢাকনা বসানো না হওয়ায় বেশিরভাগ অংশেই ময়লা-আবর্জনা দিয়ে ড্রেন ভরে গেছে। কোথাও কোথাও বৃষ্টিতে পানি জমে গেছে।
এতে পথচারী, ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ড্রেনের ওপর অস্থায়ীভাবে বাঁশ, কাঠ দিয়ে মাচা পেতে তারা চলাচল করছে। পুলিশ লাইন এলাকার রাইসা মটরসের মালিক মো. মিলন বলেন, আমার দোকানের সামনে ড্রেন করা হয়েছে, কিন্তু ড্রেনের স্ল্যাব বা ঢাকনা দেওয়া হয়নি। এভাবেই পড়ে রয়েছে বছর খানেক। বাধ্য হয়ে বাঁশ কাঠ দিয়ে মাচা পেতে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ভবানীপুর এলাকার বাসিন্দা সুইট বলেন, প্রায় দেড় বছর ধরে ড্রেনের কাজ বন্ধ রয়েছে। দুই সাইডে ঢালাইয়ের কাজ হলেও ওপরে ঢাকানা দেওয়া হয়নি। এতে আমাদের যাতায়াতের অনেক কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু বাচ্চা ও বয়স্কদের। তাই বাধ্য হয়ে নিজের টাকা খরচ করে বাঁশ,কাঠ দিয়ে মাচা পেতে অস্থায়ীভাবে যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছি।

রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী নওয়াজিস রহমান বিশ্বাস বলেন, ড্রেনের ৩০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৭০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৭৭.৫ শতাংশ অর্থ উত্তলন করে নিয়ে গেছে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। নতুন করে একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ সমাপ্ত করার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে, যা প্রক্রিয়াধীন।

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, বিষয়টি আমি অবগত। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। নতুন করে কাজের জন্য চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। পরে কাজের সঠিক তদারকি করা হবে। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের রাজবাড়ীর এক প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা যতটুকু কাজ করেছি ততটুকুর অর্থ উত্তোলন করেছি। তাছাড়া নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে গেছে। তাই আপাতত কাজ বন্ধ রয়েছে।