সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ২৭ জুলাই ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ২৭ জুলাই ঢাকায়  বিএনপির মহাসমাবেশ

প্রথম নিউজ, ঢাকা: সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আগামী ২৭ শে জুলাই বৃহস্পতিবার ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তিসহ যুগপৎভাবে এক দফা দাবিতে পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে আগামী ২৭ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালিত হবে বলে ঘোষণা দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এর আগে দুপুর দুইটায় কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে তারুণ্যের সমাবেশ শুরু হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই ঢাকার এই তারুণ্য সমাবেশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশেপাশের এলাকার লোকারণ্য হয়ে যায়। যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে ও যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক মো. আবদুস সালাম, ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ফরিদপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, বিগত আন্দোলনে গুম খুনের শিকার নেতাদের পরিবারের সদস্য, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দীর্ঘদিন জেল খাটা ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, বক্তব্য রাখেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার আবারও নীল নকশার নির্বাচন করতে চাচ্ছে। তাই তারা পছন্দের ডিসি- এসপিদের নিয়োগ দিচ্ছে। কিন্তু বারে বারে ঘু-ঘু তুমি খেয়ে যাও ধান। এবার সেটা হবে না। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। শুধু আমরা না জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দল যারা সরকারে আছে তারাও বলছে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না।

 বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা একটা পরিবর্তনের জন্য তরুণদেরকে জাগ্রত করছি। আজকের আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পর রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকাকালে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল। আজো তারা আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে। আমি সেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানাই যিনি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে আজীবন লড়াই সংগ্রাম করে চলেছেন। আজো তিনি কারাগারে বন্দী। তার আপোসহীন নেতৃত্বে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন ঘটানো হয়েছিলো। দেশ যখনই সংকটে পড়ে তখনই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এগিয়ে আসেন। আজকে তারেক রহমান দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পতাকা তুলে ধরেছেন। তিনি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, তারুণ্যের সমাবেশের মাধ্যমে আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। একাত্তরে যেভাবে তরুণ যুবক সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। আজো তারা ঐক্যবদ্ধভাবে জেগে উঠেছে। বর্তমান সরকার বৈধ নয়। তারা সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় বসে আছে। আর বড় বড় কথা বলে যে, তারা ক্ষমতায় আসলেই নাকি উন্নয়ন হয়। ২০১৪ সালে বিনাভোটে এমপি ঘোষণা করেছে। তাহলে তারা কী বৈধ? এই আওয়ামী লীগ বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন বব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনের ব্যবস্থা বহাল রেখেছে। কারণ তারা জানে নিরপেক্ষ নির্বাচনে জয়ী হতে পারবেনা। ১০ টি আসনও পাবেনা।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার অলিখিত একদলীয় শাসন বাকশাল চালু করেছে। তারা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র বিরোধী। তারা মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। মাথায় হিজাব বেধে আর হাতে তসবিহ নিয়ে বলেছিল ১০ টাকা সের চাল খাওয়াবেন, ঘরে ঘরে চাকরি দিবেন এবং কৃষকদের বিনামূল্যে সার দিবেন। আজকে ঘরে ঘরে চাকরি নেই। টাকা ছাড়া চাকরি হয় না। বিসিএস পাস করলেও ভিন্নমতের কারণে চাকরি হয় না। তিনি বলেন, এই সরকার কুত্তা মার্কা নির্বাচন করে। সর্বশেষ ঢাকা-১৭ আসনে নতুন মডেলের নির্বাচন দেখলাম। হিরো আলম বড় আশা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। আওয়ামী লীগ কাউকে সহ্য করতে পারে না। ওরা দেশকে নিজেদের তালুকদারী মনে করে। অথচ দেশের সমস্ত মানুষ মিলে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলেন। এই সরকার বিদ্যুত খাতে ১৪ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। শুধু টাকা পাচারে ব্যস্ত। এদিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আর সময় নেই। এখন আমাদের অধিকার আদায় করার সময়। আমরা নির্বাচন চাই তবে সেটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। তোমাদের অধীনে নয়। কিন্তু বিএনপি যাতে নির্বাচনে যেতে না পারে তারা মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২৪ টি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৮৬ টি মামলা। অনেকের বিরুদ্ধে সাড়ে তিনশো পর্যন্ত মামলা আছে। এখন আবারো গায়েবি মামলা দিচ্ছে। সাত মাসে ৫০ টি গায়েবি মামলা দিয়েছে। এগুলো কিসের আলামত? ওদিকে বিদেশীদের বলছে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন। অথচ সিনিয়র নেতারা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে তাদের মামলাগুলো দ্রুত শেষ করতে যাচ্ছে। এটাকে তারা নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়। তারা এখনো নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। র্যাবের স্যাংশনের পরও তারা এসব কাজ করছে। তারা নির্বাচনে ভোট কাটতে নিজেদের মতো প্রশাসন সাজাচ্ছে। আসলে ভয় পেয়ে এসব করছে। তবে কোনোভাবেই দেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচন হবেনা। এবার সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান। এবার সেটি হবে না। জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, কমিউনিস্ট পার্টি সবাই বলেছে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। অতএব অবিলম্বে পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করে দাসানুদাস নির্বাচন কমিশন বাতিল করে নতুন কমিশন গঠন করুন।

তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচিতে লক্ষ্মীপুরে, দিনাজপুরে, নোয়াখালীতে কাপুরুষোচিত হামলা ও আক্রমণ করেছে। কারণ তারা নির্বাচনে ভয় পায়।  এসময় বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, রফিকুল আলম মজনু, সাইফুল ইসলাম নিরব, শেখ রবিউল আলম রবি, আব্দুল মোনায়েম মুন্না, ইউসুফ বিন জলিল কালু, এসএম জাহাঙ্গীর, মিয়া নূরুদ্দিন অপু, গোলাম মাওলা শাহীন, জয়নাল হোসেনসহ কারাবন্দী সকল নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করেন মির্জা ফখরুল।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, অনির্বাচিত ও ভোট চোর খুনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। এবার ভোট চোরের ক্ষমা নেই। তরুণরা তাদেরকে টেনে হিচড়ে ক্ষমতা থেকে নামাবে। ইতিমধ্যেই হাসিনরা পতনের আন্দোলন শুরু হয়েছে। এবার ফয়সালা হবে রাজপথে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক মো. আবদুস সালাম বলেন, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়। দেশনায়ক তারেক রহমানের আরেকটা যুদ্ধ দরকার। আমি একাত্তরের যুদ্ধে শহীদ হতে পারিনি। এবার শহীদ হতে চাই। আসুন তরুণ প্রজন্মের বন্ধুরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি।

সভাপতির বক্তব্যে যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, আমরা পাঁচটি সমাবেশ করে আজ ঢাকায় শেষ সমাবেশ করলাম। এই সরকারের আমলে চার কোটি ৭০ লাখ তরুণ ভোটার ভোট দিতে পারেনি। তারা আজকে জেগে উঠেছে। এই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা কুত্তা মার্কা নির্বাচন করে। তারা ঢাকা-১৭ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হিরো আলমকেও পিটিয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অবৈধ এবং ক্ষমতায় থাকার তাদের কোনো অধিকার নেই। এই সরকারের আমলে কেউ ভোট দিতে পারেনি। শেখ হাসিনা ভোট চোর। আমরা ক্ষমতার জন্য নয় ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তরুণদেরকে উদ্বুদ্ধ ও লড়াই করছি। সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন না হওয়া ও সরকারের পতন না হওয়া এবং ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘরে ফিরবো না মর্মে উপস্থিত সব নেতাকর্মীকে শপথবাক্য পাঠ করিয়ে টুকু বলেন, আমরা অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবোনা। এসময় বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল কারাবন্দী নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করেন তিনি।

সমাবেশ শুরুর আগেই জাসাসের শিল্পীবৃন্দ মঞ্চে গান পরিবেশনের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে তোলেন। সমাবেশকে ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশে বিশেষ করে শাহবাগ, রমনা পার্ক, মৎস্য ভবন, কাকরাইল মোড়, শিল্পকলা একাডেমির চারপাশ, প্রেসক্লাব-হাইকোর্ট মোড়, সেগুনবাগিচাসহ আশেপাশে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। যানবাহন চলাচলে ধীরগতি লক্ষ করা গেছে। এদিকে সমাবেশ ঘিরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সতর্ক অবস্থানে ছিলেন পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।