Ad0111

নির্বাচনী সহিংসতা: চুয়াডাঙ্গায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ

উভয় পক্ষের হামলায় আহত ৯

নির্বাচনী সহিংসতা: চুয়াডাঙ্গায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ

প্রথম নিউজ, চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নৌকা ও আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। উভয় পক্ষের কয়েকটি অফিস, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তসলিম উদ্দিন নামে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর এক কর্মীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আহত হয়েছেন উভয়পক্ষের মোট ৯ জন।

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শুকুর আলীর তিনটি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান টিপুর দুটি নির্বাচনী অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক সমর্থকের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত তিতুদহ বাজার ও গ্রীসনগর বাজার এলাকায় দফায় দফায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে দর্শনা থানা তিতুদহ ক্যাম্প পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর আহত পাঁচ কর্মী হলেন- তিতুদহ গ্রামের মাঝেরপাড়ার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে হাসান আলী (১৮), দক্ষিণপাড়ার মৃত রহিম বিশ্বাসের ছেলে মানিক (৩৫), বড়শলুয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে ওমর ফারুক (৩২) এবং তিতুদহ গ্রামের মাঝেরপাড়ার বজলুর রহমানের দুই ছেলে শাহিন (২৬) ও রাইহান (৩০)। তাদেরকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর আহত চার কর্মী হলেন-  তিতুদহ ইউনিয়নের নুরুল্লাহপুর গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে বিদ্যুৎ মিস্ত্রী তসলিম উদ্দিন (২২), একই গ্রামের আজিজুলের ছেলে মিঠু (২২), ফকির মোহাম্মদের ছেলে আব্দুল লতিফ (৩৫) ও আব্দুল খালেকের ছেলে মাহবুব রহমান রিপন (৫০)। এর মধ্যে তসলিমের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। বাকি তিনজন স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নিজেই।

আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শুকুর আলী  বলেন, শুক্রবার রাতে আমিসহ আমার কর্মীরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছিলাম। এ সময় আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ তার কর্মীরা আমাদের পিছু নেয়। পরে তিতুদহ বাজার, দক্ষিণপাড়া ও গ্রীসনগর গ্রামের বাজারপাড়ায় আমার তিনটি নির্বাচনী অফিসে ভাঙচুর ও আগ্নিসংযোগ চালায় তারা। এ সময় প্রতিবাদ করলে আমার পাঁচজন কর্মীকে লাঠিসোটা ও ইট দিয়ে মারধর করে। পরে আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমার কর্মীরা তাদের (আনারস প্রতীকের) কোনো কর্মীকে মারধর ও নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করেনি। আমার কর্মীদের ধাওয়া করতে গিয়ে আনারস প্রতীকের এক কর্মীর পেটে বাঁশ ঢুকে গেছে। তারা নিজেরাই তাদের অফিস ভাঙচুর করে আমার কর্মীদেরকে দোষারোপ করছে।

আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান টিপু বলেন, আমার কোনো কর্মী শোডাউন করেনি। তারা ২০টি মোটরসাইকেল ও চারটি মাইক্রোবাস নিয়ে এমনিতেই ঘোরাঘুরি করে ফিরে আসছিল। এ সময় সরোজগঞ্জ এলাকার পার হলে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মীরা আমার কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। ভাঙচুর করা হয় একটি মোটরসাইকেল ও দুটি মাইক্রোবাস। এ সময় আমার একজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে এবং তিনজনকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে তারা। এর কিছুক্ষণ পর আমার তিতুদহ দক্ষিণপাড়ার ও গ্রীসনগর বাজারপাড়াসহ মোট দুটি নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করে। তিনি আরও বলেন, নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শুকুর আলীর নেতৃত্বে আমার অফিস, মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাস ভাঙচুর এবং কর্মীদের উপর হামলা করা হয়। আমার কোনো কর্মী তাদের অফিস ভাঙচুর ও মারধর করেনি। তারা নিজেরাই ভেঙেছে এবং মারামারি করে আমার উপর দোষ চাপাচ্ছে। 

এদিকে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে ইউনিয়নজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তিতুদহ ক্যাম্প পুলিশের পাশাপাশি দর্শনা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। বর্তমানে পুরো ইউনিয়নজুড়ে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রতিটি এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।  চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আহসানুল হক বলেন, তসলিম উদ্দিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার পেটে ধারালো কোনো অস্ত্র দিয়ে মারা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভর্তি করে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বাকিদের অবস্থা শঙ্কামুক্ত। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

দর্শনা থানার ওসি এএইচএম লুৎফুল কবীর বলেন, প্রথমে গ্রীসনগর বাজারে নৌকার কর্মীরা আনারস প্রার্থীর অফিস ভাঙচুর করে এবং তাদের এক কর্মীকে ছুরিকাঘাত করে বলে অভিযোগ পেয়েছি। এই সংবাদ শুনে তিতুদহ বাজারে অবস্থানরত আনারস প্রতীকের কর্মীরা সেখানের নৌকার অফিস ভাঙচুর করে এবং তাদের এক কর্মীকে মারধর করে বলে জেনেছি। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি তিতুদহ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, মেম্বর পদে ৪১ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পদে ১০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। 

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news