‘সুদে টাকা এনে স্বামীর ডেঙ্গু চিকিৎসা করাচ্ছি’
প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সামর্থ্য না থাকায় দুইদিন ঘোরাঘুরি করে ১০ সেপ্টেম্বর ভর্তি হন রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা রবিন। পেশায় রাজমিস্ত্রী। জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর গত ৮ সেপ্টেম্বর এলাকার একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা পরীক্ষা করে জানতে পারেন ডেঙ্গু আক্রান্ত। প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সামর্থ্য না থাকায় দুইদিন ঘোরাঘুরি করে ১০ সেপ্টেম্বর ভর্তি হন রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে।
রবিনের স্ত্রী ফারজানা আক্তার ডেঙ্গু আক্রান্ত স্বামী রবিনকে নিয়ে রীতিমতো একাই সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। সঙ্গে আছে ছোট্ট দুটি মেয়ে। একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামী আটদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় স্বামীর সেবা করে যাচ্ছেন একাই। ধার করা টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার পর এবার সুদে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে স্বামীর চিকিৎসা করাচ্ছেন তিনি।
পাশাপাশি রক্ত পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে আসা আবার দীর্ঘ লাইন ধরে পরদিন রিপোর্ট নেওয়াসহ যাবতীয় কাজ করে যাচ্ছেন ফারজানা আক্তার। সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে গিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী রবিন মিয়ার স্ত্রী ফারজানার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।
রবিনের স্ত্রী ফারজানা বলেন, গত এক সপ্তাহ থেকে খুব কষ্টে আছি। আমরা ছোট পরিবার। ছোট দুটি মেয়ে, ওদেরও দেখেশুনে রাখতে হয়। তার মাঝে গত রাত থেকে এক মেয়ের জ্বর। তার এখন কোনো আয় রোজগার নেই, তাই মহল্লা থেকে এক হাজারে সপ্তাহে একশ টাকা হারে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে এখন কোনো রকম চিকিৎসা চালাচ্ছি।
তিনি বলেন, একজন পুরুষ মানুষ থাকলে চিন্তা কম থাকে। রিপোর্ট আনতে গেলে গরমের মধ্যে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে জান বের হয়ে যায়। এই সময় বাচ্চাদের স্বামীর কাছে ওয়ার্ডে রেখে আসি। এর মাঝে খাবার ওষুধ আনতে যাই। বাচ্চা দুইটা মাঝে মাঝে না খেয়ে থাকে।
এ সময় মায়ের কোলে শুয়ে থাকা রবিন ফারজানা-দম্পতির সন্তান ৬ বছর বয়সী সামিয়া বলেন, বাবা সুস্থ হলে বাবাকে নিয়ে বাসায় চলে যাব। মাদরাসায় যাব।
রবিন বলেন, আমি কাজ করে যে টাকা পাই, তা দিয়ে সংসার চলে। এখন অসুস্থ হয়ে একদম অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার স্ত্রী একাই সব করছে। সে নিজেও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। সুস্থ হলে কাজ করে আগে সুদের ওপর নেওয়া টাকা শোধ করতে হবে। ওয়ার্ডের স্টাফ (নার্স) সায়মা জানান, তাদের দেখে যাচ্ছি গত কয়েকদিন থেকেই। প্রতিনিয়ত এ রকম রোগী আসছে, যাচ্ছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি সেবা দেওয়ার।