সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকেরা
খাল পার হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের

প্রথম নিউজ, গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার মুশুরিয়া গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ওয়াপদার কাটাখালের ওপর একটি সেতুর অভাবে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহচ্ছেন স্কুল, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ ১০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। স্কুল-কলেজসহ দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হয় তাদের। আর এই খাল পার হওয়ার সময় প্রায় ঘটে ছোটবড় নৌকাডুবির ঘটনা। গত কয়েকবছর আগে খরস্রোতা এ খাল পার হতে গিয়ে নৌকা ডুবিতে মারা যায় দুই শিক্ষার্থী। এরপর থেকে সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকেরা। সবার ভোগান্তি লাঘব করতে খালের উপরে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
জানা গেছে, কোটালীপাড়া উপজেলার রামশীল ইউনিয়নের মুশুরিয়া গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে পয়সাটহাট-মোস্তাপুরের ওয়াপদার কাটাখাল। গ্রামটিকে দুইভাগে বিভক্ত করে রেখেছে এ খালটি। এ খাল পাড়ি দিয়ে মুশুরিয়া, চলবল, উত্তর চলবল, শৈলদাহ, নবগ্রাম, উত্তর রামশীলসহ ওই এলাকার অন্তঃত ১০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ যাতায়েত করে থাকেন। এ ছাড়াও খালের এক পাড়ে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় অন্যপাড়ের শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা পার হয়ে আসতে হয় পাঠশালায়। খালের দুই পাড়ে শত শত একর আবাদি জমি থেকে উৎপাদিত কৃষিপণ্য আনা নেওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় দু পাড়ের বাসিন্দাদের। এছাড়া এসব এলাকার অসুস্থ রোগী আনা-নেওয়ায় পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে।
বুধবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২০-৩০ জন করে ছোট একটি নৌকায় করে পার হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী সাধারণ মানুষ। তখনও পার হওয়ার অপেক্ষায় খালের পাড়ে দাঁড়িয়ে অর্ধশত মানুষ। খালে প্রচুর স্রোত হওয়ায় নৌকার মাঝির বৈঠা বাইতে কষ্ট হচ্ছে। এদিকে স্কুলে পাঠানোর জন্য নৌকায় একমাত্র ছেলে রবিন বিশ্বাসকে (৯) নৌকায় তুলে দিয়ে খালের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে মা সর্বিতা বিশ্বাস। শুধু সর্বিতা বিশ্বাসই নয় তার মত আরও অর্ধশত অভিভাবক তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর জন্য নৌকায় তুলে দিয়ে খালের অপর পাড়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকে।
সর্বিতা বিশ্বাস বলেন, সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে সবসময় আমরা দুশ্চিন্তায় থাকি। এই বুঝি কোনো খারাপ সংবাদ আসে। বর্ষাকালে আরও বেশি ভয়ে থাকি তখন পানি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্রোতও বেড়ে যায়। তখন প্রায় ছোট বড় নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। পূর্বপাড়ের এক কৃষক শুশান্ত মন্ডল (৫০) তার নিজের আবাদি জমিতে উৎপাদিত শাক নিয়ে যাবেন পশ্চিমপাড় বাজারে। পার হতে হবে খাল, তাইতো প্রথম খেয়ায় জায়গা না পেয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন পরবর্তী খেয়ার। এদিকে ঠিক সময়মতো বাজারে পৌঁছাতে না পারলে শাক ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারবেন না। এ নিয়েও সুশান্ত মন্ডল রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। এভাবেই একটি সেতু না থাকায় প্রতিনিয়ত দুপাড়ের ১০টি গ্রামের মানুষের পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা সুশান্ত মন্ডল বলেন, সারা বছর আমাদের এমন কষ্ট করে বাজারে যেতে হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হয়েও প্রায়দিন বাজার মিস করি। নৌকা পারাপারে যেদিন দেরি হয় সেদিন আর বাজার ধরতে পারি না। শেষে সেই শাক, সবজি নিয়ে আবার বাড়ি ফিরতে হয়। সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি এখানে একটা সেতু নির্মাণ করা হোক। এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বছরের পর বছর এভাবে কষ্ট করে স্কুল কলেজে যেতে হয়। প্রায় সময় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। আর তখন আমাদের বই খাতা কলম স্কুলব্যাগসহ সব স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। অনেকে শুধুমাত্র নৌকা পারাপারে দুর্ভোগের কারণে পড়ালেখাও ছেড়ে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটাই দাবি এই খালের উপর একটি সেতু নির্মাণ করে আমাদের এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিন। আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের এ খাল পার হওয়ার জন্য বিকল্প কোনো পথ নেই। আট কিলোমিটার দূরে একটি সেতু আছে আর ওই সেতু পার হয়ে স্কুলে গেলে কোনদিনও স্কুল ধরতে পারবো না।
এ বিষয়ে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, বিষয়টি আগেই জেনেছি। বিষয়টি জেনে ওই এলাকায় খোঁজখবর নিয়েছি। আসলেই ওই এলাকার মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছি। আশা করি দ্রুত সমাধান হবে ।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews