সরকার নিজেই সংবিধান লঙ্ঘন করেছে

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি সাক্ষাৎকারে মানবজমিনকে এ কথা বলেছেন। জোনায়েদ সাকি গণতন্ত্র মঞ্চেরও অন্যতম নেতা।

সরকার নিজেই সংবিধান লঙ্ঘন করেছে

প্রথম নিউজ, অনলাইন: সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। তারা নিজেরাই ৯৫-৯৬ সালে সংবিধান মানেনি। এখন সংবিধানের দোহাই দিচ্ছেন। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি সাক্ষাৎকারে মানবজমিনকে এ কথা বলেছেন। জোনায়েদ সাকি গণতন্ত্র মঞ্চেরও অন্যতম নেতা। মানবজমিন-এর সঙ্গে আলোচনায় এক দফার আন্দোলন, নির্দলীয় সরকার, সংবিধানসহ নানা প্রসঙ্গে তার মতামত তুলে ধরেন।

মানবজমিন: দেশের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো সরকার-বিরোধী আন্দোলন করছে, এর ভবিষ্যৎ কি?  
জোনায়েদ সাকি: সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলছে। কারণ এই সরকার জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে ক্ষমতায় নেই। তারা জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে। এজন্য দমন-পীড়ন, গুম ও খুন থেকে শুরু করে নানাভাবে দেশকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়ার কাজগুলো সরকার করছে। সুতরাং বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকলে ভোট, নাগরিক অধিকার এবং মানুষের 
বেঁচে থাকার অধিকার হুমকির মুখে পড়বে।

এই অবস্থা থেকে ফেরাতে শাসন ক্ষমতায় জবাবদিহিতা, মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা দরকার। এর মধ্যদিয়েই দেশের মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরবে। আর এই লড়াইয়ের জন্য জনগণ এখন উন্মুখ। তাই এই লড়াইকে রাজপথে আরও ব্যাপক সংগঠিত করা, আর গণজাগরণ এবং গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করাই এই আন্দোলনের লক্ষ্য। আর বর্তমান সরকার যদি এভাবে জবরদস্তি কায়দায় ক্ষমতা চালিয়ে যেতে পারে তাহলে দেশে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ধ্বংস হবে, সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে এবং নানা ধরনের উগ্রবাদের জমিন প্রস্তুত হবে।

মানবজমিন: সরকার পতনে বিএনপির একদফা আন্দোলন নিয়ে আপনাদের ভাবনা কি?  
জোনায়েদ সাকি: আসলে বিদ্যমান ক্ষমতা কাঠামো সংস্কার করে সাংবিধানিকভাবে যে ক্ষমতা কাঠামো আছে তার সংস্কার করে রাষ্ট্রটাকে একটা গণতান্ত্রিক করা। এজন্য আমরা একটা যৌথ ঘোষণাপত্র তৈরি করার চেষ্টা করছি। কিছু বিষয়ে এখনো মতপার্থক্য আছে। সেই মতপার্থক্য দূর করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। তবে যতটুকু ন্যূনতম ঐক্যমত হবে তার ভিত্তিতেই আমরা এই যৌথ লক্ষ্য তৈরি করবো। এই যৌথ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা একদফা আন্দোলনে যাচ্ছি। যেটার মধ্যে সরকারের পদত্যাগ, একটা অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন, রাজবন্দিদের মুক্তি এবং সংবিধান সংস্কার করে ক্ষমতার কাঠামো বদল। এটাকে সামনে রেখে এই একদফা আন্দোলন ঘোষণা আকারে আমরা আনার চেষ্টা করছি। 
এই একদফা আন্দোলনের প্রক্রিয়ার মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ আছে। আরও অন্যান্য রাজনৈতিক দল যার যার অবস্থান থেকে আন্দোলনে আছে। সকলের লক্ষ্য হলো ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। 

মানবজমিন: কবে নাগাদ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে? 
জোনায়েদ সাকি: এই সপ্তাহে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে আলোচনা হবে। এই আলোচনায় একদফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার তারিখ আমরা নির্ধারণ করবো।

মানবজমিন: এই আন্দোলনের সঙ্গে কি জামায়াত থাকবে?
জোনায়েদ সাকি: দেখুন আমরা শুরু থেকেই বলেছি, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ১৮ কোটি মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করে দিয়েছে। সুতরাং ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা তো বিশেষ কোনো দলের দাবি না। এটা সকল নাগরিকের দাবি। তাই যারা ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে- তারা কিন্তু প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে লড়াই করছেন। আর আমরা বিশ্বাস করি সবাই যার যার অবস্থান থেকে এই লড়াইয়ে যুক্ত হবেন। 

মানবজমিন: বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বলছে, এই কর্মসূচিতে কি সরকারকে সরানো সম্ভব?
জোনায়েদ সাকি: আমাদের আন্দোলন হচ্ছে জনগণের দাবি। আর জনগণের সম্পৃক্ততার মধ্যদিয়ে এই আন্দোলন একটা গণজাগরণে রূপ নেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। যতবেশি জনগণকে সম্পৃক্ত করে গণজাগরণ ঘটানো যায়, এর জন্য যে পথগুলো আছে- সেই পথেই আমরা হাঁটবো। আর গণতান্ত্রিক রীতি-নীতিতে যে কর্মসূচিগুলো স্বীকৃত সেই কর্মসূচিগুলোর মধ্যে জনগণকে সম্পৃক্ত করে গণজাগরণের পথে আমরা হাঁটবো। কিন্তু সেটাকে সহিংসতার রূপ দেয়ার জন্য সরকার নানা কাজ করে যাচ্ছে। 

মানবজমিন: সংবিধানে থেকেই কি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব?
জোনায়েদ সাকি: সংবিধানের কথা যদি বলেন, বর্তমান সরকার তো নিজেই সংবিধান অনুযায়ী শাসন করছে না। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে বদলে পঞ্চদশ সংশোধনী করেছেন। আর সেই পঞ্চদশ সংশোধনীও সংবিধান অনুসারে গণভোটের মাধ্যমে করা দরকার। সেই গণভোটও করেন নাই। তাই তারা একদিকে রায় বিকৃত করেছেন অন্যদিকে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। সুতরাং সংবিধানে তো তারাই নেই। আর সংবিধানে দোহাই তুলে যে বলছেন, নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হতে হবে, এটা একটা খোঁড়া যুক্তি। আর এই যুক্তি তারা নিজেরাই ৯৫-৯৬ সালে মানে নাই।  

মানবজমিন: নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখার কার্যক্রম কতোদূর, এ বিষয় নিয়ে বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের মতপার্থক্য রয়েছে?
জোনায়েদ সাকি: এ বিষয়ে কিছু মতপার্থক্য আছে, ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র কাঠামোর যে সংস্কার করা হবে সেটার কিছু কিছু প্রশ্নে এখনো মতপার্থক্য আছে। তবে সেটা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় একটা জায়গায় পৌঁছাবে বলে আমরা মনে করি। 

মানবজমিন: কোন বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে?
জোনায়েদ সাকি: ৭০ অনুচ্ছেদ থেকে শুরু করে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার প্রবর্তনসহ কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য আছে। 

মানবজমিন: সরকার দাবি না মানলে এবং আন্দোলন সফল না হলে শেষ পর্যন্ত কি আপনারা নির্বাচনে যাবেন?
জোনায়েদ সাকি: আন্দোলনে পরাজয়ের কোনো স্থান নেই। জনগণের সঙ্গে আমরা থাকবো এবং বিজয় না হওয়ার পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবো। 

মানবজমিন: বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে কেউ বাধা দিলে তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
জোনায়েদ সাকি: আজকে যারা ভোট ছাড়া জোর করে ক্ষমতায় বসে আছেন তারা দেশের স্বার্থে পররাষ্ট্রনীতি তৈরি না করে নিজস্ব গদি রক্ষার স্বার্থে পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করেছে ফলে আজকে বাংলাদেশ সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। এতে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশকে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে নানা ধরনের নীতি গ্রহণ করতে দেখছি। আর আন্তর্জাতিক বিশ্বে যখন বাংলাদেশ মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ভোটাধিকার লঙ্ঘনের দেশ হিসেবে তৈরি হয় সেটা আমাদের জন্য মর্যাদার কথা না। সুতরাং দেশকে মর্যাদার জায়গায় নিয়ে যেতে ভোটাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা জায়গায় পৌঁছাতে হবে। এর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের মর্যাদাকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।