‘সন্তানের ক্ষতি হলে সরকার তো দায় নেবে না, স্কুলও দেখবে না’

আজ রোববার (৫ নভেম্বর) সকাল ১০টায় ছেলেকে স্কুলে ঢোকাতে প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে এভাবেই অবরোধে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সন্তানকে নিয়ে স্কুলে আসার অভিজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন নাসরিন সুলতানা।

‘সন্তানের ক্ষতি হলে সরকার তো দায় নেবে না, স্কুলও দেখবে না’

প্রথম নিউজ, ঢাকা: ছেলেকে নিয়ে নতুনবাজার থেকে বাসে করে স্কুলে এলাম। রামপুরা এলেই বাসের হেলপার জানালা বন্ধ করে দিয়ে বললো, আপা, অবরোধ চলছে। হঠাৎ কেউ এসে আগুন দিতে পারে। এ কথা শুনে ছেলেটা ভয়ে আমার কোলের ভেতর মাথা দিয়ে দিলো। পুরোটা পথ এভাবেই আসছি। এগুলো-তো কেউ দেখবে না। আমার সন্তানের ক্ষতি হলে আমারই যাবে। সরকারও দায় নেবে না, স্কুলের লোকজনও দেখবে না। কথাগুলো বলছিলেন মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক নাসরিন সুলতানা। তার একমাত্র ছেলে শোয়াইব হোসেন আইডিয়াল স্কুলের বনশ্রী শাখার ইংরেজি ভার্সনের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র।

আজ রোববার (৫ নভেম্বর) সকাল ১০টায় ছেলেকে স্কুলে ঢোকাতে প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে এভাবেই অবরোধে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সন্তানকে নিয়ে স্কুলে আসার অভিজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন নাসরিন সুলতানা।

তার পাশেই সন্তানকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সিরাজুম মুনিরা। তার মেয়ে আইডিয়াল স্কুলের ইংরেজি ভার্সনের দিবা শাখায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। সিরাজুম মুনিরা জাগো নিউজকে বলেন, এমন একটা সময়, বাচ্চাকে স্কুলে না আনলেও অনেক পিছিয়ে যাবে। রিভিশন চলছে। কেমন প্রশ্ন হবে সেটাও এখন স্কুলে না এলে বুঝতে পারবে না।

তিনি বলেন, আমরা ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা থেকে আসি। রাস্তাটা নির্জন। শুনেছি মাঝেমধ্যে হঠাৎ ওই এলাকায় অবরোধকারীরা বাসে ভাঙচুর চালায়। হঠাৎ কয়েকজন এসে ভাঙচুর চালিয়ে চলে যায়। পুলিশ-তো আর সব জায়গায় থাকে না। বাচ্চারা এগুলো দেখলে, শুনলেই ভীতিতে পড়ে যাবে। তখন আর স্কুলে আসতে চাইবে না।

এদিকে দ্বিতীয় দফায় বিএনপির অবরোধের প্রথমদিনে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। তৃতীয় শ্রেণির ঝ শাখায় মোট শিক্ষার্থী ৭০ জন। আজ (রোববার) ক্লাসে এসেছে মাত্র ২৬ জন। দ্বিতীয় শ্রেণির আরেকটি শাখায় ৭১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্লাসে এসেছে ২৯ জন। প্রভাতি শাখার অধিকাংশ শাখায় উপস্থিতি অর্ধেকের কম।

তবে ক্লাসে কম উপস্থিতি নিয়ে স্কুলটির কোনো শিক্ষক কথা বলতে রাজি হননি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আজ এখন পর্যন্ত কেমন উপস্থিতি, তার হিসাব আমি এখনো জানি না। আগে হিসাবটা দেখি। তারপর বলা যাবে। তবে ভিকারুননিসার প্রধান শাখা এবং বসুন্ধরা শাখায় খোঁজ নিয়ে ছাত্রীদের প্রায় স্বাভাবিক উপস্থিতির তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রামপুরা একরামুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়, সপ্তবর্ণ বিদ্যানিকেতনসহ ৮/১০টি স্কুলে খোঁজ নিয়ে ‘ভালো’ উপস্থিতির তথ্য জানা গেছে।

তবে অভিভাবকরা বলছেন তারা বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়েই সন্তানদের স্কুলে নিয়ে আসছেন। উলন রোডের সপ্তবর্ণ বিদ্যানিকেতনে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী আজিম হোসেনের মা রুকাইয়া পারভীন বলেন, আগের দফায় হরতাল-আবরোধে বাচ্চাকে স্কুলে আসতে দেইনি। এক সপ্তাহ স্কুল করেনি। এখন আবার অবরোধ। এভাবে কতদিন চলবে কে জানে! এজন্য আজ বাচ্চাকে স্কুলে আনলাম।

রামপুরা একরামুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আকরাম খান  বলেন, গত সপ্তাহে হরতাল-অবরোধে স্কুলে উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। এ সপ্তাহের শুরুতে আজ আবার অবরোধ। তবে আজকে আমাদের উপস্থিতি ভালো। ৮০/৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সব ক্লাসে উপস্থিত রয়েছে।

অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর অবরোধে কিন্ডারগার্টেনগুলোতে কোনো প্রভাব পড়েনি। সীমিত শিক্ষার্থী হওয়ায় উপস্থিতিও ভালো। কিন্ডারগার্টেন স্কুলে আনা-নেওয়ার জন্য অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া বাসার আশপাশের কিন্ডারগার্টেনে শিশুদের ভর্তি করে থাকেন অভিভাবকরা। ফলে বাসা থেকে কাছে হওয়ায় নিয়মিত সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন তারা।

বর্ণমালা আদর্শ বিদ্যাপিঠের প্রিন্সিপাল জোসনা রাণী মল্লিক  বলেন, আমাদের ছাত্র-ছাত্রী কম। প্রতি ক্লাসে আমরা নির্দিষ্ট সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করি। আশপাশে যারা থাকেন তারাই বেশি এখানে। ওদের আসা-যাওয়ায় কোনো সমস্যা হয় না।

তিনি বলেন, আজ আমাদের চতুর্থ শ্রেণিতে ১৬ জন শিক্ষার্থীর সবাই উপস্থিত। তৃতীয় শ্রেণিতে ৭ জনের মধ্যে ৬ জন এসেছে। আরেকজন অসুস্থ। এভাবে সব ক্লাসেই প্রায় শতভাগ উপস্থিতি রয়েছে। আবরোধ বলেন, আর হরতাল বলেন, আমাদের এখানে এগুলোর প্রভাব নেই।