সমুদ্র ভ্রমণ থেকে শোকের সাগরে
ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা উপজেলার সলিলদিয়ায় ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনার শিকার এই পরিবারটি।
প্রথম নিউজ, ফরিদপুর: বার্ষিক পরীক্ষা শেষে মেয়েদের সমুদ্র সৈকতে আনন্দ ভ্রমণের আব্দার রক্ষাই যেন কাল হলো জুয়েলের পরিবারের। নিভে গেল প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর জীবনপ্রদীপ। চিরতরে হারাতে হলো আদরের ছোট মেয়েকেও। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে জুয়েলও এখন হাসপাতালে। এ দুর্ঘটনায় পুরো পরিবার যেন শোকের সাগরে ভাসছে। শোকে স্তব্ধ গোটা গ্রাম।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা উপজেলার সলিলদিয়ায় ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনার শিকার এই পরিবারটি। এক্সপ্রেসওয়েতে বিকল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি চিনিবাহী ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা
লেগে প্রাইভেটকারটির সাতজন আরোহী হতাহত হন। এদের মধ্যে মা ও মেয়ে ছাড়াও মারা যান ওই পরিবারের আরেকজন।
পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরের (বঙ্গবন্ধু স্কয়ার) রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ের পাশের কবিরপুরের বাসিন্দা শেখ আব্দুল ওহাবের ছেলে শেখ জুয়েলের সঙ্গে বিয়ে হয় ভাঙ্গা উপজেলার আতাদি গ্রামের বেলাল মোল্যার মেয়ে লাবনী আক্তারের। তাদের পরিবারে তিন মেয়ে। এদের মধ্যে বড় মেয়ে তানহা (১৪) স্থানীয় রহমানিয়া মাদরাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে আর মেজ মেয়ে তাওহিদা (৭) চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট মেয়ে জয়নূর জারার বয়স মাত্র তিন বছর। বিয়ের পর থেকে জুয়েল শেখ শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন পরিবারে নিয়ে। পেশায় তিনি একজন ম্যাকানিক। একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন।
জুয়েল শেখের শ্বশুর বেলাল মোল্লা জানান, তার দুই নাতনি বাবার কাছে আব্দার করেছিল বার্ষিক পরীক্ষা শেষে কক্সবাজারে যাওয়ার। মেয়েদের আব্দার রক্ষার জন্য ২৫ ডিসেম্বর স্ত্রী ও তিন মেয়ের সঙ্গে স্ত্রীর বড় ভাই শামছুল হক মোল্যার দুই মেয়েকে নিয়ে কক্সবাজারে যান। এরপর পারিবারিক এই আনন্দ ভ্রমণ শেষে বৃহস্পতিবার সকালে তারা পদ্মা সেতু পার হয়ে ভাঙ্গা উপজেলায় বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছান। প্রাইভেটকারটি চালাচ্ছিলেন জুয়েল শেখ নিজেই। বেলাল মোল্লা অভিযোগ করেন, সড়কের ওপর ট্রাকটি এভাবে দাঁড়িয়ে না থাকলে এই দুর্ঘটনা ঘটতো না।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের সলিলদিয়ায় চিনিবাহী একটি ট্রাক (কুষ্টিয়া-ট-১১-০১৬০) বিকল হয়ে এক্সপ্রেসওয়ের ওপরই দাঁড়িয়ে ছিল। এসময় ঘন কুয়াশার মধ্যে পেছন থেকে প্রাইভেটকারটি ওই ট্রাকে ধাক্কা দিলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে জুয়েলের স্ত্রী লাবনী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহতাবস্থায় অন্যদের হাসপাতালে পাঠানো হলে তার ছোট মেয়ে জয়নূর জারা (৩) ও ভাইয়ের মেয়ে সুমাইয়া(২০) নিহত হন। আহত হন জুয়েল শেখ (৩৫), তানহা (১৪), তন্না (১৩) ও তাওহিদা (৭)। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সুমন মাতুব্বর জাগো নিউজকে বলেন, সকালে এই খবর পেয়ে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোকাহত পরিবারটিকে সমবেদনা জানানোর ভাষাও পাচ্ছি না। তিনি জানান, মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পাওয়ার পর একত্রে দাফন করা হবে।
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আহতদের মধ্যে জুয়েলের একটি হাত ভেঙে গেছে। তবে তানহা, তন্না ও তাওহিদার অবস্থা গুরুতর। তাদের নাক মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ওই অংশ মাদারিপুরের শিবচর হাইওয়ে থানার অংশ। এ ব্যাপার শিবচর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু নাঈম মো. মোফাজ্জল হক বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা বিকল ট্রাকের সঙ্গে প্রাইভেটকারের ধাক্কা লেগে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের হাসপাতালে পাঠায়। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকের চালক ও হেলপার পালিয়ে গিয়েছে। তিনি জানান, চিনিবোঝাই ট্রাকের পেছনে প্রাইভেটকারটি সজোরে ধাক্কা লেগে দুমড়ে মুচড়ে যায়। হতাহতদের মধ্যে একজন ঘটনাস্থলেই এবং অন্যরা হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews